তমলুকে দেবাংশুকে জেতানোর প্রশ্নে তৃণমূলই হাত তুলে নিচ্ছে?
Debangshu Bhattacharya Tamluk: সায়ন যত ভোট বাড়াতে পারবেন, দেবাংশুর তত সুবিধা। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে লক্ষ্মণ শেঠ উত্তর বাম ভোট গত কয়েকটি নির্বাচনে বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে।
হাইভোল্টেজ লড়াই তা নিয়ে সন্দেহ নেই। প্রাথমিকভাবে যে লড়াইটাকে একপেশে মনে হচ্ছিল, সেই লড়াই এখন চলছে প্রায় সেয়ানে সেয়ানে। আপাত দৃষ্টিতে দেখে যে লড়াইকে তারুণ্যের জোশের সঙ্গে সদ্য প্রাক্তন বিচারপতির প্রজ্ঞার মনে হলেও, আদতে এ লড়াই তারুণ্যের সঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার নিজের গড় আগলানোর। এই মুহূর্তে গোটা রাজ্যে যে ক'টা আসনে মানুষের চোখ রয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক আসনটি তার মধ্যে অন্যতম। সমুদ্র তীরবর্তী এই জেলায় ঘূর্ণিঝড় চোখ রাঙাচ্ছে যেমন, তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভোটের উত্তাপ!
পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় আড়াই মাস। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ থেকে হঠাৎ করে ইস্তফা দেওয়ার পরপরই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যোগ দিলেন বিজেপিতে। এতদিন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতিটি পদক্ষেপে উল্লসিত বাম আর কংগ্রেস শিবিরকে কার্যত 'বোকা' বানিয়ে অভিজিৎ যোগ দেন বিজেপিতে। বিজেপিও যে তাঁর জন্য একটি 'সেফ সিট'-এর ব্যবস্থা করে রাখবে, সেটাই স্বাভাবিক। নয়তো কলকাতানিবাসী অভিজিৎকে কেনই বা পূর্ব মেদিনীপুরের আনকোরা জমিতে লড়তে পাঠাবে বিজেপি?
আসলে, হিসেব পরিষ্কার। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্বেই দলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় যে ক'টি আসনে নিজেদের জয় নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না বিজেপি নেতৃত্বের তার মধ্যে তমলুক অন্যতম। আর এই আত্মবিশ্বাস থাকবে নাই বা কেন? এই লোকসভা স্বয়ং বিরোধী দলনেতার গড়। ২০০৯ সাল থেকে হয় শুভেন্দু অধিকারী নিজে অথবা তাঁর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী এই আসন থেকে সাংসদ হয়েছেন। ২০১৬ থেকে শুভেন্দু অধিকারী এই লোকসভারই অন্তর্গত নন্দীগ্রাম বিধানসভার বিধায়ক!
আরও পড়ুন- দেবাংশু না অভিজিৎ, তমলুকে ভোটের লড়াইয়ে এগিয়ে কে?
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ১৯৫৬ ভোটে হারিয়ে দেওয়া নিয়ে তাঁর গলা থেকে যে গর্ব রাজ্যের প্রতি প্রান্তের জনসভা থেকে ঠিকরে বেড়োয়, সেটা গত ৩ বছরে বাংলার প্রায় সবাই শুনেছেন। যদিও নন্দীগ্রাম বিধানসভার ফলাফল এখনও আদালতে বিচারাধীন। কিন্তু তাতে কীই বা যায় আসে! শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম বিধানসভার বিধায়ক এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা! ফলে তমলুক লোকসভার লড়াই এখন একা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নয়, শুভেন্দু অধিকারীর নিজের গড় বাঁচানোর লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। আর গোটা তমলুক লোকসভা জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন দুই তরুণ!
