দেশে ফেরানোর তৎপরতা আসলে 'লোক দেখানো'! চাঞ্চল্যকর দাবি বিজয় মাল্যর

Vijay Mallya : বিজয় মাল্য বলেন, তাঁকে দেশে ফেরানোর যে তৎপরতার তা আসলে 'লোক দেখানো'। তাঁর কথায়, সরকারের তরফে কেউ কি জানিয়েছেন আমি কী অপরাধ করেছি? মনগড়া কাহিনি শোনালে তো হবে না, প্রমাণ দিতে হবে।

ফের শিরোনামে দেশের পলাতক শিল্পপতি বিজয় মাল্য। রাজ সোমানির পডকাস্টে দীর্ঘ কথোপকথনে একাধিক বিষয়ে মুখ খুলেছেন তিনি।জানিয়েছেন, কীভাবে বদলে গিয়েছে ভিলার মালিকানা? কেন কিংফিশার বিমান সংস্থার বেহাল দশা হলো?

‘পলাতক’ শব্দে আপত্তি নেই, কিন্তু কেউ ‘চোর’ বললে আপত্তি আছে। ৯০০০ কোটির আর্থিক তছরুপে অভিযুক্ত বিজয় মাল্য এমনটাই দাবি করেছেন ওই পডকাস্টে। তাঁর দাবি, তিনি ভারত ছেড়ে পালাননি। পূর্বনির্ধারিত কাজের জন্য তাঁকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। পডকাস্টটিতে তাঁর নামের আগে ‘চোর’ শব্দ বসানো হয়েছিল, তাতে আপত্তি জানান বিজয় মাল্য। তিনি বলেন, “আমি দেশে ফিরিনি যে সমস্ত কারণে, তার যথেষ্ট ভিত্তি রয়েছে। ঠিক আছে, আপনি চাইলে আমাকে পলাতক বলতে পারেন। কিন্তু ‘চোর’ (শব্দ) কি বলা যায়? চুরির কথা আসছে কোথা থেকে?”

মাল্য জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে দেশ ছাড়ার আগে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে সংসদে দেখা করেন তিনি। বিদেশ যাচ্ছেন তা অর্থমন্ত্রীকে জানিয়ে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন। ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান, মীমাংসাও করতে চান বলে জেটলিকে জানান তিনি। তাঁর কথায়, "১৯৮৮ সাল থেকে ইংল্যান্ডে ছিলাম আমি। ইংল্যান্ডের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলাম দীর্ঘ ৩২ বছর। কিন্তু প্রবাসী ভারতীয় স্বীকৃতি ছাড়িনি। আমি সাংসদ ছিলাম, তাই ভারতীয় পাসপোর্ট রেখেছিলাম। আমি অর্থমন্ত্রীকে বলে সাধারণ বিমানে করে বিমানবন্দরে যাই। তারপরেও তামাশা শুরু হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার সাধারণত তথ্য যাচাই করে। আমি শেয়ার বিক্রি করা নিয়ে বিদেশে সহযোগীদের সঙ্গেও কথা বলেছিলাম। ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে মীমাংসা করতে চেয়েছিলাম। ED-কে চিঠি দিয়ে জানাই, সময় দিন। আমি শেয়ার বিক্রির কথা বলছি। CBI-এর কাছে গিয়েছি, আপনাদের কাছেও যাব। কিন্তু আমার পাসপোর্টই বাতিল করে দেওয়া হলো। পাসপোর্ট ছাড়া কোথায় যাব? কী করে যাব? "

২০১৬ সালের পর থেকে ব্রিটেনে রয়েছেন তিনি। ভারতে ফেরা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “যদি স্বচ্ছ বিচার এবং সম্মানজনক ভাবে জীবন কাটানোর বিষয়ে আশ্বস্ত করা যায়, তা হলে আমি এই বিষয়টি নিয়ে সত্যিই ভেবে দেখব।” এরপর তিনি ব্রিটেনের একটি হাই কোর্টের রায়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন- প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত মামলাতে ব্রিটেনের ওই আদালত জানায়, ভারতের জেলগুলির পরিস্থিতি মানবাধিকার সংক্রান্ত ইউরোপিয়ান কনভেনশনের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন করছে।

