'ভূমিপুত্রে' আস্থা নেই? মেদিনীপুর থেকে কেন দিলীপ ঘোষকে প্রার্থী করল না বিজেপি?
Dilip Ghosh BJP: জনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বের শিকার হয়েছেন দিলীপ।
জন্ম মেদিনীপুরে, পড়াশোনা মেদিনীপুরে, ভোটে লড়ে জেতাও মেদিনীপুরে। তবু সেই মানুষটিকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলা হলো সোজা উল্টোপিঠের এক আসনে। মেদিনীপুর থেকে সোজা বর্ধমান-দুর্গাপুর! দিলীপ ঘোষে কি আস্থা রাখতে পারছে না বিজেপি? পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুরে দিলীপ ঘোষের জন্ম। ঝাড়গ্রামে তাঁর পড়াশোনা। গতবার, অর্থাৎ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর আসন থেকে জিতেছিলেন দিলীপ ঘোষ। তখন দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘আমি এখানকার ভূমিপুত্র।’’ কিন্তু ভূমিপুত্রকে ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে বিজেপি বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে প্রার্থী করেছে। দিলীপ এখন জন্মভূমি থেকে সোজা কর্মভূমিতে। কিন্তু কেন বিজেপির এই সিদ্ধান্ত?
১৯৮৪ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্য হন দিলীপ ঘোষ। সেখান থেকেই রাজনৈতিক জীবন শুরু। ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মী হিসাবে আন্দামানে কাজ করেছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে খড়গপুর সদর কেন্দ্র থেকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জ্ঞান সিং সোহনপালকে পরাজিত করে বিধায়ক নির্বাচিত হন দিলীপ। তারপর ২০১৯ সালে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। মেদিনীপুরে এত গভীর ভিত থাকা সত্ত্বেও তাঁর মেদিনীপুর আসন দিয়ে দেওয়া হলো অগ্নিমিত্রা পালকে। আরএসএস প্রচারক হিসেবে কাজ করার সময়ে অখণ্ড বর্ধমান জেলাতেই দায়িত্বে ছিলেন দিলীপ ঘোষ। মেদিনীপুরে এবারও প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন দিলীপ শেষমেশ বলছেন, ‘‘বীজ আমি ছড়িয়ে এসেছি। বিজেপি ওই আসনে জিতবেই।’’ বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল ওই বীজে ফসল ফলাতে পারবেন আদৌ?
আরও পড়ুন- বিজেপিকে হারানো যায়, যেভাবে প্রমাণ করে দিল জেএনইউয়ের ছাত্রছাত্রীরা
দিলীপ শিবিরের লোকজন বলছেন মেদিনীপুর কেন্দ্রের সবক’টি বিধানসভা আসনেই নিয়মিত যাতায়াত করতেন দিলীপ। এবারও ওই আসনেই প্রার্থী হবেন ধরে নিয়ে গত এক বছরে এই এলাকার দেড় হাজার গ্রামেও ঘুরে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই হোমওয়ার্ক কাজেই এল না! সম্পূর্ণ নতুন আসনে এসে কেঁচে গণ্ডুষ করতে হবে তাঁকে। বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনের মধ্যে সাতটি বিধানসভা আসন আছে। বর্ধমান দক্ষিণ, বর্ধমান উত্তর, দুর্গাপুর পূর্ব, দুর্গাপুর পশ্চিম, মন্তেশ্বর, ভাতার আর গলসি। এর মধ্যে মাত্র একটি বিধানসভাই বিজেপির দখলে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুর পশ্চিম আসনে জিতেছিলেন বিজেপির লক্ষ্মণচন্দ্র ঘড়ুই।
দিলীপ বলছেন বটে, গোটা বাংলাই তাঁর এলাকা, 'আমি যেখানেই যাই, জেতার জন্য যাই,’ কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বের শিকার হয়েছেন দিলীপ। তাঁর জয় দিয়েই কিন্তু বাংলায় বিজেপির উত্থানের শুরু। তিনি সংগঠনকে তিল তিল করে গড়লেও এবার প্রার্থী বাছাইয়ে শুভেন্দু অধিকারীর লবিই কাজ করেছে। বিজেপিরই একাংশ বলছে, দিলীপ ঘোষের বদলে অন্য কাউকে মেদিনীপুর আসনে প্রার্থী করার জন্য কলকাঠি নেড়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারীই। শোনা গিয়েছে, প্রথমে প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষকে ওই আসনে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন শুভেন্দু কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাতে আমল না দেওয়াতে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ অগ্নিমিত্রা পালকে প্রার্থী করা হলো। অগ্নিমিত্রা পাল আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক।
অন্যদিকে দিলীপ ঘোষের হয়ে সওয়াল করেছিলেন সুকান্ত মজুমদার। কিন্তু তাঁর ভূমিকা শুভেন্দুর দাপটের কাছে নিতান্তই ফিকে! অগত্যা ভূমিপুত্র দিলীপ ঘোষকেও মাটি ছেড়ে আসতে হলো বর্ধমান-দুর্গাপুরের মতো আসনে যেখানে মাস দুয়েকে তাঁকে নিজের জায়গা তৈরি করতে হবে। প্রতিটি বিধানসভা এলাকাতে এখন রাত কাটানোর ভাবনাচিন্তা করছেন দিলীপ ঘোষ। এই আসনে দিলীপ ঘোষের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের প্রার্থী কীর্তি আজাদ। আর বর্ধমান দুর্গাপুর থেকে সিপিএমের হয়ে লড়াই করছেন সুকৃতী ঘোষাল। রাত্রিবাস করলেই কি দু'মাসে একটা লোকসভা আসনকে বোঝা যায়? সাধারণ মানুষের নিকট হওয়া যায়?