মৃত্যু উপত্যকা গাজা | এত লাশ রাখব কোথায়?
Gaza War: প্যালেস্তাইনের নিরস্ত্র জনতার উপর যখন বোমা পড়ছে, রকেট বৃষ্টি হচ্ছে, ঝলসে যাচ্ছে ফিলিস্তিনি শিশুর দল, সেই অপরূপ মনোরম দৃশ্য দেখার জন্য তখন উঁচু পার্বত্য এলাকায় ইজরায়েলিদের ভিড়।
এত লাশ আমরা রাখব কোথায়? এত বড় কবরস্থান আমরা কোথায় পাব? প্যালেস্টাইনে চলমান গণহত্যার বর্ষপূর্তিতে দাঁড়িয়ে মনে হয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যই পরিণত হতে চলেছে একটা আস্ত কবরখানায়। ইতিমধ্যেই গাজা এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের প্রায় সবটুকুই কবরখানা। গণহত্যার মাসখানেক পর থেকেই হাসপাতালগুলির মর্গে লাশ রাখার জায়গা নেই। বিভিন্ন কারখানা থেকে খাবার এবং আইসক্রিমের ফ্রিজার আনা হচ্ছে। তাতে ঠাসাঠাসি করে ব্যাগে ভরে মৃতদেহ রাখা হচ্ছে। গোটা পৃথিবীর চোখের সামনে, পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদীদের সরাসরি মদতে এই নির্বিচার গণহত্যা চলছে।
খাতায় কলমে ইজরায়েল-গাজা 'যুদ্ধের' এক বছর হল। আসলে তো যুদ্ধ নয়, একতরফা গণহত্যা। দশকের পর দশক ধরে মার খেতে খেতে কোণঠাসা ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর- ইজরায়েলে হামাসের অতর্কিত হামলা, তার পরদিনেই হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের যুদ্ধঘোষণা এবং গণহত্যার শুরু। কিন্তু এক বছর পার করে এই যুদ্ধকে কি আর শুধুই ইজরায়েল-গাজা যুদ্ধ বলা চলে ?
ইজরায়েলের পশ্চিম সীমান্তে গাজা যেরকম সম্পূর্ণ ধ্বংসের পথে, পূর্ব সীমান্তের অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কও জর্জরিত ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর অত্যাচারে। প্যালেস্টাইনের প্রতি সংহতিতে ইজরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে লেবাননের হেজবোল্লা গোষ্ঠী। হেজবোল্লার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক ইরানের। এই লেখা যখন লিখছি, তার দিন কয়েক আগেই ইজরায়েলে হামলা করেছে ইরান। শয়ে শয়ে মিসাইল আছড়ে পড়েছে ইজরায়েলে। ইরানকে প্রত্যুত্তর দেওয়ার প্রতীক্ষায় এখন ইজরায়েল। অন্যদিকে ইরানের সহযোগী ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠীও প্যালেস্টাইনের প্রতি সংহতিতে গত নভেম্বর থেকেই ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে লোহিত সাগর অঞ্চলের ইজরায়েলি ও মার্কিনি জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে। সম্প্রতি লেবাননে ইজরায়েলি হামলার প্রতিবাদে তেল আভিভের উদ্দেশ্যে ছোড়া হুথি মিসাইলের জবাবে আবার ইয়েমেনের একটি বন্দরে বোমা ফেলেছে ইজরায়েলের বিমানবাহিনী। এক কথায় অগ্নিগর্ভ গোটা মধ্যপ্রাচ্য। ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধপরিস্থিতি ঘনিয়ে আসার পরিপ্রেক্ষিতে আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যমের একাংশে এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কাও।
গাজায় ফেরা যাক। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া হিসেবে অনুযায়ী এই এক বছরে গাজায় খুন হয়েছেন ৪১,৭৮৮ জন মানুষ, যাদের মধ্যে ১৬,৫০০ জন শিশু। অকল্পনীয় গণহত্যা! এক লক্ষের কাছাকাছি মানুষ আহত। দশ হাজারেরও বেশি নিখোঁজ। প্যালেস্টাইনের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেব বলছে, অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে মৃতের সংখ্যা ৭২৩, যার মধ্যে ১৬০ জন শিশু। আহতের সংখ্যা ৫,৭৫০-এর বেশি। ইজরায়েলের সরকারি হিসেবে সেই ৭ অক্টোবরের হামলায় মৃতের সংখ্যা ১১৩৯ এবং আহত অন্ততপক্ষে ৮,৭৩০ জন।
