'ছোট লিঙ্গ' নিয়ে তরজায় সোশ্যাল মিডিয়া, গ্রেটা থুনবার্গের টুইট নিয়ে এখনও আলোড়ন বিশ্বজুড়ে
Greta Thunberg Small Dick Energy Twitter : টুইটারের হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেনে রীতিমতো ঝড় তোলে এই বিষয়। আর যার কেন্দ্রে ছিলেন গ্রেটা থুনবার্গ।
২০২২ তখন গুটিগুটি পায়ে শেষের দোরগোড়ায়। বিশ্বকাপ ফুটবলও শেষ হয়ে গিয়েছে। নববর্ষ আর বর্ষবরণের আমেজে তৈরি হচ্ছিল গোটা বিশ্ব। সেই সময়ই টুইটার রীতিমতো ফেটে পড়ল মাত্র তিনটে শব্দে। টুইটারে ঢোকামাত্র একটু এদিক ওদিক দেখলেই সামনে চলে আসছে সেই শব্দগুলি। এমন তার বিস্ফোরণ, মাত্র কয়েক মিনিটে ট্রেন্ডিংয়ের তালিকায় এক নম্বরে চলে সেটি। কেবল টুইটার নয়, অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও তার বিস্ফোরণ। কী ছিল সেই তিনটে শব্দ? ‘Small Dick Energy’, স্মল ডিক এনার্জি। হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেনে রীতিমতো ঝড় তোলে এই বিষয়। আর যার কেন্দ্রে ছিলেন গ্রেটা থুনবার্গ।
পরিবেশ বাঁচানোর বিষয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে বিগত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন জারি রয়েছে বিশ্বে। আর সেই আন্দোলনেরই পোস্টার গার্ল হলেন গ্রেটা থুনবার্গ। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন জায়গায় তাঁর আন্দোলন, তাঁর বক্তৃতা প্রভাব ফেলেছে। পরিবেশ বাঁচানোর আন্দোলনে সামিল হয়েছেন আরও অনেকে। ২৭ ডিসেম্বর সেই গ্রেটাই আরও একবার নেট দুনিয়ায় ট্রেন্ডিংয়ের তালিকায়। এবার প্রত্যক্ষভাবে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি না এলেও, পরোক্ষে সেটিই ছিল। আর যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত সেই টুইটারেই। সূচনা করেন অ্যান্ড্রু টেট।
আরও পড়ুন : প্রলয় আসছে, দায়ী আপনি, রাষ্ট্রনেতার চোখে চোখ রেখে বলে যান গ্রেটা
কে এই অ্যান্ড্রু টেট?
৩৬ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু এক সময় কিকবক্সিং খেলতেন। সেখানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপও জিতেছিলেন। এখন তিনি অন্ত্রেপ্রেনর, এবং আমেরিকার কোটিপতি এক যুবক। তবে নেট দুনিয়া তাঁকে চেনে বিভিন্ন বিতর্কিত ইস্যুর জন্য। ক্রমাগত নারীবিদ্বেষী মত, অশালীন ব্যবহারের জন্য টুইটার তো বটেই, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক থেকেও ব্যান করা হয়েছিল। পরে অবশ্য টুইটারে আবার ফিরে এসেছেন অ্যান্ড্রু টেট।
ঘটনার সূত্রপাত ২৭ ডিসেম্বরে। টুইটারেই একটি পোস্টে গ্রেটা থুনবার্গকে বেমক্কা আক্রমণ করে বসে অ্যান্ড্রু টেট। তিনি বলেন, “হ্যালো গ্রেটা, আমার কাছে বিলাসবহুল ৩৩টি গাড়ি আছে। বুগাতি থেকে ফেরারির বড় ইঞ্জিনের গাড়ি আছে। তবে এটা তো শুরুয়াৎ। তোমার ইমেল দাও, যাতে আমি পুরো তালিকা তোমায় দেখাতে পারি। সেইসঙ্গে গাড়ি থেকে বের হওয়া কালো ঘন ধোঁয়ার পরিমাণও বলতে পারি।”
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘ঠেস মেরে কথা বলা’। অ্যান্ড্রু টেট ঠিক সেই কাজটিই করলেন এখানে। গ্রেটা থুনবার্গের পরিবেশ আন্দোলন খুব একটা ভালো চোখে দেখেননি তিনি। এর আগেও অনেক জায়গায় গ্রেটাকে আক্রমণ করেছেন। আক্রমণ করেছেন পরিবেশ বাঁচানোর আন্দোলনকে। তারপরই ২৭ ডিসেম্বরের টুইট সেই আন্দোলনকেই যেন চ্যালেঞ্জ জানানো। যেন বলা, দেখো, আমি তো আমার কাজ করে যাব। গাড়ি চালাব, বিষাক্ত ধোঁয়া পরিবেশে ফেলব। গাছ কাটব। তোমরা যা করার করে নাও।
কিন্তু এর উত্তরে গ্রেটা ছোট্ট একটি টুইট করেন। সেখানে লেখেন,
“yes, please do enlighten me. email me at smalldickenergy@getalife.com.”
