বিখ্যাত সব ছবি, ভাস্কর্যে পুরুষাঙ্গের আকার এত ছোট কেন? চমকে উঠবেন কারণ জেনে
Male Body Paintings of Renaissance Period: বিশেষ করে ২০ শতকে পুরুষদের লিঙ্গের দৈর্ঘ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কখনও লক্ষ্য করে দেখেছেন বিখ্যাত সব প্রাচীন নগ্ন পুরুষের ভাস্কর্যগুলি? খুঁটিয়ে দেখলে একটি বিষয় অবাক করবে। এই সমস্ত নগ্ন ভাস্কর্যে এমনকী চিত্রগুলিতেও পুরুষদের লিঙ্গের আকার অতিরিক্ত ক্ষুদ্র। এই সময়ের প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে দেখলে অবাক লাগতে বাধ্য, কেন ভাস্কর বা চিত্রশিল্পীরা বাকি সমস্ত শারীরিক খাঁজ, বিভঙ্গ, পেশি, পেশির উপর শিরা এমনকী দেহের পেলবভাব অবধি নিখুঁত ফুটিয়ে তুললেও এই বিষয়টিতে এসে এমন আঁকতেন, বা এমনভাবে খোদাই করতেন? সেই সময়কার ন্যুড স্টাডি কেমন ছিল? যদি কোনও মডেল দেখে এঁকে থাকেন বা নির্মাণ করে থাকেন, তাহলেও প্রশ্ন জাগে সার্বিকভাবেই কেন এত ক্ষুদ্র দেখাতেন পুংলিঙ্গকে? তাহলে কি বাস্তবেই সেকালে ক্ষুদ্র ছিল পুরুষাঙ্গ? একটি সমীক্ষা সম্প্রতি বলছে, পুরুষের লিঙ্গের আকার যেমনটা শতাব্দী প্রাচীন সমস্ত ভাস্কর্যে বা চিত্রশিল্পে দেখা গেছে, তা থেকে বিগত সাত শতাব্দীতে বদলে গেছে। বিশেষ করে ২০ শতকে পুরুষদের লিঙ্গের দৈর্ঘ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষকদের একটি দল যুগে যুগে 'আদর্শ লিঙ্গের আকার' ধারণাটির মূল্যায়ন করতে চেয়েছিল। এই গবেষণার মূল উপজীব্যই ছিল, কীভাবে পুরুষদের 'আদর্শ' মাপ সাংস্কৃতিক পার্থক্য ভেদে পরিবর্তিত হয়েছে।
'আদর্শ লিঙ্গ আকার' বিষয়টি কীভাবে দেখতেন সেকালের শিল্পীরা? শিল্পে লিঙ্গের আকারের চিত্রায়ণ হতো কী ভেবে? গত সাত শতাব্দীতে কোন কোন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লিঙ্গের আকার এতখানি বদলে গেল? গবেষকরা প্রথম শতাব্দী জুড়ে যতটা সম্ভব নগ্ন পুরুষদের চিত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা চালান। বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় শিল্প ওয়েবসাইটে 'নগ্ন পুরুষ'-এর বৈচিত্র্য খুঁজতে থাকেন তারা। রেনেসাঁর পর থেকে ব্যাপক হারে নগ্ন পুরুষদের চিত্র আঁকা হতে থাকে পৃথিবীতে। সেই সমস্ত চিত্র শিল্পের মধ্যে থেকে গবেষকরা ২১টি দেশের ২৩২টি চিত্রশিল্প বেছে নেন যা ইউরোপীয় ঘরানা ঘেঁষা হলেও এই গবেষণার জন্য উপযুক্ত। তবে, কোনও ক্ষেত্রেই উত্থিত পুরুষাঙ্গের কোনও চিত্র পাওয়া যায়নি এবং নগ্ন শিশুর ছবিও মেলেনি।
আরও পড়ুন- দেওয়ালে, দরজায় সর্বত্র আঁকা পুরুষাঙ্গ! ভুটানের এই রহস্যময় রীতির আসল কারণ কী?
