২৫-এ স্তব্ধ জীবন! রিঙ্কু পুত্রের মৃত্যুর নেপথ্যে কী এই হেমরেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিস?
Dilip Ghosh Rinku Son Death: সৃঞ্জয়ের হার্টের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। কিডনি ও লিভারের আকারও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল।
দিলীপ ঘোষকে বিয়ে করেছিলেন রিঙ্কু মজুমদার। হ্যাঁ, অনেকটা জীবন পেরিয়ে এসে, অনেকটা সংসার একাই সামলে জীবনকে নতুন এক বাঁকে বইয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিবাহের জীবন শুরু হতে না হতেই চরম ধাক্কা! মায়ের বিয়ের ২৫ দিনের মাথায় মৃত্যু হলো রিঙ্কু মজুমদারের একমাত্র পুত্র সৃঞ্জয় দাশগুপ্ত ওরফে প্রীতমের। মাত্র ২৫ বছর বয়স সৃঞ্জয়ের, পেশায় আইটি কর্মী। চাকরি করতেন সল্টলেকে। ১৩ মে, মঙ্গলবার সকালে সাপুরজি আবাসনের ই-ব্লকের ঘর থেকে নিথর দেহ উদ্ধার হয় সৃঞ্জয়ের। প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নিউটাউনের এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে। সেখানেই সৃঞ্জয়কে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। স্বাভাবিকভাবেই এই শোকে স্তব্ধ হয়ে যান মা রিঙ্কু। কিন্তু কীভাবে মৃত্যু? কেন এত কমবয়সে এমন অস্বাভাবিক সকাল নেমে এল সৃঞ্জয়ের জীবনে?
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশমর্গে ময়নাতদন্ত হয়েছে সৃঞ্জয়ের দেহের। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে চিকিৎসকরা বলছেন, অ্যাকিউট হেমরেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিস ছিল তাঁর। এছাড়া ময়নাতদন্তে চিকিৎসকরা দেখেছেন, সৃঞ্জয়ের হার্টের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। কিডনি ও লিভারের আকারও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। চিকিৎসকদের বক্তব্য, রক্তচাপ বেশি থাকলে এমনটা হতে পারে।
অ্যাকিউট হেমরেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিস কী? চিকিৎসকদের অনুমান, সৃঞ্জয়ের অগ্ন্যাশয়ে কোনও রকমের প্রদাহ হয়েছিল। অগ্ন্যাশয়ে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ থেকে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে আভাস ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে কোনওরকম ‘ফাউল প্লে’ বা আত্মহত্যার উল্লেখ নেই।
হেমরেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিস হচ্ছে প্যানক্রিয়াটাইটিসের একটি গুরুতর রূপ। অগ্ন্যাশয়ের ভিতরে বা চারপাশে রক্তপাত ঘটতে থাকে এতে। তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী প্যানক্রিয়াটাইটিস মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। সাধারণত প্রদাহ বা নেক্রোসিসের কারণে রক্তনালিতে ব্যাঘাতের কারণে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট, পেরিটোনিয়াল গহ্বর বা রেট্রোপেরিটোনিয়ামে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
হেমরেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিস সাধারণত তখন ঘটে যখন অগ্ন্যাশয়ের উৎসেচকগুলি বেরিয়ে আসে এবং কাছাকাছি থাকা রক্তনালিগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে রক্তপাত হয়। নেক্রোটাইজিং প্যানক্রিয়াটাইটিস রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
এর ফলে পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তপাতের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তপাতের কারণে একাধিক অঙ্গ বিকলও হতে শুরু করে।
মৃত্যুর পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সৃঞ্জয়ের জেঠু বিক্রমজিৎ দাশগুপ্ত বলেছিলেন, "ভাইপোর মৃত্যুর সত্য উদঘাটন হোক, কেউ জড়িত থাকলে শাস্তি পাক"। সৃঞ্জয়ের পিসি জানিয়েছিলেন সৃঞ্জয়ের শারীরিক সমস্যা কিছু ছিলই, তবে ভেতরে ভেতরে তা যে কতখানি মারাত্মক হয়েছিল, টের পাননি কেউই। সৃঞ্জয়ের পিসি বলেছিলেন, "সৃঞ্জয়ের স্নায়ুর সমস্যা ছিল, চিকিৎসা চলছিল, এ ছাড়া আর কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল না।”
আর পুত্রহারা সৃঞ্জয়ের মা রিঙ্কু মজুমদার বলেছেন, "রবিবার মাদার্স ডে পালন করেছিল, আমার সঙ্গে থাকতেও চাইত। যত্ন হচ্ছিল না ছেলের, আমি বুঝতে পারছিলাম”। তিনি আরও জানিয়েছেন, খাওয়া-দাওয়া ঠিক করে করতেন না সৃঞ্জয়, এমনকী স্নায়ুর অসুখের ওষুধপত্রও ঠিকঠাক খেতেন না। জীবনের নতুন বাঁকে এসে নতুন এক শোকের অভিজ্ঞতা হলো দাপুটে বিজেপি নেতার। দিলীপ বলেছেন, ‘‘মায়ের সব কিছু ছিল ছেলে। অনেক কষ্টে ওকে মানুষ করেছে। ছেলেও সর্বগুণসম্পন্ন। পড়াশোনায় ভালো। দেখতে-শুনতে ভালো। ভালো কথা বলত। কখনও ভাবিনি এমন কিছু হতে পারে.. .দুর্ভাগ্য আমার। পুত্রসুখ হয়নি। পুত্রশোক হলো। কল্পনাই করিনি।’’