তৃণমূলের দেবাংশু ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যখন তমলুক আসন থেকে বিজেপির টিকিটে মনোনীত হন প্রার্থী হিসেবে, তৃণমূল অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিপক্ষে কোনও দুঁদে রাজনীতিকের বদলে এগিয়ে দেয় ২৮ বছরের দেবাংশু ভট্টাচার্যকে। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, এই আসনটি যেন একপ্রকার অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে উপহারই দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূলের কোনও বড় নামই ঠাঁই পায়নি। এমনকী উত্তর কলকাতার এক প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ, সাংবাদিক 'বাগ্মী' তৃণমূল নেতার নাম নিয়েও আলোচনা হয়েছিল। যিনি গত পঞ্চায়েত এমনকী লোকসভা নির্বাচনের তিন মাস আগেও নাকি দলের নির্দেশেই পূর্ব মেদিনীপুরের সংগঠন দেখছিলেন। গত দেড় দুই বছর ধরে টেলিভিশনের পর্দায় সেই তৃণমূল নেতা ক্রমাগত আক্রমণ করে গেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তারপরেও যখন সবাইকে বাদ দিয়ে ২৮ বছরের দেবাংশুকে তমলুক আসনে লড়তে পাঠালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা তখন অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন এই আসনটি বুঝি বিজেপির কাছে 'কেক-ওয়াক'!
কিন্তু, রাজনীতি সততই সম্ভাবনার শিল্প। রাজনৈতিক দল-নেতা-বিশ্লেষকরা ভাবেন এক আর সাধারণ মানুষ উলটে দেয় যাবতীয় হিসেব-নিকেশ। গত দু'মাসে দেবাংশু ছুটে বেড়িয়েছেন গোটা লোকসভা। তাঁর সভায় যুব সমাজের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয় ভাবে বেড়েছে। আর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মেজাজ হারিয়েছেন বারবার। রাজনীতির রুক্ষ জমি যে তাঁর এজলাস নয়, তা আয়ত্ত করতে খানিক সময় নিয়ে ফেলেছেন সদ্য প্রাক্তন বিচারপতি। এখানে তিনি একজন ভোটপ্রার্থী, ফলে কর্মীদের সঙ্গেও তাঁকে প্রার্থী হিসেবেই নমনীয় হয়ে কথা বলতে হবে। ভোট 'করান' কর্মীরাই। এদেশে ভোট হয় না। ভোট করাতে হয়। কিন্তু গত দু'মাসে কখনও সংবাদমাধ্যমের সামনে, কখনও প্রকাশ্য মঞ্চে কুকথার স্রোত বইয়ে দিয়েছেন অভিজিৎ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে তাঁর করা কুৎসিত মন্তব্যের প্রেক্ষিতে, একদিনের জন্য তাঁর প্রচার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যে 'ইমেজ' নিয়ে অভিজিৎ তমলুক গেছিলেন, যত দিন গেছে সেই ইমেজ ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে।
শিক্ষিত, সৎ, অন্য পেশার সফল মানুষ রাজনীতিতে এলে, রাজনীতির গড্ডালিকা প্রবাহে যে একটা ঝাঁকুনি আসে, এমন একটা ধারণা অভিজিৎকে নিয়েও ছিল কিন্তু গত দু'মাসে অভিজিৎ নিজেই সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছেন। কুকথার শরণে গেছেন।
উল্টোদিকে, প্রথম প্রথম দেবাংশুর পক্ষে সেরকম জনসমর্থন না থাকলেও ধীরে ধীরে 'পাশের বাড়ির ছেলে' ইমেজ নিয়ে দেবাংশু মানুষের বাড়িতে বাড়িতে চলে যান। সায়নও নিজের মতো করে গোটা লোকসভা ক্ষেত্রে ঘুরতে শুরু করেন। দেবাংশু বা সায়ন কারও মুখেই এখনও অবধি কেউ কোনও কুকথা শোনেননি। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ রাজনীতিতে নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করে। ঘৃণা-ক্লেশ-অসূয়া মুক্ত রাজনীতি হোক, এমনটাই চায় এদেশের শিক্ষিত সমাজ। সেক্ষেত্রে দেবাংশু এবং সায়ন দু'জনেই বিদ্বেষহীন সমাজের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, তা স্বীকার করতেই হয়।
আরও পড়ুন- অভিজিৎ, দেবাংশু বনাম সায়ন, তমলুকে কতটা কঠিন হতে চলেছে বামেদের লড়াই?
