চরম গতিতে ধাক্কা, মুখে ওম নমঃ শিবায়! গুজরাতের দুর্ঘটনায় কী অবস্থায় ছিলেন অভিযুক্ত ছাত্র?

Vadodara accident case: রক্ষিত গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং 'অ্যানাদার রাউন্ড’, 'নিকিতা' এবং 'ওম নমঃ শিবায়' সহ নানা অসংলগ্ন শব্দ বলতে বলতে চিৎকার করেন।

দোলের আগের সন্ধ্যা। হোলিকা দহনের পরে মেয়ের সঙ্গে রঙ কিনতে, বাইরেই ডিনার সেরে একেবারে বাড়ি ফিরবেন ভেবেছিলেন হেমালি প্যাটেল এবং পুরভ প্যাটেল। স্কুটারে চড়ে ভাদোদরার রাস্তায় বেরিয়ে, তখনও তারা জানতেন না, এটাই তাঁদের একসঙ্গে শেষ যাত্রা। রাস্তায় বেরিয়ে কারেলিবাগ এলাকায় ঘটে যায় সেই বীভৎস ঘটনা যার ভিডিও ইতিমধ্যেই ঘুম কেড়ে নিয়েছে অনেকের। একটি দ্রুতগামী ভক্সওয়াগন গাড়ি ধাক্কা মারে হেমালি আর পুরভের স্কুটারে, ধাক্কা মারে অন্য আরও দু'টি গাড়িতে। হেমালি, পুরভ আর তাঁদের মেয়ে প্রবল গতিতে ছিটকে পড়েন মাটিতে। ঘটনাস্থলেই হেমালি মারা যান। পুরভ গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন। আর তাঁদের ছোট্ট মেয়েটিও ভয়াবহ আহত। ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরে দেখা যায়, গাড়ির চালক 'অ্যানাদার রাউন্ড' বলতে বলতে গাড়িতে থেকে নেমে আসছেন। দেখেই বোঝা যায়, প্রকৃতস্থ নন তিনি। চিৎকার করতে থাকেন ওম নমঃ শিবায়! ঈশ্বরের নাম নিয়ে কোন 'অ্যানাদার রাউন্ড' খেলার কথা ভাবছিলেন ওই চালক?

গাড়ি চালাচ্ছিলেন এমএস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র রক্ষিত চৌরাসিয়া। তাঁর পাশেই যাত্রীর আসনে ছিলেন বন্ধু প্রাণশু চৌহান। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গাড়িটি প্রচণ্ড গতিতে ধাক্কা মারার পরেই প্রাণশু বেরিয়ে আসছেন, আর কী কাণ্ড ঘটে গেছে তা বুঝতে পেরেই দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন বন্ধুর উপর। রক্ষিতও গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছেন এবং 'অ্যানাদার রাউন্ড’, 'নিকিতা' এবং 'ওম নমঃ শিবায়' সহ নানা অসংলগ্ন শব্দ বলতে বলতে চিৎকার করছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মাদকাসক্ত ছিলেন রক্ষিত। মারাত্মক জোরে স্কুটারটিকে ধাক্কা মারার পরে রক্ষিতকে জনতা মারধরও করে। পুলিশ অনিচ্ছাকৃত হত্যার মামলা এনেছে। জানা গেছে, রক্ষিত উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের বাসিন্দা এবং একজন ব্যবসায়ীর পুত্র। বন্ধু প্রাণশু চৌহানকে খুঁজছে পুলিশ।

আরও পড়ুন- দুর্ঘটনার আতুরঘর ট্রেন! শিউরে উঠবেন গত দু’বছরের রেল দুর্ঘটনার খতিয়ান জানলে

পুলিশের কাছে রক্ষিত দাবি করেছেন, তিনি মাতালও ছিলেন না, গাড়িও দ্রুত গতিতে ছিল না। দুর্ঘটনার জন্য এয়ারব্যাগকে দায়ী করেছেন রক্ষিত। বলেছেন, "আমরা একটা স্কুটারকে ওভারটেক করছিলাম, আমরা ডানদিকে বাঁক নিচ্ছিলাম। ওখানে একটি গর্ত ছিল। গাড়িটার সঙ্গে অন্য গাড়ির স্পর্শ হয় এবং এয়ারব্যাগ খুলে যায়। তাতে আমাদের দেখতে সমস্যা হয় এবং গাড়িটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আমি শুনলাম যে একজন মহিলা মারা গেছেন এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমি নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চাই, এটা আমার দোষ।"

দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে একজন বলেছেন, গাড়িটি প্রচণ্ড গতিতে ছিল। আহত বিকাশ কেভলানি বলেছেন, হোলিকা দহনের পরে তিনিও তাঁর ভাইবোন এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে খেতে বেরিয়েছিলেন। তিনি বলছেন, "আমি আমার ভাই জয়েশ, বোন কোমল এবং প্রতিবেশী হেমালি ও পুরভ প্যাটেলের সঙ্গেই ছিলাম। আমরা স্কুটারে ছিলাম। তখনই একটি দ্রুতগামী গাড়ি আমাদের ধাক্কা দেয়।"

সত্যিই কি গাড়ি চরম গতিবেগে ছিল না? সত্যিই কি মাতাল ছিলেন না রক্ষিত? সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, রক্ষিত এবং তাঁর এক বন্ধু একটি স্কুটারে করে বাড়িতে আসছেন। ঢোকার আগে দু'জনে কথা বলছেন। কথোপকথনে মগ্ন রক্ষিতকে দেখা যায় হাতে ধরা বোতল থেকে কিছু একটা খাচ্ছেন। সূত্রের খবর, প্রাণশুই প্রথমে চালকের আসনে বসেছিলেন কিন্তু পরে রক্ষিত তাঁর সঙ্গে জায়গা বদল করে নেন। পুলিশ জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসেই রক্ষিত এবং তাঁর বন্ধুরা মদ্যপানের পরে অসভ্যতা করার পরে স্থানীয়রা তাঁকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। রক্ষিত চৌরাসিয়া ১৯ ফেব্রুয়ারি বন্ধুদের সঙ্গে মদ খেয়ে চিৎকার করছিলেন। তখনই কিছু স্থানীয় লোক তাঁদের ধরে ফেলেন, মারধর করেন এবং পুলিশে ধরিয়ে দেন।

পুলিশ আরও বলছে, রক্ষিত চৌরাসিয়া আসলে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে ঘটনার সময় রক্ষিত চৌরাসিয়া মদ্যপ ছিলেন। আর কী ধরনের নেশার বস্তু খেয়েছিলেন তা জানতে ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে পুলিশ।

গুজরাতের মাদক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যালকোহল সেবনের ক্ষেত্রে শর্ত থাকে যে রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা ৫০ মিলিগ্রামের উপরে হলেই তা অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হবে। কিন্তু মাদক সেবনের ক্ষেত্রে রক্তপ্রবাহে খুব সামান্য পরিমাণ পেলেও তা অপরাধ। অ্যালকোহলের ক্ষেত্রে আট ঘণ্টার মধ্যে তা রক্তের নমুনা থেকে উড়ে যায়, ফলে রক্তে অ্যালকোহল শনাক্তকরণের সম্ভাবনা কমে যায়। তবে রক্তের নমুনায় মাদকের চিহ্ন ২৪ ঘণ্টারও বেশি থেকে যায়। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, চুল এবং নখের নমুনায় ১০০ দিন পর্যন্ত মাদকের উপস্থিতি পাওয়া যেতে পারে।

More Articles