৭ অক্টোবর হামাসের হাতে বন্দি হওয়া আড়াইশো ইজরায়েলির মধ্যে উদ্ধার পেয়েছেন বা ছাড়া পেয়েছেন ১৪০ জন, বাকিদের মধ্যে জনা চল্লিশেক বন্দি অবস্থায় মারা গিয়েছেন। বিনিময়ে ইজরায়েলি সেনার হাতে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি থাকা হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মধ্যে ছাড়া পেয়েছেন মাত্র ২৪০ জন। ইজরায়েলের জেলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের উপরে চলেছে অবর্ণনীয় নির্যাতন। নিরস্ত্র বন্দিদের উপর সেলের ভিতরে কুকুর লেলিয়ে দিয়েছে জায়নবাদী রাষ্ট্রটি।
সম্মিলিত রাষ্ট্রপুঞ্জ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এবং প্যালেস্টাইনের সরকারি তথ্য অনুসারে এই এক বছরে গাজার ৬৫% কৃষিক্ষেত্র ও সড়ক নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ৬০%-এর মত বসতবাড়ি এবং ৮৫% স্কুলবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস অথবা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গণহত্যার শুরুর মাসখানেক পরে গাজার চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল। আপাতত অর্ধেকের মতো হাসপাতাল আংশিকভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার প্রাকযুদ্ধ জনসংখ্যার ৮৬%, সংখ্যায় প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষ, বর্তমানে বাস্তুহারা। বলাই বাহুল্য, গাজার শিশুরা আর স্কুলে যায় না।
অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাওয়া হিসেবে অনুযায়ী, ৩০০-র কাছাকাছি ত্রাণকর্মী এবং ৫০০-র বেশি স্বাস্থ্যকর্মী মারা গিয়েছেন গাজায়। এর মধ্যে রয়েছেন সম্মিলিত রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং রেডক্রসের কর্মীরাও। খাদ্য এবং ত্রাণসামগ্রী গাজায় ঢুকতে না দেওয়া থেকে শুরু করে উদ্ধারকর্মীদের অ্যাম্বুলেন্স আক্রমণ করার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে বারবার। জুলাই মাস পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১২৫ জন সংবাদকর্মী।
প্যালেস্টাইনের প্রতি সংহতি জানিয়ে গত একবছর ধরেই ইজরায়েলের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ছোটবড় হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল লেবাননের হেজবোল্লা গোষ্ঠী। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে তেল আভিভের কাছে ইজরায়েলের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালায় তারা। এরপরেই লেবাননে উপুর্যুপুরি বিমান হামলা চালাতে থাকে ইজরায়েল। হেজবোল্লার নিজস্ব যোগাযোগব্যবস্থা হ্যাক করে পেজার বিস্ফোরণ ঘটায়, এবং গত ২৭ সেপ্টেম্বর বেইরুটে বড় আকারের বিধ্বংসী হামলা চালিয়ে হেজবোল্লা-প্রধান হাসান নাসারাল্লাকে হত্যা করতে সক্ষম হয় ইজরায়েলি বাহিনী, যদিও সরাসরি সেই দায় স্বীকার করেনি ইজরায়েল।
ইরানের দীর্ঘকালের সহযোগী হেজবোল্লা-প্রধানের মৃত্যুর প্রত্যুত্তরে পয়লা অক্টোবর রাতে তেল আভিভে অজস্র ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করে ইরান। এতে ইজরায়েলের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানালেও যথাসময়ে এর প্রত্যুত্তর দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন নেতানিয়াহু।
তারপরেও লেবাননের মাটিতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইজরায়েল। দু'সপ্তাহের ভিতর ইজরায়েলি আক্রমণে সাধারণ নাগরিক ও হেজবোল্লার যোদ্ধাসহ অন্তত ১৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে লেবাননে। ঘরছাড়া হয়েছেন ১২ লক্ষের মত মানুষ। শনিবারেও বেইরুটের দক্ষিণে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারা, এমনকী উত্তরের একটি ফিলিস্তিনি রিফিউজি ক্যাম্পেও আক্রমণ করেছে। সীমান্ত পেরিয়ে সিরিয়ায় পালাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।
