শনিবার কী ঘটল যাদবপুরে? জানুন ঘটনার নেপথ্যে কারা
Jadavpur University Chaos : ঘটনা শনিবার ঘটলেও, ঘটনার সূত্রপাত প্রায় এক সপ্তাহ আগেই। SFI সদস্য শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ইনস্ক্রিপ্টকে জানিয়েছে, তারা প্রায় এক সপ্তাহ আগে জানতে পারে ক্যাম্পাসে ব্রাত্য বসু আসবেন।
আশু-তিমিরের যাদবপুর। হোক কলরবের যাদবপুর। সময়ের বহমানতায় বদলায়নি আজও। শনিবার সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর আগমন সেই আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করল।
মার্চের প্রথম দিন শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল তৃণমূলপন্থী অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার সভা। যার সভাপতি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। যদিও এদিন তিনি মন্ত্রী পদাধিকারী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি, সংগঠনের সভাপতি হিসেবেই এসেছিলেন বলে দাবি তৃণমূলের তরফে।
ছাত্ররা তাদের দাবি জানাতে ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দেখা করে ডেপুটেশন জমা দিতে চাইছিল। সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী SFI-এর তিন প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করেন এবং ডেপুটেশন জমা নেন বলেও খবর। কিন্তু তারপরও কেন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হল? SFI-এর দাবি অন্যান্য বামপন্থী ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরাও ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দেখা করে ডেপুটেশন জমা দেওয়ার জন্য সভাস্থলের বাইরে অপেক্ষা করছিল। সেই সময় তৃণমূলের দিক থেকে তাদের উপর আক্রমণ নেমে আসে বলে অভিযোগ। এর বিরোধিতা করে SFI ও অন্যান্য বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি। তাঁরা দাবি তোলে আজই ব্রাত্য বসুকে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি ঘিরে ধরে বিক্ষোভ শুরু হয় ছাত্রদের। গাড়ির বনেটেও উঠে পড়ে এক ছাত্র। অভিযোগ, ব্রাত্য বসুর গাড়ি এগিয়ে যেতে থাকে তার মধ্যেই। অভিযোগ, অভিনব বসু নামের এক পড়ুয়ার পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চলে যায়। গাড়ির তলায় চলে আসে আর এক ছাত্র ইন্দ্রানুজ রায়। রক্তাক্ত ও গুরুতর আহত হয়ে সেই ছাত্র কেপিসি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোজা এসএসকেএম যান। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সন্ধ্যায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে খবর। ছাত্ররা গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়েছে বলে অভিযোগ। কাচের টুকরো এসে লেগেছে মন্ত্রীর হাতে ও মুখে। ব্রাত্য বসুর গাড়ির একটি চাকার হওয়া খুলে দেওয়া হয় বলেও ইনস্ক্রিপ্টকে জানান পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। ছাত্রদের উপর তৃণমূলের আক্রমণ করার অভিযোগ নিয়ে তৃণাঙ্কুরের বক্তব্য, “কী ঘটেছে সবাই দেখেছে। এদের বাঁদরামির শেষ হওয়া দরকার। বছরের পর বছর ক্যাম্পাসের মধ্যে নৈরাজ্য চালাচ্ছে। আমরা এটা মানবো না। এতদিন আমাদের সংবেদনশীলতা দেখিয়েছি। জানি না এটা কতদিন ধরে রাখতে পারব।”
অন্যদিকে SFI-এর অভিযোগ অধ্যাপকদের অনুষ্ঠানে তৃণমূলের লোক উপস্থিত ছিল। তারাই প্রথমে ছাত্রদের আক্রমণ করে। এই অভিযোগ মিথ্যে বলে দাবি তৃণাঙ্কুরের।
ঘটনা শনিবার ঘটলেও, ঘটনার সূত্রপাত প্রায় এক সপ্তাহ আগেই। SFI জানতে পারে ক্যাম্পাসে ব্রাত্য বসু আসবেন। তখনই SFI বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিত আবেদন জানায় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের দাবি নিয়ে। কর্তৃপক্ষ তরফে জানানো হয় এই খবর ব্রাত্য বসুকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বৈঠক হবে কিনা এই ব্যাপারে কোনো খবর SFI পায় না। ফলে ওয়েবকুপার সভার দিন সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি। সেই বিক্ষোভ এড়াতে ব্রাত্য বসুকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হয় ৩ নং গেট দিয়ে। ওয়েবকুপার সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী “বাম ও অতিবামেরা সভায় বাধা সৃষ্টি করতে চায় নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা,” এমন মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ SFI-এর। তাতেই ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে ছাত্রদের মধ্যে।
সে আগুন জ্বলে শনিবার সারাদিন। ব্রাত্য বসুকে আক্রমণের প্রতিবাদে বিকেলে পথে নামে তৃণমূল। সুলেখা মোড় থেকে যাদবপুর থানা পর্যন্ত মিছিল করে আসেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। মিছিলে হাঁটেন অরূপ বিশ্বাস, সায়নী ঘোষ, অরূপ চক্রবর্তী, কোহিনুর মজুমদাররাও। অন্যদিকে যাদবপুর থানার সামনে আগে থেকেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল বাম ছাত্ররা। তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিল যাদবপুর থানার সামনে পৌঁছাতেই রণক্ষেত্র পরিস্থিতি। ব্যারিকেডের এক পাড়ে বাম ছাত্ররা, অন্যদিকে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। পুলিশ ও র্যাফ পরিস্থিতি সামাল দিতে একপ্রকার হিমশিম খায়। অশ্লীল মন্তব্য আদান-প্রদান চলে। শাসকদলের দিক থেকে জনতা মারতে উদ্যত হলে পাল্টা ছাত্ররা কটাক্ষ করে হাজার টাকার ভাতা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে বলে। দুই দিক থেকেই উড়ে আসে জুতো। শাসকদলের দিক থেকে ধর্ষণের হুমকি আসে বলেও অভিযোগ করে ছাত্রীরা। সাংবাদিকদেরও উপরে আক্রমণ নেমে আসে। পুরো ঘটনাক্রমে রাস্তায় যানজট তৈরি হয়। প্রায় এক-দেড় ঘণ্টার ঘটনাক্রম শেষে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও শনিবার গভীররাত পর্যন্ত যাদবপুরে পরিবেশ ছিল থমথমে।