ভণ্ড সেনা প্রেম! ইজরায়েলের হাতে ভারতীয় কর্নেলের মৃত্যুতে কেন মুখে কুলুপ মোদির?

Narendra Modi on Indian Army Colonel Death Gaza: কর্নেল কালে জাতিসংঘের হয়ে কাজ করতেন। যখন তাঁকে হত্যা করা হয় তখন তিনি জাতিসংঘেরই চিহ্নিত গাড়িতে সফর করছিলেন।

গাজায় ইজরায়েলের হাতে একজন অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনা কর্নেল নিহত হয়েছেন। সোমবার ইজরায়েলি হামলায় গাজায় কর্নেল বৈভব অনিল কালে (অবসরপ্রাপ্ত) নিহত হন। কর্নেল কালে জাতিসংঘের হয়ে কাজ করতেন। যখন তাঁকে হত্যা করা হয় তখন তিনি জাতিসংঘেরই চিহ্নিত গাড়িতে সফর করছিলেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, জাতিসংঘের যানবাহন এবং কর্মীদের উপর হামলা করা যাবে না। কিন্তু নেতানিয়াহুর অধীনে ইজরায়েল এমনই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে নিরীহ নিরস্ত্র নাগরিক, ত্রাণকর্মী এবং জাতিসংঘের কর্মীদের হত্যা করা এখানে ন্যায্য হয়ে গেছে। যুদ্ধে সবই জায়েজ! তবে আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, মোদি সরকার এই বিষয়ে চুপ!

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইজরায়েল জাতিসংঘের একটি গাড়িতে হামলা চালাল। ভারতীয় সেনার একজন প্রবীণ সেনার তাতে মৃত্যু ঘটল। অথচ এই হামলা এবং হত্যার নিন্দাও করল না মোদি সরকার? যে বিজেপি সরকারের চোখের মণি ভারতীয় সেনা, যে সেনার নামে ভোট হয় ভারতবর্ষে সেখানে ইজরায়েলের হাতে নিহত ভারতীয় প্রবীণ সেনার জন্য কেন নির্বাচনী নির্ঘণ্ট থেকে এক মুহূর্তের সময়ও বের করলেন না নরেন্দ্র মোদি? কেন চুপ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর?

ইজরায়েল ভারতের বিশেষ বন্ধু তা কারও অজানা নয়। তা বলে ইজরায়েলি বাহিনীর হাতে ভারতীয় কর্নেল কালে হত্যার নিন্দা জানাতেও পিছিয়ে থাকবে ভারত সরকার? কেন পাশে দাঁড়াবে না তাঁর পরিবারের?

আরও পড়ুন- বাড়ি নেই, গাড়ি নেই, জমি নেই, ঠিক কতটা ‘গরিব’ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি?

গত বছর ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর কর্নেল কালের হত্যা জাতিসংঘের প্রথম আন্তর্জাতিক মৃত্যুর ঘটনা। কর্নেল বৈভব অনিল কালে ২০২২ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরিবারে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী অমৃতা এবং দুই সন্তান, পুত্র বেদান্ত এবং কন্যা রাধিকা। কর্নেল কালে (৪৬) সশস্ত্র সেনাবাহিনীতে দুই দশকেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন। তাঁর গোটা পরিবারই সামরিক পরিষেবাতেই কর্মরত। কর্নেল কালে ১৯৯৮ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি কাশ্মীরে ১১ জেএকে রাইফেলসের কমান্ডার ছিলেন। উত্তর-পূর্ব এবং সিয়াচেন হিমবাহে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স এবং সন্ত্রাস দমনে নিযুক্ত ছিলেন তিনি।

সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন, কর্নেল কালে ২০০৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের কন্টিনজেন্ট চিফ সিকিউরিটি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মাত্র ৫-৬ সপ্তাহ আগেই তিনি ইউএনডিএসএস-এ যোগ দেন নিরাপত্তা সমন্বয় কর্মকর্তা হিসেবে।

 

তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সাকেত গোখলে বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে একটি চিঠি লিখে বলেছেন, "এটি খুবই মর্মান্তিক যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল গাজায় ইজরায়েলের হাতে নিহত হলো এবং নির্লজ্জ মোদি সরকার তা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করল না। রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট যে কর্নেল কালের গাড়ির উপর ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) আক্রমণ করে, যাতে তিনি নিহত হন। বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে যাতে, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে জাতিসংঘের কর্মীদের উপর সামরিক হামলা নিষিদ্ধ করা রয়েছে।"

কর্নেল কালের এই হত্যার জন্য জাতিসংঘ শোক প্রকাশ করেছে এবং ভারতের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দুঃখপ্রকাশ করেছেন। অথচ নরেন্দ্র মোদি নেতানিয়াহুর বন্ধুত্বের মান রাখতে গিয়ে ভারতীয় সেনার মৃত্যু নিয়ে চুপ!

আরও পড়ুন- এই নির্বাচনে মোদি সত্যিই প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন? যে বিস্ফোরক প্রশ্ন তুলছেন কেজরিওয়াল

ভারত আর ইজরায়েলের সম্পর্ক অস্ত্রের। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখন ভারত-ইজরায়েল সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়। ২০০৬ সালে যখন মোদি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী, তখন মোদি একটি এগ্রিটেক প্রদর্শনীতে অংশ নিতে ইজরায়েলে যান এবং ইহুদি জনগণ ও রাষ্ট্রের ব্যাপক প্রশংসা করেন। ২০১৭ সালের ৪ জুলাই ইজরায়েল সফরকারী প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হন মোদি। মোদি ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ডাকনামেই ডাকেন, ‘বিবি' বলে। বিবিও মোদিকে বলেন 'বিপ্লবী নেতা'।

গাজায় চরম নৃশংসতা সত্ত্বেও প্রথমে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভোট দেয়নি ভারত। "ভারতের জনগণ এই কঠিন সময়ে ইজরায়েলের পাশে আছে, দৃঢ়ভাবে আছে। ভারত দৃঢ়ভাবে এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে,” প্রধানমন্ত্রী মোদি হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করেছিলেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে, ইজরায়েল থেকে অস্ত্র রপ্তানির প্রায় ৪২.১ শতাংশই ভারতে এসেছে। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ইজরায়েল থেকে ভারতে অস্ত্র সরবরাহ ১৭৫ শতাংশ বেড়েছে।

২০১৭ সালে ভারত পেগাসাস সফ্টওয়্যারটি কেনে ইজরায়েলের থেকে যা দিয়ে মোদির সমালোচক কর্মী, সাংবাদিক এবং বিরোধী নেতা সহ প্রায় ৩০০ ভারতীয়র ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের উপর 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক'-এ ভারত ইজরায়েলের তৈরি 'স্পাইস ২০০০' বোমা ব্যবহার করেছিল। সুতরাং ঢালাও ব্যবসার জন্য, কূটনৈতিক সম্পর্কের খাতিরে ভারতীয় সেনার বলি দেওয়াই যায়। পুলওয়ামা, উড়ি, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে সেনাপ্রেমের ধ্বজা উড়িয়ে আসল সংকটে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াটাই বিজেপি সরকারের আসল পন্থা তবে?

More Articles