চঞ্চল চৌধুরীর কণ্ঠে ভাইরাল! ২০২৩-এ বাংলা কাঁপানো 'ফুল ফুটেছে' গানের নেপথ্যের শিল্পীকে চেনেন?
Viral Bangla Song of 2023 : হাশিম মাহমুদের লেখা বহু গান বহু জায়গায় বিনা অনুমতিতে অনেকে ব্যবহার করেছেন। অথচ ন্যূনতম সাম্মানিকও মেলেনি।
চেয়েছিলেন গান নিয়েই থাকবেন। গানই প্রাণ, গানই শান্তি। তাঁরই গান তাঁরই অজান্তে ঘুরে বেরিয়েছে কতজনের কণ্ঠে, কতজনের ফোনে ফোনে রিংটোন হয়ে বেজে গেছে তারই লেখা কথা। অথচ স্বীকৃতি মেলেনি। কিছু বছর আগে সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে একটি গান খুব ছড়িয়ে পড়ে, 'তোমায় আমি পাইতে পারি বাজি'। এলোমেলো সাদা-কালো চুলের বৃদ্ধের গলায় সেই গান জনপ্রিয় হলেও এই বৃদ্ধ আসলে কে তা জানতে তখনও বাকি ছিল দুই বাংলারই। বোহেমিয়ান কবি তিনি, বর্তমানে মানসিক, শারীরিক সমস্যায় জেরবার। তিনি বাংলাদেশের কবি, গীতিকার হাশিম মাহমুদ। তারই গান সাদা-সাদা, কালা-কালা বিখ্যাত হয় 'হাওয়া' সিনেমার সৌজন্যে।
নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা হাশিম জটিল মানসিক রোগ স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত বলে জানা যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদসূত্রে। গান গাইতেও নানা সমস্যা। নারায়ণগঞ্জের তল্লা এলাকায় পৈতৃক বাড়িরই একপাশে মায়ের সঙ্গে থাকেন তিনি। শুধু তো সাদা-সাদা, কালা-কালা গানটিই নয়, বিখ্যাত 'ফুল ফুটেছে গন্ধে সারা মন' গানটিও তাঁর। বাংলাদেশের বিখ্যাত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর একটি ভিডিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। 'ফুল ফুটেছে' গানটি গাইছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে কোক স্টুডিও বাংলাতেও এই গানটি গাওয়া হয়। তাঁর গান যে এত মানুষ শুনছেন, সারা বিশ্বের বাঙালিরা তাঁর গানের সুরে কত কী করে ফেলছেন। হাশিমের কাছে সেসব খবর আসে ঠিকই, তবে তেমন ঢেউ তোলে না।
হাশিম মাহমুদের মা জমিলা আখতার শেফালি জানান, ঘরেই থাকেন ছেলে। গান গেয়ে চলেন, আর খাতায় গান লেখেন। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের সংসারে বড় হয়েছেন হাশিম। তাঁর বাবাও গান গাইতেন। বাবার সাহচর্যেই গান ভালোবেসে আজীবন গান নিয়েই থাকবেন বলে ঠিক করেন। নারায়ণগঞ্জ শহরের লক্ষ্মীনারায়ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার শুরু। ১৯৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল থেকেই এসএসসি। এরপর সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক করেন হাশিম মাহমুদ।
রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। নজরুলগীতি নিয়েও দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়েছেন। চাকরির পেছনেও ছোটেননি কখনই। তাই ১৯৯৪ সালে পাস করার পর গান ছাড়া অন্য কোনও কিছুই আর মন দিয়ে করেননি। পেশাদার গীতিকার সুরকার হননি হাশিম। তিনি আজীবন বোহেমিয়ান। নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা, টিএসসি, ছবির হাটের পরিচিত মুখ ছিলেন তিনি। ‘শাপলা’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে দীর্ঘকাল যুক্ত ছিলেন। ‘বৈরাগী’ নামে একটি গানের দলও করেছিলেন হাশিম।
হাশিম মাহমুদের লেখা বহু গান বহু জায়গায় বিনা অনুমতিতে অনেকে ব্যবহার করেছেন। অথচ ন্যূনতম সাম্মানিকও মেলেনি। মেলেনি স্বীকৃতিও। তাতে অবশ্য কিছুই এসে যায়নি এই কবির। ‘হাওয়া’ সিনেমায় পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন তাঁর সাদা-সাদা, কালা-কালা গানটি নেন। শারীরিক অবস্থা এমনই যে নিজে গাইতেও পারেননি সেটি। কিন্তু দুই বাংলা তোলপাড় করে দেয় সেই গানের মাদকতা। স্বীকৃতি যখন পেলেন, তখন সেই স্বীকৃতির আনন্দ ভোগের মতো মন বা শরীরই নেই তাঁর। তবু, কবি লেখেন। ঘরে স্তূপ করা খাতা, গলায় গুনগুন। বাংলাদেশের বোহেমিয়ান কবি এভাবেই বাঁচেন।