৩৪০০% মানুষ চাইছেন লাক্ষাদ্বীপ যেতে! মোদির সৈকত ভ্রমণে লুকিয়ে কী রহস্য?

Lakshadweep Maldives Row : মলদ্বীপ পর্যটনের উপর অনেক বেশিই নির্ভর করে এবং সেই আয়ের একটি বড় অংশই ভারত থেকে আসে।

মোদি লাক্ষাদ্বীপ গেলেন। নীল জল সমুদ্র ছুঁয়ে তিনি ঢেউ তুলে দিলেন মলদ্বীপের মনে। এতকাল ধরে মুম্বইয়ের সেলেবদের বিশ্বস্ত উইকেন্ড ডেস্টিনেশন ছিল মলদ্বীপ। হেন তারকা নেই যিনি জীবনে একবার মলদ্বীপ যাননি। মোদি লাক্ষাদ্বীপ গিয়ে দৃশ্য নন্দন সব ছবি তুলেছেন। সেই সব পোস্ট হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সোজা রাজনৈতিক-কূটনৈতিক দ্বন্দ! মলদ্বীপের পর্যটনকে শেষ করতেই নাকি লাক্ষাদ্বীপকে তুএল ধরার চেষ্টা করছেন মোদি! খুব অন্যায় ভাবা, তাও নয়! অন্তত পরিসংখ্যানের দিক থেকে তো একেবারেই নয়। মেকমাইট্রিপ বলেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক লাক্ষাদ্বীপ সফরের ফলে কাতারে কারাতে মানুষ লাক্ষাদ্বীপ ঘোরার পরিকল্পনা করছেন! প্রাকৃতিক এই দ্বীপগুলিতে পর্যটনের প্রতি যে মানুষের উৎসাহ হঠাৎ করেই বেড়েছে তার প্রমাণ হচ্ছে, কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলে ভ্রমণের জন্য মেকমাইট্রিপে প্রায় ৩৪০০% মানুষ বেশি সার্চ করেছেন।

মলদ্বীপের রাজনীতিবিদরা প্রধানমন্ত্রী মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফরকে ঘিরে নানা মন্তব্য করার পরেই বিতর্ক চরমে ওঠে। পরে মলদ্বীপ সরকার প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে এসব অবমাননাকর মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে এই বলে যে এই মতামত মালে সরকারের মতামত নয়।

আরও পড়ুন- বলিউডের মন্দারমণি! কেন সব তারকাই মলদ্বীপ ঘুরতে যান?

বিতর্ক শুরু হতেই ভারতীয় অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি EaseMyTrip, ঘোষণা করে যে তারা মলদ্বীপের ফ্লাইটের সমস্ত বুকিং স্থগিত করেছে। EaseMyTrip-এর প্রতিষ্ঠাতা নিশান্ত পিত্তি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জানান, দেশের সঙ্গে সংহতি জানাতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আসলে বিতর্কের এই সূত্রপাত হয় ৪ জানুয়ারি। প্রধানমন্ত্রী মোদি ৪ জানুয়ারী তাঁর লাক্ষাদ্বীপ সফরের ছবি পোস্ট করেন। লাক্ষাদ্বীপের আদিম সমুদ্র সৈকতে প্রধানমন্ত্রীর সেই অবসর যাপন, অ্যাডভেঞ্চার যাপনের ছবি স্বাভাবিকভাবেই ভাইরাল হয়ে যায়। সাদা বালির উপর হাঁটার ছবি, আরামকেদারায় বসে থাকার ছবি, স্নরকেলিংয়ের ছবি, প্রবাল প্রাচীর এবং সামুদ্রিক প্রাণীদের দৃশ্যের ছবি পোস্ট করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফর ছিল মূলত তাঁর দক্ষিণ ভারত সফরের অংশ। তিনি কেরল এবং তামিলনাড়ু সফর করেন এবং তারপর লাক্ষাদ্বীপে পৌঁছন। সেখানের ছবিতে তিনি যে মলদ্বীপের তুলনা করেছেন তেমনও না। কিন্তু লাক্ষাদ্বীপের প্রশংসাতেই মলদ্বীপের আঁতে ঘা! লাক্ষাদ্বীপ তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত পর্যটনকেন্দ্র। এই দ্বীপপুঞ্জের সুন্দর দৃশ্যের প্রশংসা মলদ্বীপের পরিবর্তে লাক্ষাদ্বীপে অবকাশ যাপনের জন্য মানুষকে আকর্ষণ করতে পারে বলেই মনে হয়েছে মলদ্বীপের।

