পাকিস্তানের গুপ্তচর! কে এই ভারতীয় ট্রাভেল ভ্লগার জ্যোতি মালহোত্রা?

Jyoti Malhotra Pakistani Spy: ২০২৩ সালে, জ্যোতি মালহোত্রা কমিশন এজেন্টদের মাধ্যমে ভিসা ব্যবহার করে প্রথমবার পাকিস্তান যান। সেই সময়ই এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশের সংস্পর্শে আসেন তিনি।

পেশায় ট্রাভেল ভ্লগার। 'ট্র্যাভেল উইথ জো' নামে চ্যানেল রয়েছে তাঁর। নেটিজেনদের কাছে খুবই পরিচিত মুখ। তবে নেপথ্যে রয়েছে অন্য এক ছবি। অভিযোগ, হরিয়ানার ট্রাভেল ভ্লগার জ্যোতি মালহোত্রা পাকিস্তানের গুপ্তচর। পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের ভারতের নানা সংবেদনশীল তথ্য পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে জ্যোতিকে। ভারতের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ভারতের মাটিতে গুপ্তচর হিসেবে কাজ করার জন্য ‘একজন সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছিল’ জ্যোতিকে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘর্ষের সময় জ্যোতি এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন ঠিকই কিন্তু ভারতের প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত কোনও তথ্য তাঁর কাছে ছিল না।

জ্যোতির ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল, 'travelwithjo1'-এর ফলোয়ার ১.৩৭ লক্ষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে "নরম্যাডিক লিও গার্ল। ট্র্যাভেলার। হরিয়ানভি + পাঞ্জাবি মডার্ন গার্ল উইথ ওল্ড আইডিয়াস" বলে পরিচয় দেন জ্যোতি। সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই জানা যায় বাইক চালানো এবং একা ঘুরতে যাওয়া তাঁর বিশেষ পছন্দের। জ্যোতি মালহোত্রা পাকিস্তান, ভুটান, ইন্দোনেশিয়া এবং চিন সহ বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন।

আরও পড়ুন- যে ১১টি শর্তে পাকিস্তানকে ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিল আইএমএফ

হিসারের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, জ্যোতি 'স্পন্সরড' সফরে একাধিকবার পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। এমনকী পহেলগাঁও হামলার আগেও তিনি পাকিস্তানে গেছিলেন। পুলিশ জানাচ্ছে, ইদানীংকালের যুদ্ধে কেবল আর সীমান্তে লড়াই হয় না। পাকিস্তানের গুপ্তচররা তাদের বক্তব্য প্রচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রভাবশালীদের ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। জ্যোতি তেমনই একজন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, জ্যোতি মালহোত্রা একবার চিনেও গেছিলেন। মজার বিষয় হচ্ছে, জ্যোতি যা রোজগার করেন বলে জানা গেছে, তাঁর এই নানা দেশে ভ্রমণের খরচ সেই আয়ের চেয়ে ঢের বেশি। জ্যোতির উপার্জনের আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণ করছেন ভারতের গোয়েন্দারা। জানা যাচ্ছে, ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সময় তিনি পাকিস্তানের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।

পুলিশের অভিযোগ, জ্যোতি মালহোত্রা নিয়মিত পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম এবং স্ন্যাপচ্যাটের মাধ্যমে সংবেদনশীল তথ্য ভাগ করে নিতেন। জ্যোতি মালহোত্রার ইউটিউব চ্যানেলে তাঁর পাকিস্তান সফরের অসংখ্য ভিডিও রয়েছে, যার শিরোনাম 'ইন্ডিয়ান গার্ল ইন পাকিস্তান', 'ইন্ডিয়ান গার্ল এক্সপ্লোরিং লাহোর' এবং 'ইন্ডিয়ান গার্ল অ্যাট কাটাস রাজ টেম্পল'। তদন্তকারীরা বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় পাকিস্তানের ইতিবাচক ভাবমূর্তি উপস্থাপন করার দায়িত্ব জ্যোতিকে দেওয়া হয়েছিল প্রাথমিকভাবে। সন্দেহ এড়াতে জ্যোতি মালহোত্রা একজন পাক কর্মীর নাম 'জট রানধাওয়া' নামে সেভ করেছিলেন বলে জানা গেছে।

