স্বয়ং নেতাজি এবং গান্ধীজিও এসেছিলেন এখানে, জানেন কোথায় ‘মিনি অযোধ্যা’?

Weekend Destination Mini Ayodhya : জেলা বাঁকুড়া, থানা গঙ্গাজলঘাটি, গ্রাম কাপিস্টা। এখানেই রয়েছে যাচিত মিনি অযোধ্যা। লোকমুখে কখনও কখনও পরিচিত হয় কোড়ো পাহাড় নামে

শীত মানেই উৎসব, খাওয়াদাওয়া আর ভ্রমণ। তবে ব্যস্ত জনজীবনে লম্বা ছুটির খুবই অভাব তাই, সপ্তাহান্তে দুটো দিনই ভরসা। যদিও ঘিঞ্জি দীঘা পুরী অথবা দার্জিলিং-এর মোহ কেটে গিয়েছে অনেকদিনই। মানুষ এখন অরবিট ভ্রমণে আগ্রহী। কাছাকাছির মধ্যেই এমন কোনও জায়গা, যা হয়তো লোকচক্ষুর খানিক আড়ালে, যেখানে এখনও অযাচিত ভিড় এসে এখনও নিস্তব্ধতায় ভাগ বসাতে পারেনি, ঠিক এরকম একটা জায়গা প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায় আমাদের। মুঠোফোনে ঘাঁটতে থাকি নতুন কোনও অপরিচিত জায়গার নাম। ঠিক এরকমই একটি নিরিবিলি জায়গার সন্ধান রইল এই প্রতিবেদনে।

মিনি অযোধ্যা পাহাড়। ভাবছেন তো এ আর অজানা কীসে! পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা পাহাড়ের গল্প তো সেই কবে থেকে পরিচিত। কিন্তু সে পাহাড়ের আগে হঠাৎ করে 'মিনি' বসল যেন? অবাক লাগছে তো? এই যে মিনি অযোধ্যার কথা বলা হচ্ছে, তা আসলে পুরুলিয়ায় নয়, রয়েছে বাঁকুড়া জেলায়।

জেলা বাঁকুড়া, থানা গঙ্গাজলঘাটি, গ্রাম কাপিস্টা। এখানেই রয়েছে যাচিত মিনি অযোধ্যা। লোকমুখে কখনও কখনও পরিচিত হয় কোড়ো পাহাড় নামে। আর এই পাহাড়ের গলাতেই স্বর্ণহারের মতো অবস্থান করছে একটি আশ্রম। বাঁকুড়া থেকে অমরকানন যাওয়ার পথে ছোট্ট একটা সেতু পার করে মাত্র এক কিলোমিটারের মত এগোলেই চোখে পড়বে মস্ত হোডিং। আর তাতেই লেখা রয়েছে ‘মহিমানন্দ তপোবন আশ্রম’। ঠিক তার পাশ দিয়েই উঠে গিয়েছে রাস্তা। পথ যেভাবে বাঁক নিয়েছে ঠিক সেই মতো অনুসরণ করে চলে এলেই পৌঁছে যাবেন তপোবন শাখা উত্তম আশ্রমে। চারিদিকে সারা দিয়ে গাছ গাছালি, আর তাতেই অনবরত আড্ডা দিচ্ছে চেনা অচেনা শীতের পাখিরা। প্রকৃতির অসাধারণ এই ছন্দে নিমেষে মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন আপনিও।

আরও পড়ুন - সমতলেই রয়েছে পাহাড়ি জঙ্গলের স্বাদ, কোথায় এই মিনি ডুয়ার্স?

আশ্রমেই শেষ নয়, তাকে পিছনে ফেলে আরও খানিকটা এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে ওপরে ওঠার সিঁড়ি। দূর থেকে দেখে মনে হবে এ যেন প্রকৃতই স্বর্গের সিঁড়ি, উপরের শেষ সিঁড়িটি যেন মিশেছে এক্কেবারে আকাশের সঙ্গে। দুই ধারে সার দিয়ে বড় বড় গাছ, আর তার মাঝখান দিয়ে একটা একটা করে ধাপ বরাবর এগোতে হবে, সে এক অদ্ভুত অনুভূতি। এই এতগুলো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত মুকুটটি। মোটেই নিরাশ হবেন না আপনিও। পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে অষ্টভূজা মা পার্বতীর মন্দির। ওই উঁচু মন্দির থেকে চারপাশের পৃথিবীকে দেখতে দেখতে মনে হবে স্বার্থক আপনার উইকএন্ড প্ল্যান।

কথিত আছে, একসময় সেবা শুশ্রূষার জন্য স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু নাকি এসেছিলেন এই উত্তম আশ্রমে। নেতাজি একা নন গোবিন্দ প্রসাদ এবং গান্ধীজির স্মৃতিও জড়িয়ে রয়েছে এই আশ্রমের সঙ্গে। ইতিহাসের পাতা ওল্টাতে বসলে ধরা পড়ে সেইসব কিসসা। আর তাতে এসে লাগে সপ্তাহান্তের ছুটির নেশা। আর সেই সব মিলিয়েই জমজমাট হয়ে ওঠে লোকচক্ষুর খানিক অগোচরে থাকা এই মিনি অযোধ্যা।

More Articles