মলদ্বীপের তিন কর্মকর্তা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিন্দা করেন। ফলে ভারতীয় নাগরিক এবং সেলিব্রিটিরা বয়কট মলদ্বীপের ডাক দেন! পর্যটন যে দেশের আয়ের অন্যতম বড় উত্স, সেখানেই বয়কটের ডাক মানে সর্বনাশ! মলদ্বীপের তিনজন আধিকারিক মোদিকে 'ক্লাউন’, 'সন্ত্রাসবাদী' এবং 'ইজরায়েলের পুতুল' বলে উল্লেখ করেছেন। মলদ্বীপ প্রশাসন পরিস্থিতি সামলাতে যুব কর্মসংস্থান, তথ্য ও শিল্প মন্ত্রকের উপমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছে। একটি বিবৃতিতে মলদ্বীপ সরকার জানিয়েছে তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় করা এসব 'অপমানজনক' মন্তব্য সম্পর্কে সচেতন কিন্তু এই 'মতামতগুলি ব্যক্তিগত', সরকার এমন মনে করে না।

আসলে মলদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুইজু চিনে পাঁচ দিনের সফরে যাবেন। গত অক্টোবরেই নির্বাচনে জয়লাভের পর রাষ্ট্রপতি হিসাবে তিনি প্রথম চিনে যাবেন। মুইজু যে চিনপন্থী তা বেশ স্পষ্ট। ফলে নয়া দিল্লি এবং বেইজিং দ্বন্দ্বে মলদ্বীপের রাষ্ট্রপতির এমন চিনভ্রমণ পরিকল্পনাকে মোটেই সুনজরে দেখা হয়নি তা বেশ স্পষ্ট। সফরের সময় চিনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করা এবং বাণিজ্য ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য চুক্তি সই করারও কথা তাঁর। একদিকে মুইজু বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক পোক্ত করতে আগ্রহী, অন্যদিকে ভারত মহাসাগরের এই ছোট্ট দ্বীপপুঞ্জ, যা ভারতের পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল, তার প্রতিবেশীকে এড়িয়ে বাঁচারও সামর্থ নেই।

আরও পড়ুন- রাম মন্দির উদ্বোধন নিয়ে মোদির পাশে নেই বহু হিন্দুত্ববাদীই! কেন?

মলদ্বীপ পর্যটনের উপর অনেক বেশিই নির্ভর করে এবং সেই আয়ের একটি বড় অংশই ভারত থেকে আসে। মলদ্বীপের পর্যটনের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত থেকেই সবচেয়ে বেশি পর্যটক গেছেন মলদ্বীপে।

ভারতীয় পর্যটকরা ২০২৩ সালে মলদ্বীপে ২০৯,০০০-এরও বেশিবার গিয়েছেন। মলদ্বীপের পর্যটনের ১১% ভারতীয়দের দান। রাশিয়াও রয়েছে কাছাকাছিই এবং চিনও খুব বেশি পিছিয়ে নেই। মোট ১০% পর্যটক চিনের। কিন্তু মোদির অপমানের পর বলিউড অভিনেতা থেকে শুরু করে ক্রিকেট খেলোয়াড় পর্যন্ত সমস্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিরাই মলদ্বীপের বদলে লাক্ষাদ্বীপের দিকে ঝুঁকেছেন! #ChaloLakshadweep টুইটারে ট্রেন্ড। বলিউড তারকা অক্ষয় কুমার তো মোদির অনুরাগী, দেশাত্মবোধ তাঁর চরম। অক্ষয় তো লিখেও ফেলেছেন, “আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুব্যবহার করি। কেন আমরা এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘৃণা সহ্য করব? আমি মালদ্বীপে বহুবার গিয়েছি এবং সবসময়ই প্রশংসা করেছি, তবে আত্মমর্যাদা প্রথমে।" তাই তারকারা অনেকেই #IndianIslands খুঁজে বের করে পর্যটন বিকাশের জোর দিয়েছেন। মলদ্বীপ এখন শ্যাম রাখি না কুল দ্বন্দ্বে পড়ে কোন পথে এগোয়, তাই দেখার।

More Articles