বাংলায় এত অবাঙালি প্রার্থী কেন তৃণমূলের?
TMC Non Bengali Candidate List: গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, তৃণমূল অবাঙালিকে দাঁড় করাচ্ছে এই ধারণা থেকেই যে আসানসোল, কুলটি এই পশ্চিমাঞ্চল তো আসলে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে আসা মানুষেরই জায়গা।
ব্রিগেডে জনগর্জন সভায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে তৃণমূল। পাঁজি দেখে কালীঘাট থেকে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার যে চিরাচরিত নিয়ম তা এবার দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, প্রার্থী তালিকাও অভিনব। দুর্গাপুর বর্ধমান আসনে তৃণমূলের প্রার্থী কীর্তি আজাদ। বহরমপুরে তৃণমূলের প্রার্থী ইউসুফ পাঠান। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জনগর্জন সভার মঞ্চ থেকে বলেছিলেন, এবারের রায় বহিরাগত বিদায়। বিরোধীরা তাঁর যুক্তিকে ঢাল করেই প্রশ্ন করছে কীর্তি বা ইউসুফ কি বহিরাগত নন?
কুণাল ঘোষের যুক্তি, বহিরাগত শব্দটা ভৌগোলিক ভাবে ভাবলে চলবে না। এটা রূপক মাত্র। যারা ১০০ দিনের টাকা দেয় না, বাংলার মনীষীদের অপমান করে তারাই বহিরাগত।
কোন অঙ্কে কীর্তি আজাদকে এই আসনে দাঁড় করাল তৃণমূল? যুক্তি বলছে, এই আসনে বিজেপির হয়ে জয়লাভ করেছিলেন সুরিন্দর সিং অহলুআলিয়া। এলাকায় তাঁকে দেখা যায় না বলে 'নিখোঁজ' পোস্টার পড়েছিল। সুরিন্দরে বিক্ষুব্ধ অবাঙালি ভোট টানতেই কীর্তিকে বেছে নেওয়া। তবে কীর্তির কীর্তির কোনও শেষ নেই। অতীতে তিনি বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ক্রিকেট দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁর পদ যায়। তারপর নাম লিখিয়েছিলেন কংগ্রেসে। শেষে এসে তরী ভিড়েছে তৃণমূলে।
আরও পড়ুন- লোভীদের স্বর্গরাজ্য তৃণমূল, টিকিট না পেলেই আলবিদা বলেন যারা
একই সুরে তৃণমূলকে বিঁধছে বিজেপি, সিপিএমও। দিলীপ ঘোষের প্রশ্ন, বাংলায় কি লোক নেই? মহম্মদ সেলিম বলছেন, নায়ক-গায়ক কোটা শেষ হয়ে গিয়েছে তাই এবার বাইরের রাজ্য থেকে লোক ধরে আনতে হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠছে ইউসুফ পাঠানকে নিয়েও। একদিকে যেমন অধীর চৌধুরীর মতো দাপুটে রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে তিনি কীভাবে দাঁড়াবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে, তেমনই আবার কথা বোঝার সমস্যাও মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বহরমপুর বাংলাভাষী মুসলিম অধ্যুষিত। হিন্দিভাষী ইউসুফ কীভাবে তাদের সঙ্গে সংলাপ করবেন?
বাংলায় বাঙালি প্রার্থী দিতে হিমশিম খাচ্ছে তৃণমূল! প্রার্থীভাণ্ডারের এমন দেউলিয়া দশা হলো কেন তাঁদের? বাংলাপক্ষর তরফে গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, পশ্চিম বর্ধমানের দুই কেন্দ্রেই অর্থাৎ আসানসোল এবং বর্ধমান দুর্গাপুরে দুইজন প্রার্থীই, অর্থাৎ শত্রুঘ্ন সিনহা ও কীর্তি আজাদ অবাঙালি, বিহারি। ইউসূফ পাঠান গুজরাতের মানুষ। কৃষ্ণকল্যাণীও বাঙালি নন। "এটা কি অন্য কোনও রাজ্যে ঘটে? কোনও বাঙালিকে কি গুজরাতে, তামিলনাড়ুতে, রাজস্থানে প্রার্থী করা হবে? তাহলে বাংলায় এমন মঙ্গলগ্রহসুলভ নিয়ম কেন?" প্রশ্ন গর্গর।
আরও পড়ুন-বাংলা ভাষা বাঁচাতে বাংলাপক্ষ আদৌ প্রয়োজনীয়?
গর্গ বলছেন, আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপি পবন সিং নামের একজন বাঙালি বিদ্বেষী, বাঙালি মহিলা বিদ্বেষীকে প্রার্থী করেছিল। বিজেপি তো পবন সিংকে হারানোর জন্য নয়, জেতানোর জন্যই দাঁড় করিয়েছিল। তার অর্থ কি তাহলে এই যে বাংলায় বহিরাগত জনসংখ্যা এত বেড়ে গিয়েছে যে তারাই এখন ভোটের নির্ণায়ক! গর্গর ব্যাখ্যা, তৃণমূলও এসব আসনে অবাঙালিকে দাঁড় করাচ্ছে এই ধারণা থেকেই যে আসানসোল, কুলটি এই পশ্চিমাঞ্চল তো আসলে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে আসা মানুষেরই জায়গা। তাই অবাঙালিই বেশি। আসানসোলে দোলা সেন বাঙালি প্রার্থী ছিলেন, হেরে গেছেন, মুনমুন সেন বাঙালি প্রার্থী ছিলেন, হেরে গেছেন। বাবুল সুপ্রিয়কে বহিরাগত বিজেপির লোকই ভোট দিয়ে জিতিয়ে দিয়েছে। এবার যদি শত্রুঘ্ন সিনহা বনাম পবন সিং লড়াই হতো তাহলে তা হতো বাংলার মানুষের জন্য দুই অবাঙালির লড়াই! গর্গ সাফ বলছেন, "বহিরাগত তোষণ বন্ধ না হলে বিপদ। কোনও বহিরাগতকে ভোট দেওয়া চলবে না। বিজেপির তো কাউকেই নয়, তৃণমূল বা সিপিএম বা কংগ্রেস যারই বহিরাগত প্রার্থী হোক, ভোট দেওয়া যাবে না। বহরমপুর কেন্দ্রে অধীর রঞ্জন চৌধুরী দাঁড়ালে, ইউসূফ পাঠান নন অধীরকেই জয়যুক্ত করা হোক।"
যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, সিএএ চালু হওয়ার মানে তীব্র মেরুকরণ। এক্ষেত্রে মুসলিম সমাজ প্রার্থী দেখে ভোট দেবে না। মোদি বিরোধী মুসলিম ভোট সবটাই যাবে তৃণমূলে। সে ক্ষেত্রে প্রার্থী মুসলিম হলে সুবিধেই বেশি।
বহিরাগত ট্যাগ ত্যাগ করতে চেয়ে কীর্তি আজাদ অবশ্য বলছেন, "আমি মিথিলাঞ্চলের লোক। মৈথিলের সঙ্গে বাংলা সংস্কৃতির অনেক কিছুই মেলে। বাংলা ভাষাটা আমি শিখে নেব।" বাংলার উন্নয়নে তৃণমূলের এই অবাঙালি আস্থা কি ধীরে ধীরে বিজেপির জমিই প্রস্তুত করে দিচ্ছে না?