দুই কনস্টেবলের জন্য ইস্তফা দিয়েছিলেন ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী! অবাক করবে যে আসল কারণ
Rajiv Gandhi and Chandra Sekhar: অস্ত্র ব্যবসায়ী জানিয়েছিলেন, জর্ডানের যে 'রুট' দিয়ে বোফর্স দুর্নীতির টাকা রাজীব গান্ধির কাছে এসে পৌঁছেছে, সেই সম্বন্ধেও বিস্তারিত প্রমাণ তিনি চন্দ্রশেখরের কাছে পৌঁছে দেবেন।
কখনও শুনেছেন পুলিশের দু'জন কনস্টেবলের কারণে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে হয়েছে? শুনতে অবাক লাগলেও, ভারতীয় রাজনীতিতে এমনটাই ঘটেছিল একবার। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির বাসভবনের বাইরে নজর রাখছিলেন হরিয়ানা পুলিশের দু'জন কনস্টেবল। ঘটনা জানাজানি হতেই রাজনৈতিক ডামাডোল শুরু হয়ে যায় দিল্লিতে। ১৯৯১ সালের ২ মার্চ যে রাজনৈতিক নাটক দুই পুলিশ কনস্টেবলের গ্রেফতারি দিয়ে শুরু হয়েছিল, সেই নাটক শেষ হয় ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের ইস্তফা দিয়ে। চন্দ্রশেখরের সরকার চলছিল রাজীব গান্ধির সমর্থনে। তবে, অবাক করা ব্যাপার হলো, রাজীব কিন্তু সমর্থন ফেরত নেননি, উল্টে চন্দ্রশেখরকে বলেছিলেন সরকার চালিয়ে যেতে। তা সত্ত্বেও ইস্তফা দিয়েছিলেন চন্দ্রশেখর। কেন?
১৯৯০ সালে বিজেপি জনতা দলের থেকে সমর্থন ফিরিয়ে নেওয়ায় পতন হয় ভিপি সিং সরকারের। ১৫৪ জন জনতা সাংসদের মধ্যে ২০ জন সাংসদ চলে যান রাজীব গান্ধির কংগ্রেসে। ৫৪ জন সাংসদকে নিয়ে দল ভেঙে জনতা দল (সোশ্যালিস্ট) গঠন করেন চন্দ্রশেখর। এছাড়াও আরও কয়েকজন সাংসদ এদিক-ওদিক অন্যান্য দলে যোগ দেন। সেই সময় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ২৬০টি আসন। নিজের ৫৪ জন সাংসদ এবং কংগ্রেসের ২১১ জন সাংসদের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়েন চন্দ্রশেখর। সরকার গড়লেও দু'পক্ষের মধ্যে কখনই সদ্ভাব ছিল না। রাজীব গান্ধি চাইছিলেন যে করেই হোক ক্ষমতা ফিরে পেতে, ফের প্রধানমন্ত্রী হতে কিন্তু ২১১ জন সাংসদ নিয়ে তা একেবারেই সম্ভব নয়। অন্যদিকে জনতা দলের অন্দরেও ছিল বিক্ষোভের আগুন।
চন্দ্রশেখরকে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি থেকে সরাতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন দলের তিনজন বড় নেতা - উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব, ভারতের তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী দেবী লাল এবং গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী চিমনভাই প্যাটেল। এঁদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থ ছিল। মুলায়ম চাইছিলেন চন্দ্রশেখরের দল ছেড়ে নিজের মন্ত্রিমণ্ডল সমেত কংগ্রেসে যোগ দিয়ে সরকার চালাতে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা নারায়ণ দত্ত তিওয়ারির বিরোধের কারণে তা সম্ভব হচ্ছিল না। চৌধুরী দেবী লাল চন্দ্রশেখরকে ইতিপূর্বেই জানিয়েছিলেন, তাঁর ক্যাবিনেটের পাঁচজন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে। কেননা তারা বারংবার দেবী লালকে জনসমক্ষে অপমান করেছেন কিন্তু চন্দ্রশেখর ছিলেন নির্বিকার। অন্যদিকে গুজরাতে কংগ্রেসের সমর্থনে সরকার চালাচ্ছেন চিমনভাই প্যাটেল। চিমনভাই এমন নেতা ছিলেন যিনি রাতারাতি নিজের মন্ত্রিমণ্ডল নিয়ে দল পাল্টাতেন। ১৯৯০ সালে কংগ্রেস মাধব সিং সোলাঙ্কিকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় চিমনভাই প্যাটেলকে সমর্থন করে এবং তিনি মুখ্যমন্ত্রী হন। এই ঘটনায় বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা সোলাঙ্কি বেজায় চটেছিলেন রাজীব গান্ধির ওপর। চিমনভাই প্যাটেল আশঙ্কা করেছিলেন কংগ্রেসের বিধায়করা বিদ্রোহ করতে পারে। সেহেতু রাজীব গান্ধির নেক নজরে থাকাই শ্রেয়। সেই কারণেই চন্দ্রশেখরকে অপদস্ত করতে মরিয়া হন তিনি। প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন এবং তাঁদের নিজের পরিকল্পনা মতো চালনা করলেন রাজীব গান্ধি।