আর এখানেই রাজনীতির অঙ্ক। সায়ন যত ভোট বাড়াতে পারবেন, দেবাংশুর তত সুবিধা। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে লক্ষ্মণ শেঠ উত্তর বাম ভোট গত কয়েকটি নির্বাচনে বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে। একসময়ের লালদুর্গ (পড়ুন লক্ষ্মণ দুর্গ) হলদিয়ায় এখন বিজেপির দাপাদাপি। চারদিকে গেরুয়া পতাকা। 'রাগী হনুমানে'র ছবি দেওয়া পতাকায় ছয়লাপ শিল্পাঞ্চল। গত বিধানসভা নির্বাচনেও এই আসনটি জিতেছেন বিজেপির তাপসী মণ্ডল। তমলুক লোকসভার সাতটি বিধানসভার মধ্যে ৪টি (তমলুক, মহিষাদল, নন্দকুমার, পাঁশকুড়া পূর্ব) এই মুহূর্তে তৃণমূলের দখলে। বিজেপির দখলে ৩টি (নন্দীগ্রাম, ময়না, হলদিয়া)। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী এই লোকসভার ৭ টি বিধানসভার মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ৪৬% ভোট, বিজেপি ৪৫.৯% ভোট, বামেরা ৫%, কংগ্রেস ০.৩%, আই এস এফ ০.৯% ভোট। অর্থাৎ, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন অনুযায়ী, তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যে পার্থক্য মাত্র ০.১% ভোটের। আবার ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল পেয়েছিল ৪৬%, বিজেপি ৪১% বামেরা অনেকটা শক্তিবৃদ্ধি করে ১১%। যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে ভূরি ভূরি অভিযোগ তখন করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। রাজ্য পুলিশ দিয়ে নির্বাচন এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলকে তিনি মানুষের রায় হিসেবে মানেন না বলেই ঘোষণা করে দিয়েছেন। কিন্তু, একটা বিষয় পরিষ্কার, বামেদের ভোট বৃদ্ধি পেলে বিজেপির ভোট কমছে। গোটা রাজ্য জুড়েই এই 'ট্রেন্ড'। স্বাভাবিকভাবেই সায়ন যত ছুটবেন, দেবাংশু তত লাভবান হবেন। আর চিন্তার ভাঁজ পড়বে বিরোধী দলনেতার কপালে।
তাই জন্যই কি খোদ বিরোধী দলনেতার বিধানসভা নন্দীগ্রামে প্রচারে বাধা দেওয়া হলো বামপ্রার্থী সায়নকে! তমলুক লোকসভার মোট ভোটারের ১৪% তপশিলি জাতি ভুক্ত। তপশিলি উপজাতি ০.২%। এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘু ভোটার ১৬%। গোটা রাজ্যের তুলনায় সংখ্যালঘু ভোট যথেষ্ট কম। ফলে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা অভিন্ন দেওয়ানি নীতি এবং সাম্প্রতিকতম আরএসএসের মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের ২০১১ সালের পরের ওবিসি জাতিগত শংসাপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ার 'সুফল' অনান্য লোকসভায় তৃণমূল ভোটবাক্সে তুললেও এই লোকসভায় সংখ্যালঘু ভোটার কম হওয়ায় তার খুব একটা সুফল তৃণমূল পাবে না।
যদিও, গত দু'মাসে তমলুকের নির্বাচনী অঙ্কে অনেক বদল এসেছে। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে যেমন মনে হচ্ছিল, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের জয় স্রেফ সময়ের অপেক্ষা, সেই অঙ্কই অনেক জটিল হয়ে গেছে। তমলুকের মাটিতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, তৃণমূলের লড়াই আর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে নয়, সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। তাই গোটা রাজ্যের পাশাপাশি নিজের লোকসভাতেও বাড়তি দায়িত্ব নিতে হচ্ছে শুভেন্দুকে।
আর এখানেই উঠে আসছে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের ছবিটাও। প্রথমদিকে দেবাংশুর প্রচারে তৃণমূলের জেলার বড় নেতারা নামেননি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংগঠনিক বৈঠক করে নির্দেশ দিয়ে যাওয়ার পরে নেতৃত্বের একাংশ দেবাংশুর সমর্থনে মিটিং মিছিল করলেও এখনও কিছু নেতা 'দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে' আছেন। এই নেতাদের এক শ্রেণির সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে নানা রটনা জেলা রাজনীতির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়। আবার কিছু কাউন্সিলর, কিছু জেলা পরিষদ সদস্যরাও অদ্ভুতভাবে নিষ্ক্রিয়। এদের অনেকের বিরুদ্ধেই শুভেন্দু অধিকারী আগে বহুবার প্রকাশ্যে নাম নিয়ে বা নাম না নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি যে আজকাল শুভেন্দু অধিকারীর কথায় চলে এমন একটা ধারণা রাজ্যজুড়েই চালু হয়েছে। ফলে ইডি-সিবিআইয়ের তদন্ত থেকে বাঁচতেও কিছু তৃণমূল নেতা এই নির্বাচনে সক্রিয় নন!
