ইরান হামলার বিরোধিতা থেকে কেন সমর্থনে ট্রাম্প?

Iran Israel Conflict: মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠজন বলছে, ট্রাম্প প্রথমে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে হামলা না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

প্রাথমিকভাবে অন্তত ইরানের বিরুদ্ধে ইজরায়েলি সামরিক হামলার বিরোধিতা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি চেয়েছিলেন, কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান হোক। কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে মতবদল, বলা চলে মনবদল খামখেয়ালি ট্রাম্পের। এখন, ইজরায়েলের হামলার যৌক্তিকতা মেনে নিয়ে তিনি প্রচ্ছন্ন সমর্থনই জুগিয়ে চলেছেন। প্রশ্ন হলো, কেন? কেন সিদ্ধান্ত বদল করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট?

গত রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশ্রামকক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। ইজরায়েলের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই তাঁদের পরিকল্পনা সম্পর্কে মার্কিন কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন। মার্কিন যৌথ সেনা প্রধান জেনারেল ড্যান কেইন ট্রাম্পকে ইজরায়েলের পরিকল্পনা এবং মার্কিন সমর্থনের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত জানান। এই বৈঠকে ট্রাম্প বুঝতে পারেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইজরায়েলের উদ্বেগ যথেষ্ট গুরুতর। সূত্রের খবর, এর পরেই ট্রাম্প ইজরায়েলকে হামলার অনুমতি দেন এবং প্রচ্ছন্ন মার্কিন সহায়তার কথা বলেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠজন বলছে, ট্রাম্প প্রথমে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে হামলা না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন কারণ তিনি ভেবেছিলেন, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু ইজরায়েলের দৃঢ় সিদ্ধান্ত এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অগ্রগতি সম্পর্কে ক্রমে অবহিত হয়েই নাকি তিনি মত বদলান। জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা আইএইএ-র একটি ঘোষণার কথাও এখানে উল্লেখ্য। সংস্থাটি স্পষ্ট জানায়, ইরান তাদের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

আরও পড়ুন- কেন ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস-কে নিশানা করেছে ইজরায়েল?

ইজরায়েল বৃহস্পতিবার রাতে ইরানে হামলা শুরু করে। এই হামলায় তারা ইরানের পারমাণবিক পরিকল্পনা এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অংশ টার্গেট করে। মার্কিন প্রশাসন প্রথমে জানায়, তারা এই হামলায় কোনও সামরিক সহায়তা দেয়নি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে এই হামলাকে ইজরায়েলের একতরফা পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু পরের দিন মার্কিন প্রশাসনের বিবৃতিতে ইঙ্গিত মেলে, তারা ইজরায়েলকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেছে।

ইজরায়েলের এই হামলার জবাবে তেহরানও তেল আভিভে পাল্টা হামলা চালায়। তেহরানে ইজরায়েলের হামলায় ২২৪ জন নিহত হয়, বলছে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। অন্যদিকে, ইরানের হামলায় ইজরায়েলে ২৪ জনের মৃত্যু হয়। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাৎজ ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইরানের জনগণকে এর মূল্য দিতে হবে।”

তবে সূত্রের খবর, ট্রাম্প প্রশাসন এখনও কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোলা রেখেছে। এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, “আমরা আলোচনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আশা করি ইরান শিগগিরই আলোচনার টেবিলে ফিরবে।” তবে, ইজরায়েল এবং ইরানের মধ্যে চলমান এই সংঘাত কূটনৈতিক আলোচনার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্পের অবস্থান বদল নিয়ে মার্কিন মুলুকে চর্চা চলছে। তিনি একদিকে ইজরায়েলের প্রতি সমর্থন দেখাচ্ছেন, অন্যদিকে ইরানের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনাও তিনি বন্ধ করতে চান না। এই দ্বৈত নীতি তাঁর পররাষ্ট্রনীতি যুদ্ধ পরিস্থিতে আদৌ উত্তেজনা প্রশমন করবে? প্রশ্ন থাকছে।

More Articles