তাঁকে দেখতে গিয়েই পদপিষ্ট হয়ে মৃত ১২১! কে এই হাথরাসের ভোলে বাবা?

Hathras stampede Bhole Baba: ভোলে বাবা নিজেকে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) প্রাক্তন কর্মচারী বলে দাবি করেন।

গত ১ দশকে ভারতবর্ষে 'বাবা'-দের সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। কথাটির হাতেনাতে প্রমাণ লুকিয়ে আছে দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন এলাকায় এই স্মিতহাস্য, বরাভয়মুদ্রামগ্ন বাবাদের পোস্টারেই। বিজেপির শাসনামলে রামদেবের মতো বড় 'বাবা' থেকে শুরু করে পাড়ার হঠাৎ গজিয়ে ওঠা 'বাবা', সকলেরই মূল উদ্দেশ্য একই। হিন্দুত্ববাদের প্রচার। এমন প্রচার আগেও ছিল, তবে সংখ্যায় কম। এই গজিয়ে ওঠা বাবাদের প্রতি আম জনতার ভক্তি কী বীভৎস রূপ নিতে পারে তার প্রমাণ দিল উত্তরপ্রদেশের হাথরাস। ধর্ষণকাণ্ডে ইতিমধ্যেই বিতর্কিত হাথরাস জেলায় এক ধর্মীয় সমাবেশে মর্মান্তিক পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় কমপক্ষে ১২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অগণিত। এই মানুষরা দেখতে এসেছিলেন একজন বাবাকে! ভোলে বাবা! মহাদেব, শিব নন তিনি রক্তমাংসের ভোলেবাবা।

কৃষ্ণের অষ্টোত্তর শত নাম, ভোলেবাবারও একাধিক নাম। কেউ বলেন নারায়ণ সাকার হরি, কেউ বলেন সাকার বিশ্ব হরি, কেউ বলে ভোলে বাবা। হরি-ভোলানাথ সব মিলে মিশে গেছে যে বাবার দেহে, তাঁরই আয়োজিত সৎসঙ্গে এসেই পদপিষ্ট হয়ে বেঘোরে মারা গেলেন শতাধিক মানুষ। কী আশ্চর্য, যিনি স্বয়ং নারায়ণ, ভোলে বাবা, পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পর সেই তিনিই পলাতক! পুলিশ ভোলে বাবার সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে। কে এই ভোলে বাবা?

আরও পড়ুন- সদগুরু থেকে রামদেব: ভেকধারী ‘বাবা’দের যেভাবে কাজে লাগায় বিজেপি

ভোলে বাবা ইটা জেলার পাটিয়ালি তহসিলের বাহাদুর গ্রামের বাসিন্দা। ভোলে বাবা নিজেকে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) প্রাক্তন কর্মচারী বলে দাবি করেন। দাবি করেন, ধর্মীয় উপদেশ দেবেন বলেই ২৬ বছর আগে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন। এই মুহূর্তে, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং দিল্লি সহ ভারত জুড়ে তাঁর লক্ষ লক্ষ অনুগামী রয়েছে।

তবে এই বাবা একটু 'হটকে'। এখন প্রায় সব বাবাই অনুগামী বাড়াতে, মতপ্রচার করতে সোশ্যাল মিডিয়াকে বেছে নেন। ভোলে বাবা কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকেন। কোনও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মেই তাঁর কোনও অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট নেই। তবে পাড়ায় পাড়ায়, বাড়িতে বাড়িতে, গ্রামের তৃণমূল পর্যায়ে তাঁর প্রভাব যথেষ্ট।

আরও পড়ুন- যোগীরাজ্যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা! হাথরসে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু শতাধিকের

উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে প্রতি মঙ্গলবার ভোলে বাবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে হাজার হাজার দর্শকের সমাগম হয়। এই সমাবেশের সময়, স্বেচ্ছাসেবকরা ভক্তদের জন্য খাবার ও পানীয় সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। যাই হয়ে যাক এই সৎসঙ্গ চলতে থাকে। এমনকী কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন বিধিনিষেধ সত্ত্বেও বিপুল জনসমাগম চালিয়ে গেছিলেন এই ভোলে বাবা।

থ্রি-পিস স্যুট পরে সৎসঙ্গের মঞ্চ থেকে তিনি ভক্তদের বাণী দেন। স্ত্রীর সঙ্গেই এই মতপ্রচার করেন ভোলে বাবা। তাঁর সৎসঙ্গকে বলা হয় 'মানব মঙ্গল মিলন সদ্ভাব অনুষ্ঠান'। রাজনীতির সঙ্গেও নারায়ণ হরির যোগাযোগ রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের অনেক বড় নেতাকেই তাঁর মঞ্চে দেখা গেছে।

More Articles