তবে এই আঁকা ছবিগুলির স্কেল এবং দূরত্ব পরিমাপ করা কঠিন। মানে লিঙ্গের অনুপাত বা দেহের অনুপাত কীসের সাপেক্ষে মাপা হবে? মানুষের পুরুষাঙ্গ কি বিশালাকার নাকি অন্য কিছুর সাপেক্ষে দেখাতে তা ছোট মনে হচ্ছে? এই পরিমাপের পরিবর্তে গবেষকরা লিঙ্গ-থেকে-কানের অনুপাত বা লিঙ্গ-থেকে-নাকের অনুপাত পরিমাপ করেছেন। ছবি আঁকার ক্ষেত্রে বিষয়টিকে বলে গোল্ডেন রেশিও। এই পরিমাপ থেকে এমন একটি সংখ্যা মেলে যা সময়কাল জুড়ে পুরুষাঙ্গের মাপের তুলনা করতে সাহায্য করতে পারে। মানে, যার সংখ্যা ১ এর চেয়ে কম হবে, তার অর্থ হচ্ছে লিঙ্গের আকারটি পুরুষটির কান বা নাকের চেয়ে ছোট হিসাবে আঁকা হয়েছে। সংখ্যা ১ হলে পুরুষাঙ্গের মাপ দেহের সমান অনুপাতেই আছে।
১৫ এবং ১৬ শতকের সময় নগ্ন পুরুষের চিত্রের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু প্রতিটিতেই লিঙ্গটিকে ছোট হিসাবেই দেখানো হতো। গবেষকরা দেখেন, চিত্রিত লিঙ্গের দৈর্ঘ্য পরবর্তী কয়েক শতাব্দীতে খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি, মানে ১৮০০-এর দশক অবধি তা একইরকম ছিল। তবে, ১৯ শতকের পর থেকে, পুরুষাঙ্গের ছবি আনুপাতিকভাবে বড় হতে শুরু করে।
সময়কাল | গড় লিঙ্গ থেকে কান/নাকের অনুপাত |
১৪০০-১৪৯৯ | ১.০৫৮৫ |
১৫০০-১৫৯৯ | ০.৯৫৪৫ |
১৬০০-১৬৯৯ | ০.৯৬২৩ |
১৭০০-১৭৯৯ | ১.০০২৪ |
১৮০০-১৮৯৯ | ০.৯৪০৯ |
১৯০০-১৯৯৯ | ১.২০৭৪ |
২০০০- | ১.৫৭৬১ |
গত শতাব্দীতে হঠাৎ করে পুরুষাঙ্গের আকার বৃদ্ধি পেল কেন?
গবেষকদের মতে, এই সময়ের আঁকা ছবি বা নগ্ন ভাস্কর্যে পুরুষাঙ্গের মাপ বেড়েছে, যার নেপথ্যে অন্যতম কারণ হলো পর্নোগ্রাফি! এই শতাব্দীতে আঁকা ছবিগুলিতে অতিরঞ্জিত আকারের লিঙ্গের পিছনে ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহার এবং অন্যান্য মাধ্যমের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। পিতৃতন্ত্র সেই কোন কাল থেকেই লিঙ্গের আকার এবং পুরুষত্ব, শক্তি এবং দখলদারিত্বের যোগ বেঁধে দিয়েছে। একইসঙ্গে পর্নোগ্রাফি পুরুষদের 'আদর্শ' লিঙ্গের আকারের ধারণাটি পরিবর্তন করে ফেলেছে।
আরও পড়ুন- লিঙ্গের দৈর্ঘ্যে ভারতের অবস্থান বিশ্বে কোথায়? যৌনাঙ্গের মাপ নিয়ে অবাক করা তথ্য এল সামনে
পুরুষরা নিজের লিঙ্গকে কীভাবে শক্তির সঙ্গে জোড়েন, কীভাবে মহিলারা লিঙ্গ বিষয়টির মাপ নিয়ে বিভিন্ন ধারণা সাজান সেই সবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পর্নোগ্রাফির ঢালাও ব্যবহার অতিরঞ্জিত পুরুষাঙ্গ এবং বড় লিঙ্গের প্রতি মহিলাদের বেশি আকর্ষণের ধারণাকে ইন্ধন জুগিয়েছে। পুরুষরা নিজেদের অজান্তেই ভুল ধারণার বশে নিজের পুরুষাঙ্গের আকারকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করেন, বিশেষ করে সেইসব পুরুষদের সঙ্গে যাদের পর্নোগ্রাফিতে দেখানো হয়।
গবেষকরা বলছেন, পুরুষরা গড় লিঙ্গের আকার নিয়ে অত্যধিক সচেতন। অন্যের লিঙ্গের আকারের থেকে নিজের পুরুষাঙ্গ ছোট হলে নিজেদেরকে অবমূল্যায়ন করেন অনেক পুরুষ। যদিও গড় লিঙ্গের আকার জানলে সকলেই অবাক হতে পারেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিপজ্জনক একটি বিষয় দেখা দিচ্ছে, অনেক পুরুষই লিঙ্গ বৃদ্ধির নানা রকম অস্ত্রোপচার, ওষুধ এবং টোটকা খুঁজছেন।
মেডিকেল জার্নাল বিজেইউ ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত এই গবেষণা বলছে, গবেষণার একটি খামতি থেকে যাচ্ছে যে, যেসমস্ত ছবিগুলি নিয়ে কাজ করা হয়েছে সেগুলির ইউরোপীয় ঘরানার। সুতরাং অন্যত্র বিষয়টি কতটা বৈচিত্রে ভরা তা নিখুঁত বলা যাচ্ছে না। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, আদর্শ লিঙ্গের মাপ ধারণাটি এই সময়ে বেশিই বেড়েছে। শৈল্পিক বিবর্তন আধুনিক পুরুষদের মধ্যে লিঙ্গের আকারের অপর্যাপ্ততা এবং অসন্তুষ্টি বাড়িয়েছে, অস্বীকার করে লাভ নেই।