২০২৪ এর লোকসভা ভোটে মোটেও ৩৩% সংরক্ষণ পাবেন না মহিলারা! কেন?
Women's Reservation Bill 2023 : ১৯৭৬ সাল থেকে নিম্নকক্ষের আসন সংখ্যা ৫৪৩-তেই আটকে রয়েছে।
নারী সংরক্ষণ বিল ২০২৩, বা নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম নিয়ে যতই মাতামাতি হোক বা যতই বিরোধীদের সমর্থন আসুক না কেন, এই বিল এক্ষুণি আইনে পরিণত করে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। করলে তা হবে অনৈতিক। মানে ২০২৪ এর লোকসভায় প্রার্থী মনোনয়নের সময় এই সংরক্ষণের গল্প থাকবেই না? আইন বলছে, নতুন আদমসুমারি এবং ডিলিমিটেশন ছাড়াই এই বিল বাস্তবায়ন করা হলে তা আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। কেন? এত ঘটা করে বিশেষ অধিবেশন ডেকে বিল পেশ করা হচ্ছে, তাহলে তা বাস্তবায়নে বাধা কোথায়? সামনেই লোকসভা নির্বাচন, গণতন্ত্রের এই উৎসবে কেন মহিলাদের ৩৩% সংরক্ষণের ইস্যুটি প্রাধান্য পাবে না?
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকেই কেন বিলটি কার্যকরী হচ্ছে না এবং কেন নরেন্দ্র মোদি সরকার ২০১০ সালে রাজ্যসভায় পাস করা বিলটিকে অনুসরণ করার বদলে একটি নতুন বিল আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। সংসদে বিরোধী নেত্রী, তথা দেশের বিজেপি বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার শরিক কংগ্রেসের মুখ সনিয়া গান্ধী বলছেন বিলটি অবিলম্বে কার্যকর করা উচিত এবং মহিলা কোটায় ওবিসি সংরক্ষণও দেওয়া উচিত।
কিন্তু সরকারের নিয়ম বলছে, মহিলা সংরক্ষণ বিলের জন্য নতুন আদমশুমারি এবং ডিলিমিটেশনের অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচনের প্রতিনিধির আসনে নারীদের সংরক্ষণের জন্য নতুন সেন্সাসের অত্যন্ত প্রয়োজন। দেশের নাগরিকদের সর্বশেষ তথ্য ছাড়াই যদি এটি বাস্তবায়ন করা হয় তবে তা আইনি সঙ্কটে পড়বে। দেশে শেষ আদমসুমারি হয়েছিল ২০১১ সালে। ডিলিমিটেশন হয়েছিল তারও আগে। কোভিড মহামারীর কারণে ২০২১ সালের আদমসুমারি করা যায়নি।
আরও পড়ুন- মহিলা সংরক্ষণ বিল-কে সমর্থন ইন্ডিয়ার! কেন ‘রাজীবের কৃতিত্ব’ দাবি করছেন সনিয়া?
সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে আদমসুমারি শুরু হলে, ২০২৬ সালের পরেও ডিলিমিটেশন করা যেতে পারে। সর্বশেষ তথ্য পাওয়া গেলেই ভারতের নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী মহিলাদের সংরক্ষণ কার্যকর করা হবে। এখন লোকসভায় কোনও প্রার্থীর জন্য কোনও ওবিসি সংরক্ষণ নেই। ১৩১টি আসন তপশিলি জাতি এবং উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইউপিএ ২০১০ সালে যে বিলটি এনেছিল তাতেও কোনও ওবিসি সংরক্ষণ ছিল না। তখন কংগ্রেসের আইনমন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি মহিলা সংরক্ষণ বিলে ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণের বিধান নাকচ করে দিয়েছিলেন এই বলে যে ওবিসিদের তথ্য জাতীয় স্তরে পাওয়া যায় না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পরবর্তী ডিলিমিটেশনের পরে লোকসভার আসনগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। ১৯৭৬ সাল থেকে নিম্নকক্ষের আসন সংখ্যা ৫৪৩-তেই আটকে রয়েছে। অথচ সেই সময় থেকে এখনও অবধি দেশের জনসংখ্যা প্রায় ২.৫ গুণ বেড়েছে। এই কারণেই নতুন সংসদ ভবনে বিশাল বড় লোকসভা কক্ষ রয়েছে যেখানে এখনকার ৫৪৩ জন সাংসদের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক সাংসদ বসতে পারবেন। ডিলিমিটেশনের পর লোকসভায় মোট আসন সংখ্যা বাড়বেই, মহিলা প্রতিনিধিও।
কেন নতুন বিল আনা হলো?
ইউপিএ-এর ২০১০ সালের বিলটির তুলনায় মোদি সরকারের বিলটিতে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হচ্ছে, ২০১০ সালের বিলে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনের 'রোটেশন' বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, বর্তমান বিলে সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে। রোটেশনের অর্থ, প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনে মহিলা-সংরক্ষিত আসন পরিবর্তন হবে। বর্তমান বিলে সেই বিধানটি পরিবর্তন করা হয়েছে।

Whatsapp
