মধ্যবিত্তদের জন্য বিরাট স্বস্তির সম্ভাবনা! নতুন বছরে কীভাবে বাঁচাবেন আয়কর?
Income Tax Saving Tips: PPF, EPF, ELSS, NPS, SSY, SCSS, FDS- আয়কর আইনের ৮০সি ধারা অনুযায়ী এই সমস্ত জায়গায় বিনিয়োগ করলে আপনি কর ছাড় পেতে পারেন।
ভারত সরকারের আয়করের নিয়ম অনুযায়ী একজন করদাতাকে প্রত্যেক বছর নিজের আয়কর রিটার্ন ফাইল করতে হয়। এই রিটার্নে আপনাকে আপনার মোট আয়ের পরিমাণ এবং সেই আয় অনুযায়ী আপনাকে কত কর দিতে হবে সেই সমস্ত তথ্য নথিভুক্ত করতে হয়। আয়কর আইন ১৯৬১-এর ধারা অনুযায়ী সরকার কিছু ক্ষেত্রে করের ছাড় দিয়েছিল। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নাগরিকদের আরও বেশি মাত্রায় কর দিতে উৎসাহিত করা। তবে, আগামী বাজেটে হয়তো এই কর ব্যবস্থা কিছুটা হলেও পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী বাজেটে কর অব্যাহতির স্ল্যাব ৫ লক্ষ টাকা করে দিতে পারে ভারত সরকার। এর ফলে হয়তো মধ্যবিত্তদেরকে ট্যাক্স দিতে হবে না। তবে এর সঙ্গে সঙ্গেই যদি পুরনো কর ব্যবস্থা পাল্টে দিয়ে নতুন কর ব্যবস্থা আরোপ করা হয়, তবে এই কর দেওয়া এবং কর ছাড়ের ব্যাপারটা অনেকটা পাল্টে যাবে। এই পুরনো কর ব্যবস্থা এবং নতুন কর ব্যবস্থার মধ্যে কিছু তফাৎ রয়েছে। পুরনো কর ব্যবস্থায় করের পরিমাণ কিছুটা হলেও বেশি, তবে আপনারা অনেক বেশি কর ছাড়ের সুবিধা পান। কিন্তু নতুন কর ব্যবস্থায়, করের পরিমাণ কম হলেও, একই সঙ্গে ট্যাক্স ছাড়ের সুবিধাও খুব একটা বেশি নেই। বছর দুয়েক আগে ভারত সরকারের অর্থ দপ্তরের তরফ থেকে এই নতুন কর ব্যবস্থা নিয়ে আসা হয়েছিল, তবে মাত্র ১০ থেকে ১৫ জন বাদে, এই ব্যবস্থায় আর কেউ কর দিতে রাজি হননি। তাই বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এবার হয়তো পুরনো কর ব্যবস্থা পাল্টে একেবারে নতুন কর ব্যবস্থা জনগণের জন্য হাজির করবে ভারত সরকার। সেখানে কতটা কীরকম কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যাবে সেই নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে কিছু ব্যবস্থা রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি কর ছাড় পেলেও পেতে পারেন। সেরকমই কিছু ব্যবস্থার ব্যাপারে জানা যাক।
আরও পড়ুন- আর আয়কর দিতে হবে না মধ্যবিত্তকে? ৯ বছর পর ব্যাপক বদলের দিকে মোদি সরকার
১. কর সঞ্চয়কারী প্রকল্প
ভারত সরকার বেশ কিছু কর সঞ্চয়কারী প্রকল্প চালায়। সেই সমস্ত সঞ্চয়কারী উপাদানের উপরে কর দিন। এরকম কয়েকটি কর সঞ্চয়কারী উপাদানের মধ্যে রয়েছে - PPF, EPF, ELSS, NPS, SSY, SCSS, FDS। আয়কর আইনের ৮০সি ধারা অনুযায়ী এই সমস্ত জায়গায় বিনিয়োগ করলে আপনি কর ছাড় পেতে পারেন। যদি ভারত সরকার ভবিষ্যতেও এই ৮০সি ধারাটি কার্যকর রাখে তাহলে এই নিয়মে আপনি কর ছাড় পেতে পারবেন। এই উপকরণগুলোতে বিনিয়োগ করলে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের দাবি আপনি করতে পারেন। হয়তো নতুন কর ব্যবস্থা অনুযায়ী, এই উপকরণগুলিতে কর ছাড়ের পরিমাণের কিছু হেরফের করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে সময় অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সমস্ত জায়গায় বিনিয়োগ করলে শুধুমাত্র আপনার করই বাঁচেনা, আপনি নিজের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি সম্পত্তিও তৈরি করতে পারেন একই সঙ্গে।
২. সঠিক কর ব্যবস্থা বেছে নিন