 

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি পুলিশকে এই বিষয়ে গোপন তথ্য দেওয়ার পরই, জ্যোতি মালহোত্রাকে গ্রেফতার করা হয়। জ্যোতি যে পাকিস্তানিদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখছিলেন বলে জানা গেছে, তাঁদের মধ্যে আছেন এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশও। দানিশ নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের একজন কর্মচারী। গত বছর দানিশের সঙ্গে ভারতে পাকিস্তান হাইকমিশনে একটি বিশেষ ইফতার নৈশভোজেও অংশ নিয়েছিলেন জ্যোতি। মাস দুয়েক আগে জ্যোতি পাকিস্তান থেকে একাধিক ভিডিও এবং রিল পোস্ট করেছিলেন। লাহোরের আনারকলি বাজার, কাটাস রাজ মন্দির এবং সারা দেশে বাসে চেপে সফরের নানা দৃশ্য দেখিয়েছিলেন তিনি। ভারতীয় ও পাকিস্তানি সংস্কৃতির তুলনা এবং পাকিস্তানি খাবারের গল্পও করেছেন তিনি।

২০২৩ সালে, জ্যোতি মালহোত্রা কমিশন এজেন্টদের মাধ্যমে ভিসা ব্যবহার করে প্রথমবার পাকিস্তান যান। সেই সময়ই এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশের সংস্পর্শে আসেন তিনি। দানিশই তাঁকে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। গত ১৩ মে, ভারত গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত থাকার অভিযোগে দানিশকে বহিষ্কার করে। সাম্প্রতিক পাক সফর শেষে জ্যোতি ভারতে ফিরে এসেও পাক গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন বলে অভিযোগ। হরিয়ানা ও পঞ্জাব জুড়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সংবেদনশীল গতিবিধি এবং অবস্থানের তথ্য তিনি পাকিস্তানকে জানিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পাকিস্তানে তিনি যে দু'বার গেছেন, সেখানে এহসান-উর-রহিমের সহযোগী আলি আহওয়ানের আতিথেয়তায় তিনি ছিলেন বলে জানা গেছে। আলির মাধ্যমেই শাকির এবং রানা শাহবাজ সহ পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার অনেকের সঙ্গে জ্যোতির পরিচয় বলে জানা গেছে। এমনকী জ্যোতি মালহোত্রার কাছে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ফোন নম্বরও ছিল গোপনে রক্ষিত।

জানা যাচ্ছে, এই বছরই, পহেলগাঁও হামলার ৩ মাস আগে, জ্যোতি কাশ্মীরও যান। ডাল লেক এবং শ্রীনগর-বানিহাল রেলপথ থেকে ভিডিও আপলোড করেছিলেন। পাকিস্তানের কোনও একজন কর্তার (সম্ভবত দানিশই) সঙ্গে জ্যোতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল এবং জ্যোতি তাঁর সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার বালিতেও গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

জ্যোতি ও দানিশ

আরও পড়ুন- পাকিস্তানের ড্রোন হামলায় অগ্নিদগ্ধ! পঞ্জাবের প্রৌঢ়ার মৃত্যুতে উঠছে যে প্রশ্ন

উল্লেখ্য, পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ট্রাভেল ভ্লগার জ্যোতি মালহোত্রাকে গ্রেফতার করার অনেক আগেই একজন সাধারণ সচেতন নাগরিক জ্যোতির সন্দেহজনক কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এক বছর আগেই, ভারতের একজন সাধারণ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী জ্যোতির সন্দেহজনক আচরণের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। ২০২৪ সালের মে মাসে, কপিল জৈন নামে এক ব্যক্তি এক্স-এ জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকে জ্যোতি মালহোত্রার উপর নজরদারি করার জন্য সতর্ক করেন। পাকিস্তান এবং কাশ্মীর ভ্রমণকে সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন তিনি।

 

জ্যোতির বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে ভারতের গোয়েন্দাদের বিশ্বাস, এই মামলায় আরও ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইতিমধ্যেই জ্যোতিসহ ছয়জন অভিযুক্তের কথা জানা গেছে।

More Articles