কিন্তু রাজনীতির দাবা খেলায় রাজীবের মতোই পোড় খাওয়া খেলোয়াড় ছিলেন চন্দ্রশেখর। তিনিও নিজের ঘুঁটি সাজাচ্ছিলেন। এই সময় চন্দ্রশেখরও রাজীব গান্ধির মতোই কংগ্রেসের তিনজন বড় নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চিন্না রেড্ডি এবং কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন্দ্র পাটিলের সঙ্গে চন্দ্রশেখর যোগাযোগ করছেন জানতে পেরে তাঁদের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেন রাজীব কিন্তু তৃতীয় নেতার বেলায় গিয়ে হয় সমস্যা। এই তৃতীয়জন ছিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী শরদ পওয়ার। তিনি সাফ জানিয়ে দেন দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুধুমাত্র সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। সুতরাং ইস্তফা দেওয়ার প্রশ্নই নেই। রাজীব আশঙ্কা করেছিলেন শরদের ঘোড়া চন্দ্রশেখরের শিবিরের দিকে ছুটতে পারে।
আরও পড়ুন- “দিল্লি এসো শিগগির”! ইন্দিরার নির্দেশ না মেনে ভোটে লড়েন প্রণব মুখোপাধ্যায়! পরিণাম?
দেশে রাজনৈতিক ডামাডোলের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ডামাডোলও চলছিল। ভারতের ফরেন রিজার্ভ তখন তলানিতে ঠেকেছে। গাল্ফ যুদ্ধের কারণে তেলের দাম তখন আকাশ ছোঁয়া। ভারত তখনও মুক্ত অর্থনীতির দেশ নয়। দেশের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা (২০২২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী) প্রধানমন্ত্রীকে সাফ জানিয়ে দেন ভয়ংকর অর্থ সংকটের মুখে পড়তে চলেছে ভারত। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, অচিরেই দেউলিয়া হবে অতীতের সোনার পাখি। এই সময় ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে ভারতে আসেন আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাশোগি। খাশোগিকে বিমানবন্দরে নিতে এসেছিলেন বিখ্যাত জ্যোতিষ এবং তান্ত্রিক চন্দ্রস্বামী। দেশের প্রায় সকল প্রভাবশালী ব্যক্তিই গুণমুগ্ধ ভক্ত ছিলেন চন্দ্রস্বামীর। ইন্দিরা গান্ধি, রাজীব গান্ধি, চন্দ্রশেখর, লালকৃষ্ণ আদবানি থেকে শুরু করে অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খান্না, ধীরুভাই আম্বানি, লতা মঙ্গেশকর - কে ছিলেন না সেই তালিকায়। দিল্লি বিমানবন্দর থেকে চন্দ্রস্বামী খাশোগিকে নিয়ে যান দিল্লি-হরিয়ানা বর্ডারে অবস্থিত এক আশ্রমে। এই আশ্রমকে কোনও সাধারণ আশ্রম ভেবে মোটেই ভুল করা উচিত না। অত্যন্ত সুসজ্জিত এই আশ্রম ছিল প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের বাসস্থান। তিনজনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয় সেদিন। বৈঠকে কী হয়েছিল? খোদ চন্দ্রস্বামীর বক্তব্য অনুযায়ী, খাশোগি চন্দ্রশেখরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সৌদি আরব থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্থ সাহায্যের ব্যবস্থা তিনি করবেন। এছাড়াও তিনি জানিয়েছিলেন, জর্ডানের যে 'রুট' দিয়ে বোফর্স দুর্নীতির টাকা রাজীব গান্ধির কাছে এসে পৌঁছেছে, সেই সম্বন্ধেও বিস্তারিত প্রমাণ তিনি চন্দ্রশেখরের কাছে পৌঁছে দেবেন।
