গোদি মিডিয়ার কীর্তিফাঁস আজ!
Godi Media Boycott on Bangla Ja Bhabche : গোদি মিডিয়াকে বাদ দিলেই কি গোদি মিডিয়ার কবল থেকে নিষ্কৃতি পাবে দেশ? সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা নিয়ে কী ভাবছে বাংলা?
গোদি মিডিয়া বয়কট করেছে বিজেপি বিরোধী জোট ইন্ডিয়া, মিডিয়া না বলে, বলা ভালো মিডিয়ার বাছাই করা সঞ্চালকদের। সেই অর্থে গোদি মিডিয়া বা এই সঞ্চালকরা বিরোধীদের বয়কট করেনি। কিন্তু মোদি-আরএসএস ঘেঁষা সংবাদমাধ্যমে নিজেদের কথা বলতে চাইছেন না বিরোধীরা। গোদি মিডিয়া আসলে কী? মোদির কোলে বসা (হিন্দিতে তাহাই গোদি), মোদির আনুগত্যে বাঁচা সংবাদমাধ্যমকেই বলে গোদি মিডিয়া। একজন গোদি অ্যাঙ্কর বা সঞ্চালককে দেখতে কেমন হয়? অনেককেই বলা হয় গোদি অ্যাঙ্কর, তা এই গোদি অ্যাঙ্কর হতে গেলে যোগ্যতা কী লাগে? একজন ভালো, টাটকা, তেজি গোদি অ্যাঙ্কারের মধ্যে কোন কোন গুণ থাকাটা জরুরি? গোদি মিডিয়াকে আপনি চিনবেন কোন কোন উপায়ে? গোদি মিডিয়া থেকে বাঁচার রাস্তা আছে কি? তার আগে জানা যাক, গোদি মিডিয়ার মুখ কারা?
অর্ণব গোস্বামী, নভিকা কুমার, চিত্রা ত্রিপাঠি, সুধীর চৌধুরী, অমীশ দেবগণ, রুবিকা লিয়াকত, আমন চোপড়া, এ ছা়ড়াও আরও সাত সংবাদ সঞ্চালক। তালিকায় সব মিলিয়ে ১৪ জনের নাম। এদের মুখের উপরেই কালো ধাব্বা মেরেছে আইএনডিআইএ বা ইন্ডিয়া জোট। চ্যানেলগুলোকে বয়কট না, ঘৃণাভাষণ ছড়ানোর অভিযোগে বেছে বেছে এই ১৪ অ্যাঙ্কারকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ইন্ডিয়া জোট।
দর্শকদের মগজধোলাইয়ের পাল্টা বয়কটের ডাণ্ডা। শোনা যাচ্ছে, এরপর নাকি আর্থিক অবরোধের দাওয়াইও দিতে পারে ইন্ডিয়া জোট। জোট শিবির সূত্রে খবর, কোনও কোনও রাজ্যে সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধের কথাও ভাবা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ১১ রাজ্যে ইন্ডিয়া জোটের ঘাঁটি রয়েছে। উত্তরপ্রদেশ বাদ রাখলে রাজস্থান, ছত্তিশগড় এবং পঞ্জাব সরকার তথাকথিত গোদি মিডিয়ার চ্যানেলগুলোকে বড় অঙ্কের টাকার বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে।
বয়কট ঘোষণা হতেই তথাকথিত গোদি মিডিয়া এবং তাঁদের অ্যাঙ্কররা প্রাইমটাইম শোয়ে আদাজল খেয়ে নেমে পড়েন। সাংবাদিকদের ধর্ম কী, দায়বদ্ধতা কোথায় তা নিয়ে শোনা যায় হুঙ্কার। পিঠ চুলকোতে মাঠে নামে ভারতীয় জনতা পার্টি।
তালিকা আরও লম্বা করা যায়। তথাকথিত গোদি মিডিয়া সেদিন কোন দায়বদ্ধতা দেখিয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্ন করা যায়? সেই সালতামামি ঘাঁটলে হয়ত কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে পড়বে কেউটে।
আরও পড়ুন- গোদি মিডিয়ার সুধীর ভাই আর তাঁর সাংবাদিকতা
এটা মনে রাখা দরকার, গৌতম আদানি এনডিটিভি অধিগ্রহণের আগে, চ্যানেলে কোনও বক্তা পাঠাত না বিজেপি। তামিলনাডুর সমস্ত সংবাদ চ্যানেল বয়কট করে থাকে বিজেপি। কংগ্রেস অনেক আগে থেকেই রিপাবলিক চ্যানেলে কোনও প্রতিনিধি পাঠায় না। প্রেস কনফারেন্সেও রিপাবলিক চ্যানেলকে আমন্ত্রণ জানায় না। তবে এটাও ঠিক। মিডিয়া বা অ্যাঙ্কর বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের ভিতরেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে সাংবাদিকদের মধ্যেও।
একটা ছোট তথ্য দেওয়া যাক, দেশ তখনও স্বাধীন হয়নি। ১৯২৬। দেশের সাধারণ মানুষের কাছে খবরের কাগজ বয়কট করার আবেদন রাখেন মহাত্মা গান্ধি। বলেন, খবরের কাগজে উস্কানিমূলক রিপোর্ট ছাপা হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। দেশ কোনও কিছু হারাবে না যদি ছাপা কাগজের অন্তত নব্বই শতাংশ ফেলে দেওয়া যায়।
গোদি অ্যাঙ্কর কারা?
