কেন জম্মু ও কাশ্মীরে ২৫ টি বই নিষিদ্ধ করা হলো?
Jammu and Kashmir: নিষিদ্ধ বইগুলির মধ্যে রয়েছে প্রখ্যাত লেখিকা অরুন্ধতী রায়ের 'আজাদি', এজি নুরানির লেখা ‘দ্য কাশ্মীর ডিসপিউট (১৯৪৭-২০১২)' এবং প্রসিদ্ধ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমন্ত্র বসু-র 'কাশ্মীর অ্যাট দ্য ক্রসরোডস'।
জম্মু ও কাশ্মীর সরকার জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ২৫টি বই নিষিদ্ধ করেছে। এর মধ্যে রয়েছেন বুকারজয়ী সাহিত্যিক অরুন্ধতী রায়, ভারতীয় সংবিধান এবং কাশ্মীর বিশেষজ্ঞ এজি নুরানি শেখ এবং লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও তুলনামূলক রাজনীতি বিষয়ের অধ্যাপক সুমন্ত্র বোস-সহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট লেখকের লেখা বই। কেন এই পদক্ষেপ নিল জম্মু ও কাশ্মীর সরকার? কী কী বই নিষিদ্ধ করা হলো?
জম্মু–কাশ্মীরের উপ–রাজ্যপাল মনোজ সিনহার নির্দেশ অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখ্য সচিব চন্দ্রকর ভারতী ৫ আগস্ট একটি নির্দেশিকা জারি করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২০২৩-এর ৯৮ ধারার আওতায় ২৫ টি বইকে 'বাজেয়াপ্ত' ঘোষণা করা হয়। এসব বইয়ে সন্ত্রাসবাদকে গৌরবান্বিত করে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। এছাড়াও বলা হয়েছে, বইগুলিতে জম্মু ও কাশ্মীরের 'মিথ্যা বর্ণনা' করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-ফিলিস্তিনি-ক্ষতর শুশ্রুষা হবে না কোনও মলমেই: অরুন্ধতী রায়
নিষিদ্ধ বইগুলির মধ্যে রয়েছে প্রখ্যাত লেখিকা অরুন্ধতী রায়ের 'আজাদি', এজি নুরানির লেখা ‘দ্য কাশ্মীর ডিসপিউট (১৯৪৭-২০১২) এবং প্রসিদ্ধ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমন্ত্র বসু-র 'কাশ্মীর অ্যাট দ্য ক্রসরোডস'। এছাড়াও তালিকায় থাকা অন্যান্য লেখকদের মধ্যে রয়েছেন ডেভিড দেবদাস, হাফসা কাঞ্জওয়াল, আথের জিয়া, অনুরাধা ভাসিন এবং তারিক আলী।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তদন্তে উঠে এসেছে এই প্রকাশনাগুলি ঐতিহাসিক তথ্য বিকৃত করেছে, নিরাপত্তা বাহিনীকে অপমান করেছে এবং সহিংসতা প্রচার করে তরুণদের উগ্রপন্থী করে তুলতে চেয়েছে। এছাড়া সাহিত্যকর্মগুলি জম্মু-কাশ্মীর প্রসঙ্গে মিথ্যা তথ্য খাড়া করছে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদকে প্রশ্রয়দানকারী মতপ্রকাশ করছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও লেখা হয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের যুব সমাজের মধ্যে হিংসা ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে উৎসাহ জোগাতে ঐতিহাসিক কিংবা রাজনৈতিক ভাষ্যের আড়ালে সাহিত্যকর্মের নামে মিথ্যা বক্তব্য ও বিচ্ছিন্নতাবাদের বিষ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলছে।
আরও পড়ুন-পড়াশোনা ছেড়ে আন্দোলনে! ভারতীয় ছবির ‘রস’ প্রথম বুঝিয়েছিলেন দেবকী বসুই
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের বিশ্লেষণ, এই নিষেধাজ্ঞার অন্যতম কারণ হতে পারে রাজনীতি। সম্ভবত বাজেয়াপ্ত করা লেখক লেখিকাদের রাজনৈতিক বা আদর্শিক অবস্থানকে সমর্থন করে না সরকার পক্ষ। যেহেতু ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ এবং বিভাজনবাদের সমালোচনা এবং ভারতে বহুত্ববাদের পক্ষে সমর্থনই এই বিশিষ্ট মানুষদের কাজের নিরবচ্ছিন্ন অংশ, তাই তাঁদের বইয়ে নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
উল্লেখ্য, ১৫ বছর আগে দিল্লিতে ‘আজাদি দ্য অনলি ওয়ে’ শীর্ষক আলোচনাসভায় কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় ২০২৪ সালে মামলা রুজু হয় অরুন্ধতী রায়ের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ ঘিরে তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলাও হয়। তখন জাতিসংঘের শীর্ষ মানবাধিকার আধিকারিক এবং বিভিন্ন সংগঠন ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে কাশ্মীর নিয়ে মন্তব্যের জন্য অরুন্ধতীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিল। তবে এসবের মধ্যেই ওই বছর সারা বিশ্বে সমাদৃত সাহিত্য পুরস্কার ‘পেন পিন্টার’ পান অরুন্ধতী রায়।

Whatsapp
