'রোশন' বিতর্কের মধ্যেই আলোয় রাকেশ শর্মা! এখন কোথায় কৃতি এই নভোশ্চর?

Rakesh Sharma: চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্যের পরে ইসরোকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাকেশ স্বয়ং। রোশন নয়, শর্মা। আপাতত তামিলনাড়ুর কুন্নুরে রয়েছেন প্রাক্তন এই নভোশ্চর, সকলের আড়ালে।

'কে প্রথম চাঁদে গেছে বলো তো নাম' যদি নীল আর্মস্ট্রং হয়, তবে প্রথম ভারতীয় মহাকাশচারী হিসেবে রাকেশ শর্মার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গিয়েছে সকলের মনে। তবে তাঁর মহাকাশ সফর নিয়ে কোনও বিতর্কের অবকাশ নেই। স্টুডিওয় শুটিং কিনা তা নিয়ে জল্পনাও নেই। কারণ দিনের আলোর মতো স্পষ্ট, জলের মতোই স্বচ্ছ তার মহাকাশ সফর।

সম্প্রতি চাঁদের মাটিতে পা দিয়ে ইতিহাস গড়েছে ভারত। মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এ এক মাইলস্টোন তো বটেই। এর আগে মাত্র তিনটি দেশ এই সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন। তবে এর মধ্যেও ব্যতিক্রম তৈরি করতে সফল হয়েছে ভারত। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখা প্রথম দেশ তারাই।

আরও পড়ুন: চাঁদ নয়, মহাকাশচারী রাকেশ শর্মাকে কী বলেছিলেন ইন্দিরা?

ভারতের এই চূড়ান্ত সাফল্যের মুহূর্তে স্বাভাবিক ভাবেই উঠে এসেছে দেশের আরও এক সাফল্যের গল্প। প্রথমবার মহাকাশে পৌঁছে নজির গড়েছিলেন ভারতের প্রথম নভোশ্চর রাকেশ শর্মা। সেটা ১৯৮৪ সালের কথা। রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রথমবার মহাকাশে যাত্রা করল ভারত। ইসরো এবং সোভিয়েত ইন্টারকসমস স্পেস প্রোগারমের আওতায় বেশ কয়েকজন রুশ নভোশ্চরের সঙ্গে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন বায়ুসেনার স্কোয়ার্ডন লিডার রাকেশ শর্মা। মহাকাশে ৭ দিন ২১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর রুশ সহোযোদ্ধারা।

আরও একটা কারণে ভারতের চাঁদজয়ের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে রাকেশ শর্মার নাম। চন্দ্রযান ৩-র সাফল্য কামনা করে বিবৃতি দিয়েছিলেন প্রায় প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই। মুখ খুলেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এবং মুখ খুলেই বলে ফেলেছিলেন বেফাঁস কথা। রাকেশ শর্মার বদলে মুখ ফস্কে বলে ফেলেন রাকেশ রোশনের নাম। যিনি কিনা আদতে অভিনেতা-পরিচালক এবং হৃত্বিক রোশনের বাবা। স্বাভাবিক ভাবেই, তাঁর সঙ্গে মহাকাশ পাড়ির দূর দূর পর্যন্ত কোনও সম্পর্ক নেই। এমন আলটপকা বক্তব্যের পরেই আরও আলোচনায় এসে গিয়েছেন নভোশ্চর রাকেশ শর্মা।

সামনে এসেছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে মহাকাশে থাকাকালীন রাকেশ শর্মার কথোপকথনের সেই ঐতিহাসিক ভিডিও। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ভাইরালও হয়ে গিয়েছে তা। মহাকাশ থেকে ভারতকে দেখতে কেমন? ক্ষীপ্রতার সঙ্গে উত্তর দিয়েছিলেন রাকেশ, 'সারে জাঁহা সে আচ্ছা'। ভারতের কাছে এই সাফল্য ছিল কার্যত এক মাইলফলক। শুধু বিনোদন নয়, বিজ্ঞানসাধনাতেও যে এগিয়ে ভারত, তা প্রমাণ করে দিয়েছিল এই মহাকাশজয়। সেই পথ ধরেই ক্রমে চাঁদজয় করেছে ভারত।

চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্যের পরে ইসরোকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাকেশ স্বয়ং। রোশন নয়, শর্মা। আপাতত তামিলনাড়ুর কুন্নুরে রয়েছেন প্রাক্তন এই নভোশ্চর, সকলের আড়ালে। তবে ইসরোর সঙ্গে যোগ তাঁর ছিন্ন হয়নি কোনওদিনই। এখনও বিভিন্ন বিষয়ে রাকেশ শর্মার সাহায্য পায় ইসরো। এমনকী গগনায়ন প্রকল্পের ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলেও রয়েছেন তিনি।

 

১৯৪৯ সালের ১৩ জানুয়ারি পাটিয়ালায় জন্ম রাকেশ শর্মার। তবে পড়াশোনা হায়দরাবাদে। সেন্ট অ্যান'স হাই স্কুল, সেন্ট জর্জ গ্রামার স্কুল এবং নিজাম কলেজে পড়াশোনা। সেখান থেকে পুনের ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি (এনডিএ)-তে পড়তে যান রাকেশ। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৭০ সালে ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগ দেন তিনি। হয়ে যান স্কোয়াড্রন লিডারয এক বছরের মধ্যেই হাত পাকান মিগ-২১এস চালানোয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করেছিলেন রাকেশ। উরি গাগারিন কসমোনট ট্রেনিং সেন্টারে কঠোর প্রশিক্ষণের দিনগুলো ছিল একটা অভিজ্ঞতা। যার জোরেই মহাকাশে টিকে থাকতে পেরেছিলেন রাকেশ। সেই কাজের জন্য ১৯৮২ সালে 'হিরো অব দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন' পুরস্কার পান রাকেশ। উইং কম্যান্ডার পদ থেকে অবসরের পর ১৯৮৭ সালে হিন্দুস্তান অ্যারেনটিক লিমিটেড (হ্যাল)-এ চিফ টেস্ট পাইলট হিসেবে কাজ করেছেন। সহজ ছিল না সেই কাজ।

আরও পড়ুন: রাশিয়া পারেনি, চাঁদ জয় করে কিস্তিমাত ভারতের!

২০০১ সালে অবসর নেওয়ার পরে কুন্নুরে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন রাকেশ। প্রচারের আলো থেকে অনেকখানি দূরে। শুরু হয় আম জীবন। গল্ফ খেলা, যোগব্যায়াম, বই পড়ার মতো কাজকর্মেই সময় কাটে তার। মাঝেমধ্যেই ইসরো থেকে ফোন আসে তাঁর কাছে। নানা কাজে নানাবিধ পরামর্শ মেলে রাকেশের তরফে। তবে কুন্নুরের ওই শান্তির জীবন ছেড়ে আর প্রচারের ক্যাকাফোনিতে আসতে চান না এই নভোশ্চর। বরং নির্জনে, আড়ালে থেকেই উপভোগ করতে চান মহাকাশ গবেষণায় দেশের সাফল্য।

More Articles