'একতরফা ব্যবসা করছিল ভারত, এখন দেরি হয়ে গিয়েছে'! ট্রাম্প মোদির দূরত্ব কমবে?
Modi Trump Relation: সম্প্রতি এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি দাবি করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতে খুব সামান্যই রফতানি করে, অথচ ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিপুল পরিমাণে পণ্য বিক্রি করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফের ভারতকে নিশানা করলেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই “সম্পূর্ণ একপাক্ষিক”, এমনটাই দাবি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি দাবি করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতে খুব সামান্যই রফতানি করে, অথচ ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিপুল পরিমাণে পণ্য বিক্রি করছে।
তাঁর কথায়, “ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য সম্পূর্ণ একপাক্ষিক। তারা আমাদের কাছে অনেক পণ্য বিক্রি করে, কিন্তু আমরা তাদের কাছে খুব কমই বিক্রি করতে পারি। তাদের শুল্ক এত বেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যবসা ভারতে টিকে থাকতে পারে না। এটি একটি ‘ওয়ান-সাইডেড ডিজাস্টার'।”
তিনি আরও বলেন, ভারত সম্প্রতি শুল্ক কমিয়ে শূন্য করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে ট্রাম্পের বক্তব্য, “ওরা (ভারত) এখন (মার্কিন পণ্য) শুল্কশূন্য করার প্রস্তাব দিচ্ছে। এটা ওদের অনেক আগেই করা উচিত ছিল।”
আরও পড়ুন- বস্ত্রে ৫০ শতাংশ শুল্ক! ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে মাথায় হাত লাখো কারিগরের
ট্রাম্প প্রশাসন গত অগাস্টে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। পরে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপান ট্রাম্প। অর্থাৎ, মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয় ভারতের উপর। এটি বিশ্বের অন্যতম উচ্চ শুল্কহার। ওয়াশিংটন ফের সতর্কবার্তা দিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে তেলের বাণিজ্য চালালে ভারতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফার নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। ভারত সরকারও পাল্টা বলেছে, মার্কিন শুল্ক আরোপ ‘অন্যায্য’ ও ‘অযৌক্তিক’।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পাকিস্তানের উপর সবচেয়ে কম শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প।পাকিস্তানের উপর শুল্কের হার কমিয়ে ১৯ শতাংশ করা হয়েছে। সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল, পাকিস্তানের রেডিমেড পোশাকের অন্যতম বড় বাজার আমেরিকা। এত দিন পাকিস্তানকে এ ক্ষেত্রে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিত ভারত এবং বাংলাদেশ। কিন্তু এবার পাকিস্তানের উপর কম শুল্ক আরোপ করায় প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানই জিতবে। যদিও বাংলাদেশেও ভারতের তুলনায় কম শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প। এপ্রিলের শুরুর দিকে ৩৭ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর জুলাইতে তা কিছুটা কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়। সব শেষে তা আরও কমিয়ে এখন ২০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
আমেরিকা এবং ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে যখন টানাপড়েন চলছে, তখন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সামিটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে বৈঠক করলেন। ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক মহল মনে করছে, মার্কিন চাপে ভারতের সঙ্গে রাশিয়া ও চিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারে।
আরও পড়ুন- ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ! কীভাবে সংকট কাটাবে ভারত?
২৬ অগাস্ট থেকে ভারতের উপর ট্রাম্পের চাপানো বাড়তি শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এরই মধ্যে দুই বিদেশি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে সামনে এসেছে, ট্রাম্প নাকি মোদিকে ফোন করেছিলেন, কিন্তু মোদি সেই ফোন তোলেননি। জার্মানির সংবাদপত্র ফ্রাঙ্কফুর্টের আলগেমাইনে জাইটুং (এফএজ়েড) একটি রিপোর্টে লিখেছে, ‘‘সম্প্রতি ট্রাম্প ফোনে চার বার মোদির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মোদি ফোন তোলেননি।’’
জাপানের এক সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এসসিও-তেও গত ২৪ অগাস্ট দাবি করা হয়েছে, সব মিটিয়ে নেওয়ার জন্য সম্প্রতি অনেক বার ট্রাম্প মোদিকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু মোদি ফোন তোলেননি। এতে ট্রাম্পের হতাশা আরও বেড়ে গিয়েছে। যদিও এ নিয়ে ওয়াশিংটন বা নয়াদিল্লির কোনো মন্তব্য করেনি।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য শুধু বাণিজ্য নয়, সমগ্র মার্কিন-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়—দুই দেশ কি এই সংঘাত মেটাতে সমঝোতার পথে এগোবে, নাকি কূটনৈতিক অচলাবস্থা আরও জটিল হবে?

Whatsapp
