নিরাপত্তাই কারণ? কেন এই ১২টি দেশ থেকে আমেরিকায় আসা নিষিদ্ধ করলেন ট্রাম্প?
US Travel Ban 2.0: ট্রাম্প ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ইরাক, সিরিয়া, ইরান, সুদান, লিবিয়া, সোমালিয়া এবং ইয়েমেন সহ সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছিলেন।
কলোরাডোতে ইজরায়েলপন্থী একটি দলের উপর হামলার পর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে ১২টি দেশের নাগরিকদের আমেরিকা ভ্রমণ নিষিদ্ধ করার একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। ট্রাম্পের ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, আফগানিস্তান, মায়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, নিরক্ষীয় গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেন সহ ১২টি দেশের নাগরিকদের আমেরিকা প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ হয়েছে। ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে জানিয়েছেন, অভিবাসীদের উপর এই ব্যাপক দমন-পীড়নের নেপথ্যে তিনি রাখছেন গত রবিবার কলোরাডোতে গাজায় আটক ইজরায়েলিদের মুক্তির জন্য শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর এক মিশরীয় ব্যক্তির আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি নিজের পর্যটন ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও আমেরিকায় ছিলেন।
কেন বেছে বেছে এই ১২টি দেশকেই চিহ্নিত করা হলো? হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতি অনুসারে, এই দেশগুলির বাসিন্দাদের আমেরিকা প্রবেশের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার কারণ, এই দেশগুলি "যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ বলে প্রমাণিত করা হয়েছে এবং দেশগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ" বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই দেশগুলির পাশাপাশি, বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান এবং ভেনেজুয়েলা থেকে মানুষের আমেরিকা আসার উপরেও আংশিক প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
আরও পড়ুন- ট্রাম্পের পরিবারই ‘অনুপ্রবেশকারী’! কেন অভিবাসীদের নিয়ে কড়া আমেরিকা?
দেশকে সুরক্ষিত রাখতে কোনও দেশের প্রধান কিছু কার্যকরী কৌশল নিতেই পারেন। কিন্তু ট্রাম্পের এই আমেরিকাকে অন্য দেশের ছোঁয়া মুক্ত রাখার নেপথ্যে একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যে যে পদক্ষেপটি তিনি করলেন, নিজের প্রথম মেয়েদেও তিনি তা করেছিলেন। সেবার সাতটি ইসলামিক দেশের উপর বিতর্কিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নীতি জারি করেছিলেন। এই নয়া নিষেধাজ্ঞা, সেই তালিকাকেই বিস্তৃত করল।
"আমরা এমন কোনও দেশ থেকে উন্মুক্ত অভিবাসনে রাজি হতে পারি না যে দেশ আমাদের জন্য নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য নয়... সেই কারণেই আজ আমি ইয়েমেন, সোমালিয়া, হাইতি, লিবিয়া এবং আরও অনেক দেশের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি নতুন নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করছি,” ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। X-এ একটি বিবৃতিতে ট্রাম্প আরও বলেছেন, "কলোরাডোর বোল্ডারে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশের ফলে আমাদের দেশের জন্য যে চরম বিপদ তৈরি হয়েছে তাই তুলে ধরেছে, এদের সঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি। আমরা এদের চাই না।" হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাবিগেল জ্যাকসনও X-এ বলেছেন, "আমাদের দেশে আসতে এবং আমাদের ক্ষতি করতে চাওয়া বিপজ্জনক বিদেশিদের থেকে আমেরিকানদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।"
এই নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবে আরও বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার জন্য উল্লিখিত কারণগুলির মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তানে তালিবানদের নিয়ন্ত্রণ, ইরান ও কিউবায় রাষ্ট্রীয় মদতে পরিচালিত সন্ত্রাসবাদ এবং চাদ ও ইরিত্রিয়ার মতো দেশগুলি থেকে ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণতার হার বাড়তে থাকা।
আরও পড়ুন- বিদেশি ছাত্রভর্তিতে ট্রাম্পের বিধিনিষেধ! আদালতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল হার্ভার্ড
চাদে B1/B2 ভিসার ক্ষেত্রে দেখা গেছে মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও আমেরিকায় থেকে যাওয়ার হার ৪৯.৫৪ শতাংশ। ইরিত্রিয়া থেকে F, M, এবং J ভিসার মাধ্যমে আমেরিকায় থাকা মানুষদের মধ্যে এই 'ওভারস্টে'-র হার ৫৫.৪৩ শতাংশ। ট্রাম্প স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, তাঁর দেশ থেকে উগ্র ইসলামিক সন্ত্রাসবাদীদের তিনি দূরে রাখবেন। নিজের প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ইরাক, সিরিয়া, ইরান, সুদান, লিবিয়া, সোমালিয়া এবং ইয়েমেন সহ সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন। তবে, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন ২০২১ সালে সেই নীতি বাতিল করে দেন। বাইডেন বলেছিলেন, এমন নীতি "আমাদের জাতীয় বিবেকের উপর এক কলঙ্ক"। ট্রাম্প আবার স্পষ্ট করে দিলেন, কোন কোন দেশের সমস্ত নাগরিককেই তিনি আসলে 'ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী' হিসেবে মনে করছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, নিষিদ্ধ দেশগুলি যদি উল্লেখযোগ্য উন্নতি করে তবে তালিকাটি সংশোধন করা যেতে পারে এবং নতুন হুমকি দেখা দিলে নতুন দেশও যুক্ত করা যেতে পারে। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে, ট্রাম্প তালিকা থেকে ইরাককে সরিয়ে দেন এবং চাদ, ভেনেজুয়েলা আর উত্তর কোরিয়াকে যুক্ত করেন। ২০২০ সালে, তিনি নিষেধাজ্ঞার পরিধি বৃদ্ধি করেন, নাইজেরিয়া, ইরিত্রিয়া, সুদান, তানজানিয়া, মায়ানমার এবং কিরগিজস্তানের নাগরিকদের জন্য অভিবাসন বিধিনিষেধ যোগ করেন। পরে চাদকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
তবে ট্রাম্পের এই নিষেদ্ধাজ্ঞায় কিছু ছাড় রয়েছে। যেমন এই কোনও নিষিদ্ধ দেশের মানুষ যদি মার্কিন স্থায়ী বাসিন্দা হন তাঁর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রযুক্ত নয়। আমেরিকান বাহিনীকে সহায়তাকারী এবং বিশেষ ভিসা থাকা আফগান ব্যক্তি, কূটনীতিক, ক্রীড়াবিদ এবং এই তালিকায় না থাকা দেশের দ্বৈত নাগরিকত্বের পাসপোর্ট থাকা ব্যক্তিরা নিষিদ্ধ নন।