প্যালেস্টাইনের ওপর ইজরায়েলের এই দীর্ঘ ও ভয়াবহ আক্রমণ এবং তাতে পশ্চিমী বিশ্ব বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে আরও ঐক্যবদ্ধ করছে, আরও সংহত করছে ইসলামিক সংগঠনগুলোকেও। সম্প্রতি জর্ডনের নির্বাচনে বিরোধী দল ইসলামিক অ্যাকশন ফ্রন্ট তিনগুণ আসন বাড়িয়েছে। প্যালেস্টাইনের প্রতি সংহতি ও আবেগ মুসলিম বিশ্বের তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতি-সচেতন করে তুলছে। ফিলিস্তিনি আরবদের উপর ইহুদি ইজরায়েলের আক্রমণ, জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা, এবং প্যালেস্টাইন বা লেবাননের স্বাধীনতাকামী ইসলামিক শক্তিগুলোকে সন্ত্রাসবাদী বলে দাগিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে সঞ্চারিত ক্ষোভ মানুষ উগরে দিচ্ছেন আরও বেশি করে ইসলামের ছত্রছায়ায় দাঁড়ানোর মাধ্যমে।
প্যালেস্টাইনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ইংল্যান্ড ফ্রান্স আমেরিকা সহ পশ্চিমের বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে। লন্ডনের রাজপথে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেনের উদ্যোগে আয়োজিত পাক্ষিক মিছিলগুলোতে মানুষের ঢল নামছে। যুদ্ধের বর্ষপূর্তিতে আয়োজিত মিছিলে শনিবার গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৭ জন। যুদ্ধ ও মৃত্যু-স্রোতের বিরুদ্ধে হাজারে হাজারে শান্তিকামী মানুষ পথে নামছেন রোমে, বার্লিনে, প্যারিসে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানে দেশের নানা সমস্যার পাশাপাশি প্যালেস্টাইনের যন্ত্রনা নিয়েও আঁকা হয়েছে দেওয়ালচিত্র।
বস্তুত প্যালেস্টাইন ইস্যুতে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গেছে পৃথিবী। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ প্রথম বিশ্বের দেশগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে ইজরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের নামে যুদ্ধবাজির পক্ষে, অন্যদিকে উন্নয়নশীল বিশ্বের অধিকাংশ দেশ রয়েছে প্যালেস্টাইনের মানুষের মানবিক অধিকারের পক্ষে। আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা এনেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্য একটি মামলার নিরিখে ইজরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইনভঙ্গ এবং বৈষম্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে এই আদালত। কিন্তু এইসব কিছুই মানতে নারাজ নেতানিয়াহু। শান্তিস্থাপনের লক্ষ্যে সম্মিলিত রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে শুরু করে নানা দেশের দৌত্য তাই ব্যর্থ হচ্ছে বারেবারেই।
গাজাকে নিশ্চিহ্ন না করে ফেলতে পারা পর্যন্ত কি নিবৃত্ত হবে না ইজরায়েল? তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নেতানিয়াহুর বক্তব্য। গোটা দুনিয়ার চোখের সামনে এই নির্লজ্জ হত্যালীলা চলছে। ফিলিস্তিনিরা আক্রান্ত হচ্ছেন ফিলিস্তিনের বাইরেও৷ আমরা কজন হান্নান শাহীনের নাম শুনেছি? ছ' বছর বয়সি হান্নান আমেরিকার ইলিয়নে থাকত। সে ফিলিস্তিনি মুসলমান। গণহত্যা শুরুর কিছুদিন পরেই তাকে কুপিয়ে খুন করেছে একজন শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান আমেরিকান। ইজরায়েলেও বহু আরব থাকেন। তাঁদের সন্তানদের প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। ক্লাসের মধ্যে শুনতে হচ্ছে হত্যার হুমকি। শুনতে হচ্ছে সপরিবারে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে তাকে। খুব স্পষ্ট করে বলা দরকার, গত এক বছর ধরে যা চলছে, তা কোনও যুদ্ধ নয়, কোনও আক্রমণ নয়। প্রতিরোধ নয়। নির্বিচার সুপরিকল্পিত গণহত্যা। জাতিপুঞ্জের যে স্কুলগুলোয় বোমা হামলা থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা, সেগুলোর উপরেও বোমাবর্ষণ চলেছে। আহত শিশুদের নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছোটা অ্যাম্বুলেন্সে বোমাবর্ষণ চলেছে। ব্যবহার করা হচ্ছে হোয়াইট ফসফরাস, যাতে ফিলিস্তিনিদের হাড় পর্যন্ত পুড়ে যায়। কোনও সভ্য রাষ্ট্র যে কাজ করতে পারে না, তাই করছে ইজরায়েল।