বিজয় মাল্য বলেন, তাঁকে দেশে ফেরানোর যে তৎপরতা তা আসলে 'লোক দেখানো'। তাঁর কথায়, "সরকারের তরফে কেউ কি জানিয়েছেন আমি কী অপরাধ করেছি? মনগড়া কাহিনি শোনালে তো হবে না, প্রমাণ দিতে হবে। আমি কি তছরুপ করেছি? মাদক পাচার করেছি? হিংসা ঘটিয়েছি? আমি প্রতারণা করিনি। ইচ্ছাকৃত ভাবে ঋণখেলাপ তখনই বলা যায়, যখন কেউ টাকা থাকা সত্ত্বেও ধার শোধ করে না। আমি তো মীমাংসা করতে চেয়েছিলাম! আমার সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেই সম্পত্তি থেকেই ১৪,১০০ কোটি টাকা তোলা হয়েছে। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে কাউকে চোর বলা যায় না।"

তাঁর কথায়, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণেই ২০০৮ সালে কিংফিশার বিমান সংস্থার বেহাল দশা হয়। এই বিমান সংস্থার (বর্তমানে অস্তিত্বহীন) মালিক ছিলেন বিজয় মাল্য। ১৭টি ভারতীয় ব্যাঙ্ক থেকে কিংফিশার এয়ারলাইন্সের জন্য প্রায় ৯,০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই টাকা মেটাতে না পারায় ২০১৬-র মার্চ মাসেই দেশ ছাড়েন কিংফিশার কর্তা। তাঁকে পলাতক ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনার পর ব্যাঙ্কগুলি কিংফিশার ভিলা নিলামে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই নিলামে ২০১৭ সালে প্রায় ৭৩ কোটি টাকায় ভিলাটি কিনে নেন বলিউড অভিনেতা তথা ব্যবসায়ী সচিন জোশী ও তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী ঊর্বশী শর্মা। সচিন ‘মুম্বই মিরর’ এবং ‘জ্যাকপট’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন।

‘কিং অফ গুড টাইমস’ নামে পরিচিত মাল্যর এই কিংফিশার ভিলা ছিল রূপকথার মহলের মতো। গোয়ার উত্তরাঞ্চলের কানডোলিম সৈকতের ধারে তিন একর জমির উপর গড়ে ওঠা প্রায় ১২ হাজার ৩৫০ স্কোয়ার ফুট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল এই ভিলা। ভিলাটি ইউনাইটেড ব্রিউয়ারিজ হোল্ডিংস-এর মালিকানাধীন ছিল। পানাজি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই ভিলা নিয়েও বেশ কিছু অজানা তথ্য জনিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, বেঙ্গালুরুতে কিংফিশার টাওয়ার যেখানে রয়েছে, সেখানে তাঁদের বাংলো ছিল। তাঁর বাবা সেখানেই থাকতেন বলেও জানান তিনি। বিজয় মাল্য জানান, একটি টাওয়ারের উপরে এই ধরনের বাংলো তৈরির ঘটনা নিছক রসিকতার ছলে শুরু হয়েছিল। তাঁকে প্রথম এই বিলাসবহুল আবাসিক প্রকল্পের প্রস্তাব করেছিলেন প্রেস্টিজ গ্রুপের চেয়ারম্যান ইরফান রাজাক।

বিজয় মাল্য বলেন, ‘আমি আমার বন্ধু ইরফানকে মজা করেই বলেছিলাম, আমি রাজি আছি যদি আমার পরিবারের বাংলোটা বিল্ডিংয়ের উপরে তুলে দেওয়া হয়। আমি অবাক হয়ে গেলাম ও রাজিও হয়ে গেল এবং তা করেও দেখাল।’ সাথে এও জানান যে বাণিজ্যিক কারণেই কিংফিশার টাওয়ার প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। বিজয় মাল্যকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- এখন কী অবস্থায় রয়েছে এই বাড়ি? তিনি জানান, ভিলাটি এখনও অসম্পূর্ণই। বলে রাখা ভালো, কিংফিশার টাওয়ারে আরও বহু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের বাড়ি রয়েছে। ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি-রও এখানে বাড়ি।

উল্লেখ্য, বিজয় মাল্য ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল লন্ডনে গ্রেফতার হন। ভারতে ঋণখেলাপ-সহ একাধিক মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করেছিল স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। তবে গ্রেফতারির তিন ঘণ্টার মধ্যেই জামিনে মুক্তিও পেয়ে যান তিনি। এখন মাল্যর এই সমস্ত মন্তব্যের পর ভারত থেকে কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি।

More Articles