yes, please do enlighten me. email me at smalldickenergy@getalife.com https://t.co/V8geeVvEvg
— Greta Thunberg (@GretaThunberg) December 28, 2022
এই টুইটের পরই রীতিমতো একটা বিস্ফোরণ হয়। টুইটারে লক্ষ লক্ষ মানুষ গ্রেটার এমন ‘সার্কাজম’-এ যারপরনাই খুশি। এতটাই খুশি যে, ঝড়ের গতিতে শেয়ার শুরু হয়। ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ অবধি ৩.৯ মিলিয়ন বা প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ এই টুইট লাইক করেছেন। প্রায় ৭ লক্ষ মানুষ রিটুইট করেছেন। এবং এই মুহূর্তে পৃথিবীর সর্বকালের সেরা টুইটের তালিকায় নাম তুলে নিয়েছেন গ্রেটা থুনবার্গ।
তারপরও সমানে বিদ্বেষমূলক টুইট করতে থাকেন অ্যান্ড্রু টেট। এমনকী গ্রেটার লিঙ্গ পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। শেষমেশ অবশ্য তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। কেবল তাই নয়, যে গাড়ি আর বাড়ি নিয়ে তাঁর অহংকার, সেসবও বাজেয়াপ্ত করা হয়। সামনে আসে, ২০১৫ সালে ধর্ষণের সন্দেহে ইংল্যান্ডে টেটকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কেবল পরিবেশ আন্দোলনই নয়, নারীদেরও অসম্মান করেন তিনি। কিন্তু তারপরও আলোচনা থামেনি। ‘স্মল ডিক এনার্জি’ এখনও জনগণের মধ্যে সাড়া জাগিয়ে তুলছে।
আরও পড়ুন : করোনার পর ফের মহামারীর সামনে পৃথিবী? কারণ দেখিয়ে ভয়াবহ ইঙ্গিত বিজ্ঞানীদের
ইংরেজিতে গালাগাল হিসেবেই এই ‘স্মল ডিক’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। বাংলায় আক্ষরিক মানে করলে দাঁড়ায়, ছোট লিঙ্গ। কিন্তু এখানে গ্রেটা থুনবার্গ কথাটি ব্যঙ্গার্থে ব্যবহার করেছেন। যারা অন্যের ভালো দেখতে পারেন না, অন্যের কাজে বাগড়া দেন, মূলত তাঁদেরকেই এমন কথা বলা হয়ে থাকে। বডি শেমিং নয়, মানুষের স্বভাবকে নির্দেশ করা হয়েছে। অ্যান্ড্রু টেট যে আচরণ শুরু করেছিলেন, তা মোটেই শোভনীয় ছিল না।
পরিবেশ দূষণ একটি জ্বলজ্যান্ত সমস্যা। যত দিন যাচ্ছে, সেটি আরও বাড়ছে। মুদ্রার দুটো পিঠের মতোই সেই বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন গ্রেটা ও অ্যান্ড্রু। একজন পরিবেশ বাঁচানোর কাজ করছেন, লড়াই চালাচ্ছেন, লাখ লাখ মানুষকে এই বয়সেই উদ্বুদ্ধ করছেন। আরেকজন সেই কাজকে অসম্মান করছেন, কিন্তু নিজে কোনও উদ্যোগই নিচ্ছেন না। অনেক মানুষই ‘স্মল ডিক এনার্জি’ এই শব্দবন্ধে একটা শক্তি খুঁজে পেয়েছেন। অপমানের যোগ্য জবাব দেওয়ার উত্তর। তাই এই মুহূর্তে নেট দুনিয়াও তোলপাড় ‘ছোট লিঙ্গ’ নিয়ে।

Whatsapp
