ইরান কেন ইজরায়েলের হাইফা শহরকে টার্গেট করছে?

Haifa: ইজরায়েল-ইরানের মধ্যে সংঘর্ষে ইজরায়েলকে পাল্টা জবাব দিতে হাইফা-সহ একাধিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। ইজরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফা। এটি ইজরায়েলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর।

১৩ জুন ভোররাতে ইজরায়েল এক নজিরবিহীন সামরিক অভিযানে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলিতে ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছে। শুধু পারমাণবিক স্থাপনাই নয়, বরং ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যাটারি, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, অস্ত্রাগার, পরীক্ষাগার এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বাসভবনও টার্গেট ছিল। এই অভিযানের ঠিক তার পরেই ইরানের শীর্ষ নেতা আলি খামেনেই প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর তেল আভিভে মিসাইল চালায় তেহরান। ওয়াশিংটন পোস্ট-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে লেখা হয়েছে, ওই শহরটিকে টার্গেট করে গতকাল ১৪ জুন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইজরায়েলের উত্তরাঞ্চলের উপকূলীয় এ শহরটি কেন গুরুত্বপূর্ণ? কেন ইরানের টার্গেট হাইফা?

ইজরায়েল-ইরানের মধ্যে সংঘর্ষে ইজরায়েলকে পাল্টা জবাব দিতে হাইফা-সহ একাধিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। ইজরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফা। এটি ইজরায়েলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। হাইফায় ইরানের হামলা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য উঠে আসছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দাবি করা হয়েছে, ১৪ জুন ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ইজরায়েলে ছোড়া হয়। সেখানে এও বলা হয় যে, টার্গেট ছিল হাইফা ও তেল আভিভ।

ওয়াশিংটন পোস্ট-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের  প্রতিবেদনে এও জানানো হয় যে, ১৪ জুন হাইফায় বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া গিয়েছিল। টাইমস অব ইজরায়েল-সহ ইজরায়েলি গণমাধ্যমে হাইফায় বিস্ফোরণের ছবি দিয়ে দাবি করা হয়েছিল এগুলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলাফল। তবে বিবিসি প্রথমে হাইফায় ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং ৫ জনের মৃত্যুর খবর জানালেও পরে ওই সংবাদমাধ্যম জানায়, হাইফায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের হামলার খবরটি ঠিক নয়।

ওয়াশিংটন পোস্ট-এর তথ্য অনুযায়ী, হাইফায় ইজরায়েলের একটি শক্তিশালী নৌঘাঁটি রয়েছে। এ ছাড়া এখানে বেশ কিছু তেল শোধনাগার ও বহু রাসায়নিক কারখানা রয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসেও বলা হয়েছে, ইজরায়েলের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগারটি রয়েছে হাইফায়।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, হাইফা বহু শতাব্দী ধরেই একটি বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইজরায়েলের প্রধান সমুদ্রবন্দর এটি। ইজরায়েলের জলপথে যে সব বানিজ্য হয় তা অনেকটাই এই বন্দর দ্বারা পরিচালিত হয়। ইজরায়েলের মোট পণ্য পরিবহনের প্রায় অর্ধেকই এই বন্দর দিয়ে যায়। প্রতিবেদনে এও বলা হয় যে, ইজরায়েলের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে কোনো রকম বাধা না রাখতে হাইফায় আয়রন ডোম স্থাপন-সহ নানা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা করা রয়েছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, হাইফায় যে নৌঘাঁটি, তেল শোধনাগার ও রাসায়নিক কারখানাগুলো রয়েছে তা তেল আভিভের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আল–জাজিরা-তে বলা হয়, হাইফায় ইরানের হামলা প্রত্যাশিত ছিলই। প্রতিবেদনে এও বলা হয়, বিশেষ করে ইজরায়েলের হাইফায় ইরানের হামলা আসলে স্পষ্ট বার্তা যে তেহরান পাল্টা জবাব দিচ্ছে। কারণ, ইরানের শীর্ষ নেতারা আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, ইজরায়েল যদি ইরানের বেসামরিক এলাকায় বা জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালায়, তাহলে তারাও পাল্টা জবাব দেবে।

ইরানের অভিযোগ, আমেরিকা ইজরায়েলকে সমর্থন করছে। সেই সন্দেহের থেকে আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সকেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে তারা। পরমাণু চুক্তি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে ইরানের বৈঠকও আর হয়নি। ইরান আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিল তাদের ইউরেনিয়াম সংক্রান্ত কর্মসূচিতে আমেরিকা যদি রাজি না হয় পরমাণু চুক্তি করা হবে না। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছিলেন, "ইউরেনিয়াম সংক্রান্ত কর্মসূচি স্থগিত রাখা জাতীয় স্বার্থের বিরোধী। ইরান কখনও সেই পথে হাঁটবে না।’’ এরই মধ্যে ইজরায়েলি হামলায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

তবে, পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি ফেরাতে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় তিন ইউরোপীয় দেশ।জার্মানির বিদেশমন্ত্রী জোহান ওয়েডফুল জানিয়েছেন, জার্মানি, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন দ্রুত ইরানের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধানসূত্র বার করতে চায়। তিনি এও জানিয়ে দিয়েছেন যে ওই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় শুধুমাত্র তেহরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড। ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের জেরে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় সেটাই এখন দেখার।

More Articles