আর সহজে মিলবে না মোবাইল সংযোগও! সিমকার্ডে কেন নিষেধাজ্ঞা সরকারের?
Bulk Sim Card Banned: ছাপানো আধারকার্ডের অপব্যবহার বন্ধ করতে আধারের QR কোড স্ক্যান করে তথ্য সংগ্রহ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।
গুচ্ছ গুচ্ছ সিমকার্ডের দিন শেষ। 'বাল্ক কানেকশন'-এর ইতি ঘটাল নরেন্দ্র মোদি সরকার। সিমকার্ড ডিলারদের এবার পুলিশ ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক। জালিয়াতি রুখতে তাই একাধিক সংযোগও বন্ধ করে দিল কেন্দ্র। নতুন নিয়মে এখন ডিলারদের মোবাইল সিম কার্ডের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন করা বাধ্যতামূলক। এখন সমস্ত পয়েন্ট-অফ-সেল ডিলারদের জন্যও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়ে দিয়েছেন, নিয়ম না মানলে একধাক্কায় ১০ লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হবে। কিন্তু হঠাৎ সিমকার্ডের প্রতি এমন বিধি নিষেধ কেন? সরকারের তরফে যে হিসেব দেওয়া হচ্ছে সিম অব্যবস্থার, তা আঁতকে ওঠার মতোই!
টেলিকম মন্ত্রী বলছেন, সঞ্চার সাথী পোর্টাল চালু হওয়ার পর থেকে সরকার জালিয়াতি করে নেওয়া মোবাইল নম্বরের যা সংখ্যা মিলেছে তা চমকে দেওয়ার মতো। ভুয়ো পদ্ধতিতে ৫২ লাখ সংযোগ নেওয়া হয়েছে দেশে! এই সমস্ত মোবাইল সংযোগই নিষ্ক্রিয় করেছে সরকার। শুধু তাই না, সরকার মোবাইল সিমকার্ড বিক্রির সঙ্গে জড়িত ৬৭,০০০ ডিলারকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। ২০২৩ সালের মে মাস থেকে এখনও অবধি ৩০০ সিম কার্ড ডিলারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সিমকার্ড রেজিস্ট্রেশন আগেও হতো, তাহলে ৫২ লক্ষ সংযোগ কীভাবে ঘটল বেনিয়মে?
আরও পড়ুন- মোবাইল বেড়েছে, যোগাযোগ কমেছে! মুছে গিয়েছে ফোনবুথের অপেক্ষারা…
সরকার বলছে, আগে একজন মানুষই প্রচুর পরিমাণে মোবাইল সিমকার্ড কিনতেন। তাই সিম কার্ড 'বাল্কে' কেনার ব্যবস্থা ছিল। এইসব আর চলবে না। পরিবর্তে, সঠিক ব্যবসায়িক সংযোগের নিয়ম আনতে চলেছে সরকার যাতে এই জাতীয় ভুয়ো ফোন বন্ধ হতে পারে। দেশে ১০ লক্ষ সিম ডিলার রয়েছে। তাদের পুলিশি ভেরিফিকেশনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হবে। এছাড়া, ব্যবসার কেওয়াইসি, সিমকার্ড নেওয়া ব্যক্তির কেওয়াইসিও করা হবে।
এই বছরের মে মাসেই, পঞ্জাব পুলিশ ১.৮ লক্ষেরও বেশি সিমকার্ড ব্লক করেছে। এই সমস্ত সিমকার্ড ভুয়ো পরিচয়পত্র ব্যবহার করেই সক্রিয় করা হয়েছিল। এই ধরনের সিমকার্ড ইস্যু করার জন্য ১৭ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে৷ পঞ্জাব পুলিশ বলছে, বেশিরভাগ সাইবার অপরাধ এবং 'দেশবিরোধী' কাজ হচ্ছে এই সিমকার্ড ব্যবহার করেই। ভুয়ো নথির সঙ্গে সংযুক্ত মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে একাধিক অপরাধ ঘটছে দেশে। সমস্ত অপরাধ নিতান্ত সাধারণ নয়। অধিকাংশ জড়িত দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে। গত কয়েক বছরে হু হু করে বেড়েছে সাইবার ক্রাইম। ডিজিটাল জালিয়াতি ঠেকাতে সিমকার্ডের উপর নজরদারি চালাতে গিয়েই এই বিশাল বেনিয়ম চোখে এসেছে।
ছাপানো আধারকার্ডের অপব্যবহার বন্ধ করতে আধারের QR কোড স্ক্যান করে তথ্য সংগ্রহ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। তবে হ্যাঁ, সিমকার্ড পাওয়ার জন্য আধার এখনও বাধ্যতামূলক নয়।এবার থেকে টেলিকম অপারেটররা ডিলার নিয়োগের আগে যাচাই করবে সমস্ত তথ্য। প্রতিটি ব্যবসার মালিকের বিবরণ এবং তার ব্যবসা-সম্পর্কিত নথিও সংগ্রহ করা হবে। এর আগে ডিলারদের বিস্তারিত নথিপত্র যাচাই হতো না নিয়ম মেনে।
আরও পড়ুন- ‘সবার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে’, খোদ মোবাইল আবিষ্কর্তার মুখেই এমন কথা! কেন বললেন এমনটা?
মোবাইল নম্বরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে, ৯০ দিনের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা অন্য কোনও নতুন গ্রাহককে দেওয়া হবে না। গ্রাহককে সিম বদলানোর জন্য সম্পূর্ণ কেওয়াইসি করতে হবে। যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনে টেলিযোগাযোগ বিভাগ ২০১৮ সালে জনপ্রতি মোবাইল সংযোগের সংখ্যা বাড়িয়ে ছিল। একজন সর্বোচ্চ ১৮ টি সিম পেতে পারতেন, যার মধ্যে ৯টি সিম ব্যবহার করা যাবে সাধারণ মোবাইলে এবং বাকি ৯টি M2M অর্থাৎ মেশিন থেকে মেশিনে যোগাযোগের জন্য। এই সংখ্যাটি কত কমবে, বা আদৌ কমবে কিনা এখনও স্পষ্ট নয়।
হোয়াটসঅ্যাপ নিজের থেকেই প্রায় ৬৬,০০০ অ্যাকাউন্ট ব্লক করেছে। এই অ্যাকাউন্টগুলি জড়িত ছিল প্রতারণামূলক কার্যকলাপে। প্রতারকদের ব্যবহৃত প্রায় ৮ লাখ ব্যাঙ্ক ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। চুরি বা হারিয়ে যাওয়া মোবাইল হ্যান্ডসেট সম্পর্কিত ৭.৫ লক্ষ অভিযোগের মধ্যে ৩ লক্ষ মোবাইল হ্যান্ডসেট খুঁজে পাওয়া গেছে এবং তাদের মালিকদের ফেরতও দেওয়া হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৭,০০০ মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্লক করা হয়েছে এবং প্রায় ১৮ লাখ গ্রাহকের নামে ভুয়ো নথি দিয়ে মোবাইল সংযোগ রেজিস্ট্রেশনের অভিযোগের মধ্যে ৯.২৬ লাখ অভিযোগের সমাধান করা হয়েছে।