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিপুল টাকা খরচের প্রসঙ্গ। সম্প্রতি রাজ্য সরকার 'নাকা চেকিংয়ে' লাখ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে এই জেলায়। এই বিপুল পরিমাণ টাকা নির্বাচনে ব্যবহার হচ্ছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। মূলত গ্রামের দিকে ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে 'কাঁচা টাকা' তুলে দেওয়ার অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে তুলছেন তৃণমূল নেতারা। দেবাংশু ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠবৃত্তের এক তৃণমূল নেতার অভিযোগ, "কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন শুভেন্দু। ওঁর ওই বিপুল টাকার সামনে আমাদের একটাই শক্তি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইমেজ।"
আরও পড়ুন- ফেসবুক থেকে টার্গেট সংসদ! দেবাংশু ভট্টাচার্যের উত্থানের গতি অবাক করবে…
আর সংগঠন? প্রশ্ন করার আগেই ফোনের লাইন কেটে যায়। একসময় যে পূর্ব মেদিনীপুরে লালদুর্গের পতন ঘটিয়ে প্রথম জেলা পরিষদ জিতেছিল তৃণমূল, সেই জেলাতেই তৃণমূলের আজ এতটা কঠিন অবস্থা কেন? কেবলই একটি পরিবারকেন্দ্রিকতা বা ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার জন্য। ২০০৯ সালে শুভেন্দু অধিকারী সাংসদ হন এই তমলুক থেকেই। ২০২০-তে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া অবধি গোটা জেলায় দলের রাশ ছিল শুভেন্দু এবং তাঁর পরিবারের হাতেই। প্রায় সাড়ে তিন বছরেও শুভেন্দু অধিকারীর বিকল্প মুখ জেলা রাজনীতিতে তুলে আনতে ব্যর্থ হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব! যেসমস্ত নেতারা আছেন, তাঁরাও নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ।
সিপিএম নেতৃত্বও শুধুমাত্র 'শুভেন্দু'র সন্ত্রাস' বলে আর কতদিন চালাবেন? এইভাবে নিজেদের দায় এড়ানো যায় কি? যে হলদিয়া শিল্পাঞ্চল তৈরি করা নিয়ে আজও সিপিএমের তরুণ তরুণীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় গর্ব মাখা পোস্ট করেন, সেই হলদিয়া শিল্পাঞ্চলেই হলদি নদীতে সিপিএমের বিলীন হয়ে যাওয়া নিয়ে, নির্বিকার কেন বাম নেতৃত্ব? লক্ষ্মণ শেঠের পরে পূর্ব মেদিনীপুরে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো মুখ কেন খুঁজে পেল না সিপিআইএম?
পূর্ব মেদিনীপুর সাক্ষী থাকছে এক অসম লড়াইয়ের। একদিকে বছর আঠাশের এক যুবক আর অন্যদিকে এক দুঁদে রাজনীতিবিদ। প্রথমজন জীবনের প্রথম নির্বাচনী লড়াইটাই করছেন লোকসভা নির্বাচন দিয়ে! জিতলেই ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেলবেন। আর উল্টেদিকে এক পঞ্চাশের প্রবীণ, যিনি লড়ছেন নিজেদের গড় বাঁচাতে। তমলুকের মাটিতে বাজছে 'খেলা হবে'। গানের স্রষ্টাই খোদ প্রার্থী। 'খেলা' তো হবেই, জিতবে কে সেদিকেই তাকিয়ে গোটা বাংলা!