কেন রাজ্যের সরকারী আধিকারিকদের বরখাস্ত করছে নির্বাচন কমিশন?

West Bengal Election: তাঁরা দায়িত্ত্বে থাকাকালীনই ভোটার তথ্য যাচাই এবং সংশোধনের প্রক্রিয়ায় অসততা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারচুপির তথ্য সামনে এসেছে। এই তথ্য পাওয়ার পরই পদক্ষেপ করে কমিশন।

রাজ্যের চার সরকারি আধিকারিককে বরখাস্ত করার কথা জানিয়ে সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাঁদের মধ্যে দু’জন ‘নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক’ (‘ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার’ বা ইআরও) এবং ‘সহকারী নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক’ (‘অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার’ বা এইআরও)। আর এই নিয়ে রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ চলছে নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্যের মধ্যে৷ কেন সরকারী কর্মীদের বরখাস্ত করার সুপারিশ দিল নির্বাচন কমিশন?

ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছিল আগেই। রাজ্য মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দফতরের তদন্তে উঠে এসেছিল এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভোটার তালিকায় অস্তিত্বহীন নাম তোলার অভিযোগে তলব করা হয়েছিল চারজন ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারকে। এরপরই দুই ইআরও-র বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার সুপারিশ করেছে নির্বাচন কমিশন।

অভিযোগ, বারুইপুর ও ময়নার ভোটার তালিকায় অনেকের নাম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিভাবে ঢোকানো হয়েছিল। ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগেই দুই ইআরও-কে সাসপেন্ড করেছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। পাসওয়ার্ড ও আইডি অন্যদের হাতে তুলে দেওয়ার মতো মারাত্মক অভিযোগ সামনে এসেছে।

আরও পড়ুন- ৬৮ জন ভোটারের ঠিকানা বার! ফের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ

ময়নার ইআরও বিপ্লব সরকার এবং এইআরও সুদীপ্ত দাসের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে নির্বাচন কমিশন। তাঁরা দায়িত্ত্বে থাকাকালীনই ভোটার তথ্য যাচাই এবং সংশোধনের প্রক্রিয়ায় অসততা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারচুপির তথ্য সামনে এসেছে। এই তথ্য পাওয়ার পরই পদক্ষেপ করে কমিশন।

এর আগে রাজ্যের নন্দকুমারে ৫৯ জন এবং রাজারহাট গোপালপুরের ৪৩ জন ভোটারের নামে জালিয়াতি ছিল বলে অভিযোগ। কমিশন এই অঞ্চলগুলির দফতরের সব বিভাগে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, ভোটার তালিকায় খতিয়ে দেখতে হবে ইলেকটোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের। দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কাজ করলে  তাঁদের সাসপেন্ডও করা হতে পারে বলে জানানো হয়েছিল। এবার সেই মতোই পদক্ষেপ করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সেই নির্দেশ তিনি মানবেন না। কাউকে তিনি বরখাস্ত করবেন না। ৬ অগাস্ট ঝাড়গ্রামে এক সভা থেকে তিনি বললেন, “বাংলার সরকারি অফিসারদের বলব নিশ্চিন্তে থাকবেন। আমরা আপনাদের জীবন দিয়ে রক্ষা করব।”

আরও পড়ুন- WB Electoral Roll : নির্বাচন কমিশনের অভূতপূর্ব নির্বাচনী তালিকা সংশোধন এবার বঙ্গেও

নির্বাচন কমিশনকে তোপ দেগে মমতার বার্তা, “সরকারী কর্মচারীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। কালকে আমার দুই অফিসারকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। কি না, তাঁদের সাসপেন্ড করা হলো। আমরা বলি, তোমার নির্বাচন এখনও ঘোষণা হয়েছে? কোন আইনের বলে তুমি নোটিস পাঠাচ্ছ? সাসপেন্ড করছ। আর বলে দিচ্ছ, এফআইআর করতে হবে। হবে না। আমি কারও পানিশমেন্ট হতে দেব না। এটা মাথায় রাখবেন।” প্রশ্ন হলো, মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ করতেই পারেন, কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ কী অমান্য করতে পারবেন? বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজ্য সরকার কমিশনের নিদের্শ মেনে আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হতে পারে।

প্রসঙ্গত, বিহারের মতো পশ্চিমবঙ্গেও ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশন(SIR) হবে। এ নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই রাজ্য সরকার আর নির্বাচন কমিশনের মধ্যে দ্বন্দ্ব। যদিও বিহারের স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশন(SIR) নিয়েও বিতর্ক আছে। এই প্রক্রিয়া নিয়ে শুধু তৃণমূল নয়, বিজেপি বিরোধী জাতীয় স্তরের সব দলই প্রতিবাদে সরব হয়েছে। তাদের দাবি, ভোটার তালিকার এই সমীক্ষা আসলে ঘুরপথে এনআরসি কার্যকর করার চেষ্টা। এসবের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের একাধিক বাসিন্দা অসমের ফরেনার্স ট্রাইবুনালের নোটিসও পেয়েছেন। সেখানে তাঁদের নথি পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আবার ভোটার তালিকার জন্যও নথি দেখাতে হচ্ছে ভোটারদের। এছাড়া বিহারে স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশন(SIR)-এর প্রক্রিয়া নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, বিহারের শাসকদল বিজেপিকে সুবিধে করে দিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

এখন দেখার অভিযোগ ওঠা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে আদৌ কোনো পদক্ষেপ নেয় কিনা পশ্চিমবঙ্গ সরকার? এবং নির্বাচন কমিশন বনাম রাজ্য — এই ন্যারেটিভকে খাড়া করতে পারে কিনা মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দল?

More Articles