বিপদের চরম সীমায় পৃথিবী! নির্বিচারে জঙ্গল কাটার যে মাশুল দিতে হবে আপনার সন্তানকেও...

Amazon Deforestation: Tipping Point-এ পৌঁছে যাওয়া মানে পরিস্থিতি একেবারেই হাতের বাইরে চলে যাওয়া। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, অ্যামাজনের Tipping Point-এ পৌঁছে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা।

"Climate change carries no passport and knows no national borders. Countries must work toward the common interest, beyond narrow national interests."

আপনি কখনও কোনও মহাকাশচারীর সাক্ষাৎকার শুনেছেন? যদি শুনে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে, তাঁদের সবার একটি বক্তব্যে ভীষণ মিল। তাঁরা মহাকাশে গিয়ে মানুষ হিসেবে পাল্টে গেছেন। পৃথিবী, সমাজ এবং সামগ্রিকভাবে এই সভ্যতা সম্পর্কে তাঁদের মনোভাবে আমূল পরিবর্তন এসেছে। কারণ তাঁরা মহাকাশে গিয়ে এই পৃথিবীকে দেখেছেন। তাঁরা দেখেছেন একটি গ্রহ, শূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছে, প্রদক্ষিণ করছে একটি তারাকে, যেখানে কোনও সীমান্ত নেই, শুধু জল আর স্থল, এবং খুব সূক্ষ্ম এক বায়ুমণ্ডল। এক নিখুঁত ব্যবস্থাপনা যা মহাকাশের নির্মম, ক্ষমাহীন পরিবেশে গড়ে তুলেছে প্রাণের বিরল বাসা। সেই বাসা ২০০ টি দেশে বিভক্ত কুরুক্ষেত্র নয়, একটি প্রাণ, যার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে বিভিন্ন প্রান্তে এবং প্রত্যেকটি অংশ একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। এই গ্রহ মানুষের কাছে বিশাল হতে পারে, উত্তর গোলার্ধ থেকে দক্ষিণ গোলার্ধের দূরত্ব মানুষের কাছে অনেক হতে পারে, কিন্তু আদপে তা নয়।

সেই বাসা আজ চরমভাবে আক্রান্ত। আক্রান্ত পৃথিবীর বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। তার মধ্যে সবথেকে চিন্তায় রেখেছে পৃথিবীর ফুসফুসের আক্রান্ত হওয়া। যাকে আমরা অ্যামাজন বলে জানি। পৃথিবীর বৃহত্তম রেইনফরেস্ট, যা নয়টি দেশ জুড়ে অবস্থিত, যেখানে পৃথিবীর অন্তত ১০ শতাংশ প্রজাতি এবং ৪ কোটি মানুষের বাস। এই রেইনফরেস্ট এতটাই বৃহৎ যে আমাদের গ্রহের স্বাস্থ্যের সঙ্গে এর সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। ঠিক যেভাবে ফুসফুস আক্রান্ত হলে আমাদের শরীরের বাকি অংশেও তীব্র প্রভাব পড়ে, এটিও ঠিক তাই। কেউ যদি মনে করেন যে লাতিন আমেরিকার জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে সাফ করে দিলে আমাদের কী, তাহলে তিনি মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। ইতিমধ্যেই পৃথিবীর অন্যান্য অংশে অ্যামাজনের রুগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ভেঙে পড়ছে বাস্তুতন্ত্র।

আরও পড়ুন- ব্রাজিলের গদি উল্টোনো কতটা বাঁচাবে পৃথিবীর ফুসফুস আমাজনকে

সম্প্রতি এক অতি উদ্বেগজনক রিপোর্ট সামনে এসেছে। Nature Climate Change Journal-এর গবেষণা দাবি করছে, অ্যামাজনের গাছ কেটে সাফ করে ফেলার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সুদূর তিব্বতে, যার অ্যামাজন থেকে দূরত্ব ১৫ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। প্রভাব পড়েছে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফের চাদরেও।

এই গবেষণায় জানা যাচ্ছে, তিব্বতের এবং পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে অ্যামাজনের বননিধনের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। বিগত চার দশকের তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন যে, অ্যামাজনে যখনই বেশি বৃষ্টি হয়েছে, তখনই এই দুই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বা তুষারপাত কমে গেছে। যত এই রেইনফরেস্টের আয়তন ছোট হচ্ছে, তত দ্রুত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তিব্বতে এবং অ্যান্টার্কটিকায়। বরফ গলতে থাকছে, বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের জলস্তর।

বিজ্ঞানীরা এই বিপদকে বোঝাতে একটি শব্দের ব্যবহার করেন, 'Tipping Point'। এই কথাটির অর্থ হলো, এমন একটি দশা যেখান থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আর সীমিত করা যাবে না বা রোখা যাবে না। Tipping Point-এ পৌঁছে যাওয়া মানে পরিস্থিতি একেবারেই হাতের বাইরে চলে যাওয়া। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, অ্যামাজনের Tipping Point-এ পৌঁছে যাওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। অ্যামাজন যদি সেই টিপিং পয়েন্টে পৌঁছে যায় যেখান থেকে তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হবে না, তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যেই সেই প্রভাব পৌঁছে যাবে তিব্বতে এবং অ্যান্টার্কটিকায়।

আরও পড়ুন- উন্নয়নের কোপে পরিবেশ ধ্বংসের মাশুল! কোন ভয়াবহ সংকট আসন্ন

মনে রাখা প্রয়োজন, তিব্বত উপত্যকায় হিমালয়ের তথা পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গগুলি অবস্থিত। তিব্বতের বরফের চাদরের উপর নির্ভরশীল ২০০ কোটিরও বেশি মানুষ। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকেই এই অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের তুলনায় তিব্বত বা অ্যান্টার্কটিকার তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার অনেক বেশি। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নির্বিচারে বননিধন।

সম্প্রতি ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন লুলা ডি সিলভা। যিনি অ্যামাজনকে রক্ষা করার জন্য অতীতে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করেছেন, সেই সঙ্গে তাঁর পূর্বসূরি এবং অ্যামাজনের ঘোষিত শত্রু বোলসোনারোর সমস্ত অ্যামাজন ধ্বংসকারী কার্যকলাপ বন্ধ করে তাকে বাঁচিয়ে রাখার অঙ্গীকার করেছেন। জার্মানি, নরওয়ের মতো দেশ আর্থিক সাহায্য করেছে, সাহায্য আসছে পৃথিবীর বাকি প্রান্ত থেকেও। কিন্তু তা কি যথেষ্ট? একেবারেই নয়। আজও প্রতিনিয়ত একটি ফুটবল মাঠের সমান জঙ্গল উধাও হয়ে যাচ্ছে, তা আটকানো যাচ্ছেনা। এইভাবে চলতে থাকলে আর সর্বাধিক দশ বছর আমাদের হাতে আছে। তার মধ্যেই চূড়ান্ত বিপর্যয়ের সূচনা হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা।

এখন রাষ্ট্রপ্রধানরাই ঠিক করুন, নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতেই শুধু অর্থ বৃদ্ধি করে যাবেন নাকি পরিবেশের জন্যও সামান্য অর্থ বরাদ্দ করবেন?

 

More Articles