একজন আদর্শ গোদি অ্যাঙ্কর সরকারের বকলস পরে থাকেন। সাধারণ মানুষের হয়ে ক্ষমতাকে প্রশ্ন করেন না। স্টুডিয়োর আলোচনায় বিশেষ একটি দলেরই ঝোল খায়।
গোদি অ্যাঙ্করের যোগ্যতা কী?
আত্মাকে পচা খালে ভাসিয়ে দিতে হবে। দেশ যাচ্ছে শেঠের হাতে, চাকরি বেচছে রাজার পেয়াদা, সংবিধান ছিঁড়ে ভর্তা বানাচ্ছে, সমাজে ঘৃণার আগুন, অথচ শ্রেষ্ঠ গোদি অ্যাঙ্করের চোখে ঠুলি।
গোদি অ্যাঙ্কর চেনার উপায়?
কঠিন কাজ না। রাজাকে যে তেলমালিশ করেন। জনতা এবং বিরোধী দলকে প্রশ্ন যে করেন। সরকারি প্রোপাগান্ডা যার শোয়ে ব্রেকিং নিউজ তিনিই গোদি অ্যাঙ্কর।
কোন কোন সংবাদপাঠক বা সঞ্চালক রয়েছেন সেই তালিকায়?
অদিতি ত্যাগী
আমন চোপড়া
অমীশ দেবগন
আনন্দ নরসিংহ
অর্ণব গোস্বামী
অশোক শ্রীবাস্তব
চিত্রা ত্রিপাঠী
গৌরব সাওয়ান্ত
নভিকা কুমার
প্রাচী পরাশর
রুবিকা লিয়াকত
শিব আরুর
সুধীর চৌধুরী
সুশান্ত সিনহা
সামনেই লোকসভা ভোট। প্রশ্ন উঠেছে, তার আগে জোট ইন্ডিয়ার এই সিদ্ধান্ত কি কিছুটা হলেও বিরোধী জোটের প্রচারের মুখে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না? এর আগেও ২০১৯ সালেও কংগ্রেস এমনই পদক্ষেপ করেছিল বেশ কয়েকটি পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে। প্রায় এক মাসের জন্য বেশ কয়েকটি টেলিভিশন শো বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় দল। কর্মীদের দলের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যাতে তাঁরা সেই সব চ্য়ানেলের শো-তে অংশ না নেয়। কিন্তু গোদি মিডিয়াকে বাদ দিলেই কি গোদি মিডিয়ার কবল থেকে নিষ্কৃতি পাবে দেশ? সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা নিয়ে কী ভাবছে বাংলা? প্রতি সোম,বুধ,শুক্র সন্ধে ৭ টা থেকে - কলকাতা ২৪x৭ এর ইউটিউব চ্যানেল এবং inscript.me এর ফেসবুক পেজে। সঙ্গে থাকুন, দেখতে থাকুন সমাজ-রাজনীতি নিয়ে সাংবাদিকদের মতামত, বিশ্লেষণ। আজকের পর্ব- গোদি মিডিয়ার কীর্তিফাঁস? বাংলা কী ভাবছে?