তেলেঙ্গানা বিস্ফোরণ: ৩৯ শ্রমিক মৃত্যুর কারণ কী? কেন তদন্তে গুরুত্ব নেই মিডিয়ার!
Telangana : দুর্ঘটনার সময় কারখানায় ১৪৩ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন বলে বৃহস্পতিবার এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। নয়জন শ্রমিক এখনও নিখোঁজ।
তেলেঙ্গানার কারখানায় বিস্ফোরণে ৩৯ জনের মৃত্যু। ঠিক কী ঘটেছিল ১জুলাই? কী ভাবে বিস্ফোরণ! ঘটনার তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে তেলেঙ্গানা সরকার। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে। মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলি বিস্ফোরণের খবর সম্প্রচার করেছে। এতেই কি সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? ৩৯ জন শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ কী? তদন্তে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক মিডিয়াহাউসগুলিকে।
সোমবার তেলেঙ্গানার সাঙ্গারেড্ডি জেলায় সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজের রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। যার ফলে ৯০ দিনের জন্য ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থাটিকে কাজ বন্ধ করতে হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় কারখানায় ১৪৩ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন বলে বৃহস্পতিবার এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। নয়জন শ্রমিক এখনও নিখোঁজ। এখনও পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে ৩১ জনকে শনাক্ত করা গেছে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন- ইংরেজি চায়নি বামেরা, চাইছেন না অমিত শাহও! কোথায় মিল, কোথায় ফারাক?
কী ঘটেছিল ১জুলাই?
ওই কারখানায় ছয় মাস ধরে কাজ করছেন চন্দন গৌন্দ (৩২ বছর)। রয়টার্সকে তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার দিন টয়লেট ব্যবহার করার জন্য তিনি প্ল্যান্ট থেকে বেরিয়েছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান বিস্ফোরণের। টয়লেট থেকে বেরিয়ে আগুন দেখতে পান। তাঁর দিকেও আগুন ছিটকে এসেছিল, কিন্তু তিনি দেওয়াল টপকে পালিয়ে যান। তিনি আরও জানান, কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের অনেকেই বেরিয়ে আসতে পেরেছিল, তবে অনেকে আটকেও পরে। তেলেঙ্গানা কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবারকে ১কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞদের দল বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে খবর। তবে কী ভাবে এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটল, তার কারণ প্রকাশ করেনি সংস্থা। বিশেষজ্ঞরা বিস্ফোরণস্থলের ফুটেজ দেখে জানাচ্ছেন যে, এটি একটি ‘ডাস্ট ব্লাস্ট’। প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতে এটিকে তাঁরা 'ফুটন্ত তরল সম্প্রসারণকারী বাষ্প বিস্ফোরণ' (BLEVE) হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে। যার অর্থ হল চুল্লির ভিতরে চাপ তৈরি হওয়ার ফলে ঘটা বিস্ফোরণ।
আরও পড়ুন- ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দে অ্যালার্জি! কাদের, কেন?
কী কাজ চলত ওই কারখানায়?
সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজ মাইক্রোক্রিস্টালাইন সেলুলোজ (MCC) পাওডার তৈরি করে। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ট্রেলিয়ার ফার্মা, খাদ্য, প্রসাধনী এবং বিশেষ রাসায়নিক খাতের গ্রাহকদের রপ্তানি করে। এমসিসি ওষুধ তৈরিতে বাইন্ডার, ডিসইন্টিগ্র্যান্ট, ফিলার এবং লুব্রিকেন্ট হিসেবে কাজ করে। খাদ্য পণ্য ও প্রসাধনী পণ্যেও এটি ব্যবহৃত হয়। কম ক্যালরিযুক্ত খাবারে ফ্যাটের বিকল্প হিসেবেও এমসিসি ব্যবহার করা হয়।
অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী কে. বাবু এটিকে ধূলিকণা বিস্ফোরণ বলে অনুমান করেছেন। তিনি বলেন, "উৎপাদন প্রক্রিয়ায় স্প্রে ড্রায়ারের মাধ্যমে MCC-কে ছোট ধূলিকণাতে পরিণত করা হয়। নির্দিষ্ট বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থায় ধূলিকণা মাইক্রোন নির্দিষ্ট ঘনত্বে সীমাবদ্ধ স্থানে জমা হলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে"। তবে তিনি ফ্যাক্টরি ডিপার্টমেন্টকেও দায়ী করছেন রাজ্যের ইন্ডাস্ট্রিয়াল দুর্ঘটনাগুলির জন্য। তাঁর মতে, নিয়মিত পরিদর্শন করা হয় না। বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলির পক্ষে রিপোর্ট দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে সাঙ্গারেড্ডি জেলার এসবি অর্গানিকস লিমিটেডের চুল্লিতে বিস্ফোরণের রিপোর্ট এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তিনি আরও বলেন যে, গত বছরও একটি ফার্মা কোম্পানিতে বিস্ফোরণের জন্য স্ট্যাটিক ইলেকেট্রিসিটিতে দায়ী করে কোম্পানিকে ক্লিনচিট দেয় ফ্যাক্টরি ডিপার্টমেন্ট এবং কর্মীদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম না পরার জন্য দায়ী করে।