এখনও পর্যন্ত ভারতে দুই রকম কর ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করার সময় আপনাকে পছন্দমত একটি বেছে নিতে হবে। কর বাঁচানোর ক্ষেত্রে আপনাকে ঠিক ব্যবস্থা বাছতে হবে। ভবিষ্যতে হয়তো প্রচলিত করব্যবস্থাটি তুলে দেওয়া হতে পারে, কারণ ওই ব্যবস্থায় কর ফাঁকি দেওয়ার অনেক জায়গা রয়েছে। তাই যদি কর বাঁচাতে হয়, তাহলে আপনাকে দেখে শুনে বিনিয়োগ করতে হবে। দু’টি ব্যবস্থাই আপনাকে বেশি করে কর বাঁচানোর প্রলোভন দিয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের পর যদি দু’টি কর ব্যবস্থা চালু থাকে, তবে আপনাকে অবশ্যই বেছে নিতে হবে সেই ব্যবস্থাটি যেখানে ৮০ সি ধারা চালু রয়েছে। এই ব্যবস্থায় আপনি যদি কর দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তাহলে আপনার হয়তো করের পরিমাণ বেশি লাগবে, তবে পুরনো ব্যবস্থা হওয়ার কারণে ট্যাক্স ছাড়ের সুবিধা পাবেন অনেক বেশি। যদি বিভ্রান্ত হয়ে যান তাহলে অনলাইন আয়কর ক্যালকুলেটরের সাহায্য নিতে পারেন আপনি।
৩. হোম লোন
আপনি যদি কোনও ব্যাঙ্ক অথবা নন ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহঋণ গ্রহণ করেন তাহলে আপনি নিজের আয় থেকে সেই লোনের সুদ এবং মূল পরিবার বাবদ কর ছাড়ের দাবি করতে পারেন। ঋণের মাধ্যমে কর ছাড়ের নিয়মটি পাল্টানোর জায়গা নেই। তাই ভারত সরকার এই নিয়মটি ভবিষ্যতেও চালু রাখবে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। সেক্ষেত্রে, আয়কর আইনের ২৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী হোম লোনের ক্ষেত্রে আপনি সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর বাঁচাতে পারেন।
আরও পড়ুন- কোথায় যায় ইডি-র হাতে উদ্ধার হওয়া কালো টাকা?
৪. স্বাস্থ্য বীমা করিয়ে নিন
যদি আপনি নিজের পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা করেন, তাহলে আপনি একটা মোটা টাকা কর ছাড় পেতে পারেন। আপনার স্ত্রী, স্বামী বা সন্তানের জন্য বীমা কিনলে ২৫,০০০ টাকা এবং বৃদ্ধ পিতা মাতার জন্য বীমা কিনলে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের দাবি করতে পারেন আপনি। প্রবীণ নাগরিকরা যদি নিজের জন্য স্বাস্থ্য বীমা কেনেন তাহলেও ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়কর ছাড়ের দাবি করতে পারেন। বীমার মাধ্যমে আয়কর বাঁচানো ভারতের সবথেকে প্রচলিত কয়েকটি কর ছাড়ের মাধ্যমের মধ্যে একটি।
৫. সময়মতো রিটার্ন ফাইল করুন
প্রত্যেক বছর আয়কর বিভাগের দেওয়া নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে আপনাকে আয়কর রিটার্ন ফাইল করতে হবে। বার্ষিক রিটার্ন দিলে এই তারিখটা সাধারণত থাকে ৩১ মার্চ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তারিখ বাড়াতে পারে আয়কর দপ্তর। তবে তারিখ বাড়িয়ে দেওয়ার পরেও যদি আপনি আয়কর রিটার্ন ফাইল না করেন, তাহলে পরিবর্তে আপনাকে ভারত সরকারকে ফাইন দিতে হবে। ফলে টাকা বাঁচানোর বদলে খরচ হবে বেশি। অন্যদিকে, যদি আপনি কোনও বড় হোম লোন নিয়ে থাকেন অথবা কোনও বড় টাকা লেনদেন করে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই রিটার্ন ফাইল করতে হবে সময় মতো।
এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ট্যাক্স বাঁচানোর জন্য আর্থিক বছরের একেবারে শেষ দিকে গিয়ে একাধিক ট্যাক্স ছাড়ের প্রকল্পে বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু সেই বিনিয়োগ করে কোনও তেমন লাভ হয় না। ভারত সরকার আপনার কাছ থেকে ট্যাক্স গ্রহণ করেই থাকে। প্রতি আর্থিক বছরের শুরুতে যদি আপনি এই কর সঞ্চয়কারী প্রকল্পে বিনিয়োগ করেন, তাহলে সেটাই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে এর জন্য আপনাকে কর সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে এবং কীভাবে কর বাঁচাবেন, সেই নিয়ে ভাবনা চিন্তাও করতে হবে। বাজেটের উপরেও গড় বাঁচানোর বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই ফেব্রুয়ারি মাসের ১ কেন্দ্রীয় অর্থ বাজেট ঘোষণার আগে পর্যন্ত আয়কর ছাড়ের ব্যাপারটি কিছুটা হলেও সন্দেহের জায়গায় রয়েছে। তবে হয়তো ঋণ অথবা বীমার মাধ্যমে কর বাঁচানোর বিষয়টি পরিবর্তন করবে না ভারত সরকার।