গোপনে রাজীব গান্ধির বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড়ের চেষ্টা করলেও সর্বসমক্ষে চন্দ্রশেখর তা কখনই স্বীকার করেননি। উপরন্তু তিনি বারংবার বলে গিয়েছেন, বোফর্স দুর্নীতি নিতান্তই সাজানো ঘটনা। যেকোনও থানার সামান্য দারোগাও এর তদন্ত করতে পারে। কিন্তু ২ মার্চ ঘটে যায় এক কাণ্ড। রাজীব গান্ধির বাসস্থানের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয় দুই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে। জানা যায়, তাদের নাম প্রেম সিং এবং রাম সিং। দিল্লি পুলিশকে তারা জানায় তারা হরিয়ানা পুলিশের কনস্টেবল। রাজ্যের এক প্রভাবশালী আইপিএস অফিসারের নির্দেশে তারা রাজীব গান্ধির ওপর নজরদারি করছিলেন।
এই ঘটনার কথা জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ নিজের বাসভবনেই বৈঠক ডাকেন রাজীব গান্ধি। শরদ পওয়ার, প্রণব মুখোপাধ্যায়, পিভি নরসিমহা রাও, অর্জুন সিং, কমল নাথ, পি জে কুরিয়ান, মাখনলাল ফোতেদার-সহ সব কংগ্রেসি নেতারা জড়ো হন রাজীবের বাসভবনে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় চন্দ্রশেখরের জনতা দল থেকে সাংসদ ভাঙানো হবে এবং প্রয়োজনে ভিপি সিংয়ের জনমোর্চার ৭২ জন সাংসদের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়বেন রাজীব গান্ধি। এমতাবস্থায় ৫ মার্চ প্রথমবার সংসদে মুখোমুখি হন রাজীব এবং চন্দ্রশেখর। ইতিপূর্বেই অর্থনৈতিক ডামাডোলের কারণে বাজেট পেশ করা যায়নি নির্দিষ্ট সময়ে। উপরন্তু কংগ্রেস সাংসদদের হই-হট্টগোলের জেরে মুলতুবি করতে হয় বাজেট অধিবেশন। এই ঘটনার পর রাজীব গান্ধি রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কটরমনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন রাজীব। আকারে-ইঙ্গিতে তিনি স্পষ্ট করে দেন কয়েক দিনের মধ্যেই চন্দ্রশেখরের থেকে সমর্থন ফেরত নেবে কংগ্রেস।
রাজীব যাতে পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়তে পারেন সেই জন্য যোগাযোগ করা হয় ভিপি সিংয়ের জনমোর্চার সাংসদদের সঙ্গে। রাজীবের পুরনো সাথী অরুণ নেহেরু, আরিফ মহম্মদ খান, রামবিলাস পাসওয়ান-সহ অনেকেই রাজি হয়ে যান তাঁকে সমর্থন করতে। সব মিলিয়ে জনমোর্চার কুড়ি জন সাংসদ রাজীবকে সমর্থন করতে রাজি ছিলেন। কিন্তু তাতেও তো সংখ্যা ২৬০-এ গিয়ে দাঁড়ায় না। এর মাঝেই ঘটে যায় এক অনভিপ্রেত ঘটনা। ৫ তারিখের পর, ৭ মার্চ সংসদে ভাষণ দিতে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর। সংসদে তিনি স্পষ্টই জানান রাজীব তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অন্তত এক বছর সরকারের ওপর আঁচ আসতে দেবেন না তিনি। দেশ এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। পঞ্জাব, অসম এবং তামিলনাড়ুতে একাধিক রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠনের কার্যকলাপের জন্য রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে। এই অবস্থায় সরকার যাতে নিজের কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারে তা নিশ্চিত করা সকলের প্রয়োজন। কিন্তু রাজীব তা করছেন না, উপরন্তু তাঁর সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। রাজীব গান্ধি এরকম কিছু হতে পারে আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন। কিন্তু তিনি যা অনুমান করেননি তা ঘটল এবার। নিজের সওয়া দু'ঘণ্টার ভাষণ শেষ করে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন চন্দ্রশেখর।
আরও পড়ুন- ইন্দিরাকে প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন, ইন্দিরার হাতেই শেষও হয়ে যান! কে ছিলেন কামরাজ?
