ভোট হলে ক্ষমতায় আসবে কে? যা উঠে এল বাংলাদেশের সমীক্ষায়

Bangladesh Election: নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে জাতীয় নির্বাচন 'পিছিয়ে যাবে'।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালে একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পায় আওয়ামী লীগ সরকার। মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই সেই সরকারের পতনও হয়। তারপর থেকে ক্ষমতায় রয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বহুবার বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার দাবি তুলেছে। চাপের মুখে পড়েই সরকারকে আশ্বাস দিতে হয়েছে বলেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে জনমত সমীক্ষা চালিয়েছে, ইনভিশন কনসালটিং বাংলাদেশ। এই সমীক্ষায় ব্রেন এবং মুক্তচিন্তার প্ল্যাটফর্ম 'ভয়েস ফর রিফর্ম' সহযোগিতা করেছে। তারা তাদের সমীক্ষার রিপোর্টে তুলে ধরেছে বাংলাদেশের নির্বাচনের ফলাফলের সম্ভবনা। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, দ্রুত ভোট চাইছেন বাংলাদেশের জনগণ।

ইনভিশন কনসালটিং বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন গবেষণা এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সংস্থা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচনী দৃষ্টিভঙ্গি কী, তারা কবে নির্বাচন চান, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সরকারের কাছ থেকে তাদের কী প্রত্যাশা, তারা তাকে ভোট দিতে চান, ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ এই সব কিছু উঠে এসেছে জনমত সমীক্ষায়। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ১০,৬৯৬ জন সম্ভাব্য ভোটারের উপর পরিচালিত হয়েছে এই সমীক্ষা।

প্রত্যাশা পূরণ করতে পারল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার?

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি জানিয়েছেন ৫৫.১% ভোটার। আর ৪২.৩৩% ভোটারের মতামত, প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। ২.৬২% ভোটার জানিয়েছেন সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়ে ৫৮.২% ভোটার জানিয়েছেন প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে, ৪০.৩৩% ভোটার বলেছেন আংশিকভাবে পূরণ হয়েছে। ১.৪% ভোটার বলেছেন সম্পূর্ণরূপে পূরণ হয়েছে। ৭৪.২১% ভোটার বলেছেন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হয়েছে, ২৪.৩৪% ভোটার বলেছেন এই ক্ষেত্রে আংশিকভাবে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে এবং ১.২% ভোটার বলেছেন সম্পূর্ণরূপে পূরণ হয়েছে। ৪১% উত্তরদাতা জানিয়েছেন ৬ মাসে চাঁদাবাজি অনেকটাই বেড়েছে, ২৯.৮% ভোটার বলেছেন চাঁদাবাজি কমেছে, ১৭.৮% ভোটাররা বলেছেন আগের মতোই চাঁদাবাজি চলছে এবং ১১.৪% ভোটার কোনও মন্তব্য করেননি।

অধিকাংশ ভোটাররাই স্পষ্ট জানিয়েয়েছেন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, সরকারি পরিষেবায় স্বচ্ছতা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা আনার মতো বিষয়গুলিতেই তাদের মূল মাথাব্যথা। ৭১% ভোটার জানাচ্ছেন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। ৫২% ভোটার জানাচ্ছেন সরকারকে দ্রুত গতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। অন্যদিকে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি চান ৪০% ভোটার, সরকারি পরিষেবায় দুর্নীতি বন্ধ হোক জোর গলায় বলছেন ৩৩% ভোটার, ২২% ভোটার জানাচ্ছেন দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করতে হবে তড়িঘড়ি, সরকারি সেবায় প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি চান ২১% ভোটার এবং ১৯% ভোটার জানাচ্ছেন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

কবে হবে নির্বাচন?

এতদিন অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময় নিয়ে নানারকম বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। চাপের মুখে পড়েই সরকারকে আশ্বাস দিতে হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ডিসেম্বর বা জুনে নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৩১.৬% ভোটাররা ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন চাইছেন এবং ২৬.৫% ভোটার ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন চাইছেন। উল্লেখ্য, শহরাঞ্চলের ২৩.৯৫% ভোটাররা এবং গ্রামাঞ্চলের ৩৪.৪১% ভোটাররা চাইছেন ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যেই নির্বাচন হোক।

৩৪.৩% ভোটার কাকে ভোট দেবেন তা জানাননি। বাকি ৬৫.৭% ভোটারের মতামতে দেখা গিয়েছে, ৪১.৭% ভোট পাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), ৩১.৬% ভোট পাবে জামায়ত ইসলামী, ১৩.৯% ভোট পাবে আওয়ামী লীগ, ৫.১% ভোট পাবে ছাত্র নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দল, আর ৭.৬% ভোট পাবে অন্যান্যরা। বরিশাল (৩১.৬৬%), চট্টগ্রাম (৪৭.৮২%), ঢাকা (৪৪.৭১%), ময়মনসিংহ (৪৪.৭১%), রাজশাহী (৪২.৬৮%), সিলেটে (৫১.০২%) সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে, খুলনায় (৪৬.৩২%) এবং রংপুরে (৪৪.৯১%) জামায়ত ইসলামী এগিয়ে রয়েছে। এই ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি এগিয়ে থাকবে এবং জমায়েত ইসলামী তাদের প্রধান বিরোধী দল হতে পারে। নতুন ছাত্র নেতৃত্বাধীন দল সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে চট্টগ্রামে (৭.৩৫%)। তবে প্রার্থী তালিকা নির্বাচনের ফলে বদলও আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভোটারদের কাছে দলের চেয়ে প্রার্থী বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ২১% ভোটার জানিয়েছেন তাঁরা দল দেখে ভোট দেন। আবার ৩৮.১% ভোটার মত দিয়েছেন তাঁদের কাছে প্রার্থী গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া দল এবং প্রার্থীর বাইরে তৃণমূল রাজনীতি, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে আদর্শিক অবস্থানের বিষয়গুলিও প্রভাব ফেলতে পারে। ২৬.৬% ভোটার তৃণমূল রাজনীতি, ২০.৫% ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, ১৬.৪% জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে আদর্শিক অবস্থানকে গুরুত্ব দেবেন বলে মতামত দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, সেখানে সব দলের মধ্যে ঐক্য দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নিজস্ব রাজনীতি আর কৌশলে বেশি জোর দিতে দেখা গিয়েছে। বিএনপি শুরু থেকেই দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এসেছে। অন্যদিকে, জামায়ত ইসলামী চাইছে, সংস্কার শেষ হলে 'যৌক্তিক সময়ের' মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচনের সময় নিয়ে বাকি দলগুলোর কেউ জামায়ত ইসলামীর দাবি আবার কেউ বিএনপির দাবিগুলিই সামনে রাখছে। কিন্তু গণপরিষদ নির্বাচন হলে জাতীয় নির্বাচন পেছোতে হবে কিনা সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছিলই। সম্প্রতি বিবিসি-র একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ, নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে জাতীয় নির্বাচন 'পিছিয়ে যাবে'। ফলে জাতীয় সংসদ, গণপরিষদ কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে সেই উত্তর এখনও অধরা।

More Articles