দিঘার মন্দির উদ্বোধনের পরে কেন বরখাস্ত পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের দয়িতাপতি?

Puri Jagannath Temple: ২০১৫ সালের 'নবকলেবর' উৎসবের সময় সংগৃহীত পবিত্র কাঠ দিয়ে দিঘার জগন্নাথ মূর্তি তৈরির অভিযোগের ব্যাখ্যা চাওয়া হয় দয়িতাপতির কাছে।

আগামী এক মাস, তিনি মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন না, কোনও পুজো বা সেবায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। দিঘায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে তৈরি জগন্নাথ মন্দিরে উপস্থিত থাকার 'শাস্তি'। মন্দির কর্তৃপক্ষ প্রথমে নোটিশ পাঠিয়েছিল রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্রকে। জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘দিঘা জগন্নাথ ধাম’ লেখা থাকা সত্ত্বেও কেন তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। সেই উপস্থিতির কারণেই আপাতত বরখাস্ত তিনি। 

প্রসঙ্গত, রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্র হলেন পুরীর মন্দিরের পুরনো এবং প্রবীণ সেবায়েত। রথযাত্রার সময় জগন্নাথের দেহরক্ষীর দায়িত্বে থাকেন বেশ কয়েকজন দয়িতাপতি। সেখানে কাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে, সচিব হিসেবে তা ঠিক করেন দয়িতাপতি রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্র। তবে, এবার তিনি সেই দায়িত্ব পালন করবেন কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিচ্ছে। এবার রথযাত্রা ২৭ জুন । একমাসের হিসেবে তার আগেই রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্র-র উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। তবু এই দায়িত্বে তিনিই থাকবেন কি না তা স্পষ্ট নয়। কারণ, এই বিবৃতিতেই বলা হয়েছে, এসজিটিএ (শ্রী জগন্নাথ মন্দির প্রশাসন)-র নিয়ম পালন না করা হলে আরও বাড়ানো হবে সাসপেনশনের মেয়াদ। কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে দয়িতাপতির বিরুদ্ধে। জানা যাচ্ছে যে, আগামী এক মাস নিয়মিত মন্দিরের কমান্ডার এবং সিনিয়র সুপারভাইজার দয়িতাপতি রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্রের আচরণ সম্পর্কে মতামত জানাবেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

আরও পড়ুন- ৪৬ বছর পর রহস্যফাঁস! পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্নভাণ্ডার খুলতেই যা সামনে এল

শ্রী জগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দু'টি শো-কজ নোটিশ জারি করেছিল দয়িতাপতি রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্রের বিরুদ্ধে। গত ৩০ এপ্রিল দিঘা জগন্নাথ ধামের উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যান দয়িতাপতি রামকৃষ্ণ দাস মহাপাত্র। এরপর প্রথম নোটিশটি তাঁকে দেওয়া হয় ৪ মে। সেখানে তাঁকে ২০১৫ সালের 'নবকলেবর' উৎসবের সময় সংগৃহীত পবিত্র কাঠ দিয়ে দিঘার জগন্নাথ মূর্তি তৈরির অভিযোগের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। অবশ্য তদন্তের পর ওড়িশা সরকারের আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন জানান, ২০১৫ সালের 'নবকলেবর' অনুষ্ঠানের পবিত্র কাঠ দিঘার মন্দিরে ব্যবহার করা হয়নি। দ্বিতীয় তাঁকে শো-কজ নোটিশটি পাঠানো হয় ৯ মে। সেখানে এসজেটিএ-এর তরফে দয়িতাপতির কাছে জানতে চাওয়া হয়, 'দিঘা জগন্নাথ ধাম' লেখা থাকা সত্ত্বেও ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন অংশ নিয়েছিলেন দয়িতাপতি?

পুরীর মন্দির কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছ থেকে এ ব্যাপারে লিখিত জবাব চেয়েছিল। প্রবীণ সেবায়েত সেই জবাবও দিয়েছিলেন। তবে তাঁর দেওয়া সেই জবাব মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে সন্তোষজনক বলে মনে হয়নি। সেই কারণেই প্রবীণ সেবায়েতের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ করেছে পুরীর মন্দির কর্তৃপক্ষ। প্রবীণ দয়িতাপতি রামকৃষ্ণ দাস মহাপাত্রকে ৩০ দিনের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা বহাল হয়েছে ১২ মে থেকে।

আরও পড়ুন-দিঘা জগন্নাথ মন্দির: তৃণমূলের দুর্নীতি থেকে নজর ঘুরবে সাধারণ মানুষের?

শ্রী জগন্নাথ মন্দির প্রশাসনের (SJTA) প্রধান প্রশাসক অরবিন্দ কুমার পাদ্ধি এই বিষয়ে জানিয়েছেন, মন্দিরের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, "আমাদের সকলের কর্তব্য মন্দিরের ঐতিহ্য থেকে শুরু করে আচার-অনুষ্ঠান এবং শ্রীধামের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা। এভাবেই আমরা ভগবান জগন্নাথের প্রতি আমাদের ভক্তির প্রদর্শন করতে পারি। আগামী দিনেও এই ধরনের কোনও বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না।" অরবিন্দ পাদ্ধি নিজেই বিষয়টি তদন্ত করেন এবং কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এদিকে প্রবীণ সেবায়েতকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রামকৃষ্ণ দাস মহাপাত্র বিশ্ব জুড়ে লক্ষ লক্ষ জগন্নাথ ভক্তের ভাবাবেগে আঘাত করেছেন বলে মনে করেন বিজেপি নেতা। 

More Articles