ব্রিটেনের প্যালেস্টাইন সংহতি আন্দোলনের কর্মী হিসাবে কাজ করতে গিয়ে এমন সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, যা হয়তো আজীবন তাড়া করবে। ফিলিস্তিনের পিপলস পার্টির বন্ধু সোহেল বলছিলেন তাঁর গ্রামের মানুষদের কথা। ইজরায়েল তখন দক্ষিণ গাজা থেকে সরে যেতে বলছিল সিভিলিয়ানদের। সেই মতো দেইর এল-বালাহ শহরে একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন দক্ষিণ গাজা থেকে পালিয়ে আসা সোহেলের গ্রামের একদল মানুষ। সেই বাড়িটিকে লক্ষ্য করে, ভেবে চিন্তে বোমাবর্ষণ করেছে ইজরায়েল৷ গোটা বাড়িটিকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। একসঙ্গে মারা গিয়েছেন গ্রামের ৭৬ জন। এক বছর হতে চলল গোটা গাজায় জ্বালানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই। কার্যত নরককুণ্ডে পরিণত হওয়া গাজায় প্রায়ই ফুরিয়ে আসে পানীয় জল। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডবলিউয়ের কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারানি আমার সঙ্গে কথপোকথনে বলছিলেন, মানুষজন বাধ্য হয়ে তেষ্টা মেটাতে নোংরা নর্দমার জল খাচ্ছেন রোজ, এটাই স্বাভাবিক। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বোমায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভিড় করছেন, চিকিৎসা পাচ্ছেন না। গাজায় চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরির যে ক'টি কারখানা আছে, তার সবকটিই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ছোট শিশুদের ক্ষতস্থান ধুইয়ে দেওয়ার জলও নেই।
আরও পড়ুন ‘আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি’
এক বছর পেরিয়ে এসে কিছু লিখতেও ভালো লাগে না। ক্লান্তি আসে। অর্থহীন বোধ হয়। অসহায়তা গ্রাস করে। আবারও বলি, এটা কোনও যুদ্ধ নয়, গণহত্যা। জায়নবাদী রাষ্ট্র কী নৃশংস এবং অসুস্থ মানসিকতা নিয়ে চলে, তা বোঝা যাবে একটি ঘটনায়৷ গণহত্যার শুরুর দিকে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর স্ত্রী সারার ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা এবং অফিস ম্যানেজার জিপি নাভোন সম্প্রতি ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর কাছে একটি আর্জি জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দাদের হত্যা না করে বাঁচিয়ে রেখে বাড়ি বাড়ি ঢুকে অত্যাচার করা হোক। কিন্তু আটক ফিলিস্তিনিদের জিভ যেন না কেটে ফেলা হয়। কারণ ইজরায়েলিরা তাদের আর্তনাদ উপভোগ করতে চান। আটক আরবদের কান এবং চোখ যেন আস্ত রাখা হয়, যাতে তাঁরা দেখতে এবং শুনতে পারেন ইজরায়েলিদের উল্লাস। এটাই জায়নবাদী সংস্কৃতি। প্যালেস্তাইনের নিরস্ত্র জনতার উপর যখন বোমা পড়ছে, রকেট বৃষ্টি হচ্ছে, ঝলসে যাচ্ছে ফিলিস্তিনি শিশুর দল, সেই অপরূপ মনোরম দৃশ্য দেখার জন্য তখন উঁচু পার্বত্য এলাকায় ইজরায়েলিদের ভিড়। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার এবং পানীয় নিয়ে তাঁরা ‘উপভোগ’ করছেন মারণ উৎসব – ২০১৪ সালের এই ছবি কোনও বিচ্ছিন্ন দৃশ্য নয়। জায়নবাদী ইজরায়েল রাষ্ট্র এভাবেই দশকের পর দশক উদযাপন করে আসছে লাগাতার গণহত্যা। তাই ইজরায়েলি রাষ্ট্র স্পষ্টতই বলতে পারে, ফিলিস্তিনিরা মানুষ নয়, নরপশু।
এই বীভৎস গণহত্যার বিরুদ্ধে রাস্তায় থাকা ছাড়া, ফিলিস্তিনিদের সংহতিতে অবস্থান ছাড়া একজন 'মানুষে'র বোধহয় আর কিছু করার নেই। মানুষের ইতিহাসে এমন দুঃসময় খুব বেশি আসেনি।