থাইল্যান্ড নয়! বিখ্যাত এই দেশের রাজধানী কেন ক্রমেই হয়ে উঠছে যৌন পর্যটন কেন্দ্র?

Tokyo: জাপানের টোকিওতে ক্রমেই বাড়ছে যৌনতার বাজার। প্রচুর বিদেশি আসছেন সেখানে যৌনতার ভিন্ন স্বাদ পেতে।

যৌনতার চাহিদা আছে। চাহিদা আছে মানেই জোগানও ভরপুর। আর চাহিদা জোগানের এই আদিম অর্থনৈতিক খেলায় বাজারও উঠছে ফুলেফেঁপে। প্রতি দেশেই যৌনতার বাজার আছে, বিত্ত বিশেষে তা আলাদা। কোথাও তা খোলামেলা, কোথাও তা অবৈধ। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নানা শহর এখন যৌন পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে উঠে আসছে। সারা বিশ্বের মানুষের, এবং অসংখ্য ভারতীয়ের গন্তব্য হয়ে উঠেছে থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককের মতো শহর যেখানে অবাধে মেলে যৌনতা, অগাধ প্রলোভন। তবে ব্যাঙ্কক, কম্বোডিয়া, ব্রাজিল- এই শহরগুলিই কেবল নয়। এক অন্য দেশের রাজধানী শহর ক্রমেই হয়ে উঠছে যৌন পর্যটন কেন্দ্র। তথ্য বলছে, জাপানের টোকিওতে ক্রমেই বাড়ছে যৌনতার বাজার। প্রচুর বিদেশি আসছেন সেখানে যৌনতার ভিন্ন স্বাদ পেতে।

কেন জাপানের মতো দেশের রাজধানী শহরে বাড়ছে যৌনতার বিক্রি? জাপানে দারিদ্র্য বৃদ্ধি এবং জাপানি ইয়েনের মূল্য হ্রাস রয়েছে এর নেপথ্যে অন্যতম বড় কারণ হিসেবে। জাপান বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ ছিল। আগে নগদ অর্থের বিনিময়ে দরিদ্র দেশগুলির মহিলাদের সঙ্গে যৌনতা উপভোগের বিষয়টিই ছিল সাধারণ। অর্থাৎ জাপানি পুরুষরা যেতেন অন্যত্র। এখন চিত্র পাল্টে গেছে। জাপান ক্রমেই দরিদ্র দেশ হয়ে উঠছে, বলছেন লিয়াজঁ কাউন্সিল প্রোটেক্টিং ইয়ুথসের (সেইবোরেন) মহাসচিব ইয়োশিহিদে তানাকা।

আরও পড়ুন- দেবতাদের যৌনতা নাকি অন্য রহস্য! খাজুরাহোর মূর্তি আসলে কীসের প্রতীক?

সূর্যাস্তের পরে নয়, প্রকাশ্য আলোতেই গ্রাহকদের জন্য অপেক্ষারত যুবতীদের ভিড় দেখা যায় শহরের নানা পার্কে। তানাকা বলছেন, প্রথম বিষয়টি লক্ষ্য করা যায় COVID-19 বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পরে। আগের থেকে আরও বেশি সংখ্যক বিদেশিদের ভিড় বাড়ে শহরের পার্কে। তানাকার দাবি, এই বিদেশি পুরুষদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ, এশিয়ান, কৃষ্ণাঙ্গ সকলেই আছেন - তবে সংখ্যাগরিষ্ঠই চিনের মানুষ। তানাকা বলছেন, ২০ বছর বয়সের আশেপাশে অনেক তরুণী এবং যুবতী যৌনতা বিক্রির কাজে নামছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপুল পর্যটকদের আগমন, দারিদ্র্য বৃদ্ধি এবং ইয়েনের দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে এই ঘটনা বেশি বেড়েছে। তাঁদের ব্যাখ্যা, কোভিড-১৯ মহামারী মহিলাদের দেহ ব্যবসায় যাওয়ার একটি প্রধান কারণ। অনেকেই দেহব্যবসা করে ঋণ নেওয়া টাকা শোধ করতে চাইছেন।

জাপানের একটি সংবাদপত্র বলছে, বছর ১৯-এর এক তরুণী, যিনি দেহ ব্যবসা করছেন তিনি জানিয়েছেন, গত এপ্রিল থেকে তিনি এই কাজ শুরু করেছেন। "আমি ঋণ শোধ করতে চাই এবং আমার নতুন জিনিস কিনতে ভালো লাগে, যেমন জামাকাপড়। তাই টাকা দরকার। পার্কে বিভিন্ন ধরনের পুরুষ আছে, তবে আমি বলব যে প্রায় অর্ধেকই বিদেশি। এখানে যে মেয়েরা আগে থেকে কাজ করত আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলছে আগে এমনটা ছিল না। আগে মূলত জাপানি পুরুষরাই আসত কিন্তু এই জায়গাটা এখন বিখ্যাত হয়ে উঠেছে।"

আরও পড়ুন- 4B Movement: বিয়ে-সন্তান-যৌনতাকে ‘না’! কেন এত জনপ্রিয় হচ্ছে এই আন্দোলন?

এখানে একধিক ক্লাব যৌনকর্ম, বিদেশে অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এমপিডি) জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া ৪৩ শতাংশ মহিলা বলেছেন যে তারা এই ক্লাবগুলির ঋণ শোধ করতেই এই কাজে এসেছেন। গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ মহিলার বয়স ২০ বছর বা তার আশেপাশেই। তিনজনের বয়স ১৯ বা তার কম। এই কাজে আসার পরে হিংসার শিকারও হচ্ছেন বহু মহিলা।

১৯ বছরের ওই তরুণীই জনিয়েছেন, "আমার এক বন্ধুকে কয়েক সপ্তাহ আগে রাস্তায় একজন চিনা ব্যক্তি আক্রমণ করেছিল। দরদাম চলছিল। লোকটা হঠাৎ রেগে গেল এবং আমার বন্ধুকে লাথি মারল। মাথায় খুব বাজেভাবে আঘাত পেয়েছে সে। এমনটা প্রায়ই ঘটে। আমি এখন পর্যন্ত ভাগ্যবান যে এমন অভিজ্ঞতা হয়নি।” শুধু শারীরিক হিংসা নয়। যৌন সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকিতেও পড়ছেন মহিলারা। টোকিও মেট্রোপলিটন পুলিশ জাপানের কর্মসংস্থান নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে অনেককেই গ্রেফতার করেছে। পুলিশ বলছে, এই ব্যক্তিরা যৌনব্যবসায় কাজ করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের কাজে নিয়োগ করত। সন্দেহভাজনদের এই দল দেশব্যাপী প্রায় ৩৫০টি দোকানের সঙ্গে চুক্তি করে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মেয়েদের নিয়োগ করত।

জাপানের কন্সটিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য কাজুনোরি ইয়ামানোই জাপান টাইমসকে বলেছেন, "বাস্তবতা হচ্ছে জাপান এমন একটি দেশে পরিণত হয়েছে যেখানে বিদেশি পুরুষরা তরুণীদের সহজেই পেতে পারে এবং মূলত যৌন পরিষেবা কিনতে পারে। এটি কেবল ঘরোয়া সমস্যা নয়। জাপানি মহিলাদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে কীভাবে বিবেচনা করা হয় তা অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা হয়ে উঠছে।”

More Articles