মার্কিন গোয়েন্দা দফতরের ভার, কেন প্রাক্তন ডেমোক্র্যাট তুলসিকে এত ভরসা ট্রাম্পের?
Tulsi Gabbard: তুলসি গ্যাবার্ডকে দেশের গোয়েন্দা বিভাগের নতুন অধিকর্তা তথা ডিরেক্টর জেনারেল অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স (DNI) নির্বাচন করেছেন ট্রাম্প।
মার্কিন জনগণের ভোটে ব্য়াপক জয় পেয়ে দ্বিতীয় বার হোয়াইট হাউজের দখল নিতে চলেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিমধ্যেই নিজের মন্ত্রিসভা তৈরির কাজও প্রায় সেরে ফেলেছেন রিপাবলিকান নেটা ট্রাম্প। সেই মন্ত্রিসভায় যেমন রয়েছে এলন মাস্কের মতো সদস্য, তেমনই জায়গা করে নিয়েছেন এককালে প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাট দলের সমর্থক তুলসি গ্যাবার্ডও। আপাতত দুনিয়া মজেছে সেই আলোচনাতেই। গ্যাবার্ডকে দেশের গোয়েন্দা বিভাগের নতুন অধিকর্তা তথা ডিরেক্টর জেনারেল অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স (DNI) নির্বাচন করেছেন ট্রাম্প। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি গুপ্তচর সংস্থার তত্ত্বাবধানের ভার থাকতে চলেছে তাঁর হাতেই।
কার্যত কংগ্রেসের প্রথম হিন্দু সদস্য তুলসি। উল্লেখ্য যে মোদির বন্ধু হিসেবে বেশ খ্যাতি রয়েছে এই তুলসি গ্যাবার্ডের। আর ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির বন্ধুত্বের গল্প তো কারওরই অজানা নয়। গোয়েন্দা প্রধানের মতো জরুরি দায়িত্বের জন্য সেই মোদির পছন্দের ব্যক্তিকেই বেছে নিলেন ট্রাম্প। আর তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে চর্চা।
আরও পড়ুন: বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি এবার মার্কিন প্রশাসনে! যেভাবে বিশ্ব দখলের পথে এগোচ্ছেন মাস্ক
তুলসির নাম দেখে অবশ্য তাঁকে অনেকেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভেবে ভুল করে ফেলেন। কিন্তু আদতে ভারতের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই তাঁর। তবে মার্কিন কংগ্রেসের একমাত্র হিন্দু সদস্য হওয়ায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত সমাজে বেশ জনপ্রিয় তুলসি। একটা সময় তিনি ছিলেন কট্টোর ডেমোক্র্যাট। তবে ২০২২ সালে প্রেসিডেন্টো জো বাইডেনের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষী কার্যকলাপের অভিযোগে ডেমোক্র্যটদের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেন। যদিও তারও আগে ২০২০ সাল নাগাদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে ছিলেন তুলসি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পার্টির অন্দরেই পিছিয়ে পড়েন তুলসী। এগিয়ে যান বাইডেন।
২০২২ সালে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে শুরু হয়েছিল জল্পনা। এ বছর নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে তুলসির। গত অগস্টে ফ্লরিডায় ট্রাম্পের প্রাসাদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রচার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানেও হাজির ছিলেন তুলসি। প্রেসিডেন্ট ভোটে রানিং মেট হিসেবে তাঁকে বেছে নিতে পারেন ট্রাম্প, এমন কথাবার্তাও ঘুরছিল আমেরিকা জুড়ে। তবে, শেষ পর্যন্ত সেই রানিং মেট হওয়ার দৌড়ে পৌঁছতে পারেননি তুলসি। তার বদলে বরং গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বই এসে জুটল তুলসির কাঁধে।