চন্দ্রশেখরের ইস্তফায় বিস্মিত হয়ে যান রাজীব। তিনি আশাও করতে পারেননি 'বালিয়ার বাবুসাহেব' এমন কিছু করবেন। সংসদ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজীব শুধু বলেন, "আমাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সমর্থন তো ফেরত নিইনি। আমরা চাই তিনিই সরকার চালান।" এরপরই রাজীব দ্বারস্থ হন শরদ পওয়ারের। রাজীবের কথায় চন্দ্রশেখরের সঙ্গে দেখা করতে যান শরদ। অনুরোধ করেন তিনি যেন ইস্তফা না দেন, সরকার চালিয়ে যান কিন্তু রাজি হননি চন্দ্রশেখর। বদলে শরদ পওয়ারকে মনে করিয়ে দেন কয়েক সপ্তাহ আগের এক ঘটনা। এই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে শরদ পওয়ারের কন্যা সুপ্রিয়ার বিয়েতে গিয়েছিলেন চন্দ্রশেখর। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চার্টাড বিমানেই তিনি যান অনুষ্ঠানে। সেখানেই দেখা হয়ে যায় রাজীব গান্ধির সঙ্গে। রাজীবকে চন্দ্রশেখর জিজ্ঞেস করেন, "আপনি কি আজই ফিরছেন?"। জবাবে রাজীব হ্যাঁ জানানোয় তাঁর বিমানেই একসঙ্গে দিল্লি ফেরার প্রস্তাব দেন চন্দ্রশেখর। বিমান পুণেতে অপেক্ষারত ছিল। দুপুর দুপুর অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যান চন্দ্রশেখর। চন্দ্রশেখরকে রাজীব জানান তিনি যেন পুণেতে গিয়ে অপেক্ষা করেন। সন্ধের মধ্যে তিনি পৌঁছে যাবেন বিমানবন্দরে কিন্তু সন্ধে গড়িয়ে রাত হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও রাজীবের দেখা পাননি চন্দ্রশেখর। বাধ্য হয়ে শরদ পওয়ারকে ফোন করেন তিনি। শরদ জানান রাজীব জানিয়েছেন, তিনি চন্দ্রশেখরের সঙ্গে যেতে আদৌ ইচ্ছুক নন। ঘটনায় অত্যন্ত বিরক্ত হন চন্দ্রশেখর। সেই সময় চন্দ্রশেখর এবং রাজীব গান্ধির মধ্যে এতটাই অবিশ্বাস ছিল। এই ঘটনার কথা শরদ পওয়ারকে স্মরণ করিয়ে চন্দ্রশেখর বলেন, "আপনার নেতাকে গিয়ে বলে দেবেন যে আমি রাজীব গান্ধি নই যে দিনে তিনবার কথা পাল্টাব"।
এতটা অবিশ্বাস নিয়ে সরকার চালাতে রাজি ছিলেন না চন্দ্রশেখর। তিনি জানতেন মুখে না বললেও কয়েকদিনের মধ্যেই যে করে হোক সমর্থন ফেরত নেবেন রাজীব। তাঁর দলে ভাঙচুর হবেই। এর থেকে ইস্তফা দিয়ে শহিদ হওয়াই শ্রেয়! চন্দ্রশেখর ইস্তফা দেওয়ার পর সরকার গড়ার চেষ্টা করেছিলেন রাজীব গান্ধি কিন্তু রাজীব বুঝতে পেরেছিলেন তিনি যাই করে নিন না কেন, ২৬০ জন সাংসদের সমর্থন জোগাড় করতে পারবেন না। ফলত দু'বছরের মধ্যেই দেশে ফের লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে কংগ্রেস জিতলেও আর প্রধানমন্ত্রী হওয়া হয়নি রাজীব গান্ধির। তার আগেই ১৯৯১ সালের ২১ মে শ্রীপেরাম্বাদুরে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে মানব বোমা বিস্ফোরণে প্রয়াত হন তিনি। পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী হন এক বৃদ্ধ কংগ্রেসি নেতা যিনি প্রায় নেপথ্যে চলেই গিয়েছিলেন। তিনি ১৯৯১-এর নির্বাচনেও লড়তে রাজি হননি কিন্তু দলের স্বার্থে স্বেচ্ছাবসর ভেঙে রাজনীতিতে আবার ফিরে আসেন। তিনি পিভি নরসিমহা রাও।