১৯৮১ সালের ১২ এপ্রিল আমেরিকার সামোয়ার এলএ-তে জন্ম তুলসির। তাঁর যখন মাত্র দু'বছর বয়স তখন হাওয়াইতে চলে যায় তাঁর পরিবার। পরিবেশ নিয়ে ছোটবেলা থেকেই কাজ করতে চাইতেন তুলসি। সেখান থেকেই হেলদি হাওয়াই কোলিশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করেন কিশোরী বয়সেই। ২০০৯ সালে হাওয়াই পেসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে B.S.B.A শেষ করেন। তাঁর বাবা মাইক গ্যাবার্ড প্রাথমিক ভাবে ছিলেন রিপাবলিকান। পরে ডেমোক্র্যাট দলে যোগ দেন ও হাওয়াইয়ের সেনেটর হন। তুলসি বিয়ে করেছেন পেশায় সিনেমাটোগ্রাফার আব্রাহাম উইলিয়ামসকে । প্রায় দু'দশক আর্মি ন্যাশনাল গার্ডে কাজ করেছেন তুলসী, মোতায়েন ছিলেন ইরান ও কুয়েতে। ইরাকি ফ্রিডম থ্রি-র যুদ্ধে তাঁর কৃতিত্বর জন্য পেয়েছেন কমব্যাট মেডিক্যাল ব্যাজ। তবে অতীতের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের অধিকর্তাদের মতো সেই ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ অভিজ্ঞতা নেই। সরকারে কোনও শীর্ষস্থানীয় পদেও আগে কখনও ছিলেন না তিনি। কিন্তু হাউজ হোম ল্যান্ড সিকিওরিটি কমিটিতে দু'বছর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।
২০২১ সালে হাওয়াইয়ের প্রতিনিধি পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তুলসি কিন্তু সে সময় ইরাকের যুদ্ধে চলে যেতে হয় তাঁকে। তবে পরে তিনি কংগ্রেসে ফের নির্বাচিত হয়ে হাওয়াইয়ের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনিই ছিলেন হাউজের প্রথম হিন্দু সদস্য, যিনি ভগবদ্গীতার উপর হাত রেখে শপথ নেন। একই সঙ্গে কংগ্রেসে নির্বাচিত প্রথম মার্কিন সামোয়ানও ছিলেন তিনি। ২০২২ সালে বাইডেনের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ এনে ডেমোক্র্যাটিকদের সঙ্গ বর্জন ও ট্রাম্পের পক্ষপাতিত্বের শেষপর্যন্ত ফলাফল পেয়েছেন তুলসি। যুদ্ধক্ষেত্রে এতবছরের অভিজ্ঞতাও যে তাঁকে এই গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্ব পেতে সাহায্য় করেছে, তা বলাই বাহুল্য। এর আগে ইউক্রেনকে মার্কিনি সাহায্যের বিরুদ্ধে একাধিক বার সরব হতে দেখা গিয়েছে তুলসিকে। ট্রাম্পও একই রকম ভাবে ইউক্রেনে আমেরিকার সাহায্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন ক্ষমতায় এসেই। কার্যত এই সুযোগের জন্য নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তুলসি।
আরও পড়ুন: ভোটে জেতানোর পুরস্কার! ট্রাম্পের প্রশাসনে যে দায়িত্ব পেলেন এলন মাস্ক
তুলসিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর পরে আমেরিকার ৫৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, 'আমি জানি যে আমাদের গোয়েন্দা বিভাগে ভয়ডরহীন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসবেন তুলসি। যে ভয়ডরহীন মনোভাব তাঁর উজ্জ্বল কেরিয়ারের পরিচয় দেয়।' সেইসঙ্গে ট্রাম্প এ-ও বলেন, 'দু'দশকের বেশি সময় ধরে আমাদের দেশের জন্য় এবং প্রত্যেক আমেরিকানের জন্য লড়াই করেছেন তুলসি।' এখন দেখার আমেরিকার গোয়েন্দা প্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব কতটা দক্ষতার সঙ্গে পালন করতে পারেন তুলসি? আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।