আশ্চর্য মিল! টাইটানিকে মৃত দম্পতির বংশধরই নিখোঁজ ডুবোজাহাজ টাইটানের চালকের স্ত্রী!

Titan Pilot Stockton Rush Wife: টাইটানিক ডুবে যাওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পরে ইসিডোর স্ট্রসের মৃতদেহ সমুদ্রে পাওয়া গিয়েছিল। ইডা স্ট্রসের দেহাবশেষ আর উদ্ধার করা যায়নি।

জীবন এমন অত্যাশ্চর্য ভুলভুলাইয়াতে এনে মাঝে মাঝে ছেড়ে দেয়, বেরনো হয় না তো বটেই, সঠিক পথ হাতড়াতে গিয়ে মানুষকে টানতে থাকে শিকড়ের চোরাবালি। কয়েক লক্ষ বছরের ইতিহাস, ঘটনা পরম্পরা কোথাও যায় না আসলে, থেকে যায়। মাঝে মাঝে অদ্ভুত সমাপতনে সেই সব ঘটনার সঙ্গে ফের দেখা হয়ে যায় নানাভাবে। টাইটানিকের রহস্যভেদ হয়নি। অমীমাংসিত থেকে যেতে পারে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের সন্ধানে যাওয়া ডুবোজাহাজ টাইটানের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটিও। ভেতরে যারা ছিলেন, পাঁচজনের কেউই বেঁচে নেই। তবে এক অদ্ভুত কাকতালীয় ঘটনা ২০২৩ সালকে এনে দাঁড় করিয়েছে ১৯১২ সালের সেই দুর্ঘটনার ক্ষণে। টাইটান ডুবোজাহাজটি চালাচ্ছিলেন স্টকটন রাশ। আশ্চর্য, স্টকটনের স্ত্রী ওয়েন্ডি রাশের পূর্বজরা ছিলেন টাইটানিকে। ওই জাহাজেই মৃত্যু ঘটেছিল তাঁদের।

স্টকটন রাশ ওশানগেটের প্রধান কার্যনির্বাহী। রবিবার টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের অনুসন্ধানে ডুব দেওয়ার সময় নিখোঁজ হওয়া সাবমার্সিবলের পাইলট ছিলেন স্টকটনই। স্টকটনের স্ত্রী টাইটানিকের এমন দু'জন প্রথম শ্রেণির যাত্রীর বংশধর যারা ১৯১২ সালে জাহাজ ডুবে যাওয়ার সময় মারা গিয়েছিলেন। ১৯১২ সালে ওই জাহাজে ছিলেন ব্যবসায়ী ইসিডোর স্ট্রস এবং তাঁর স্ত্রী ইডা। টাইটানিকের প্রথম সমুদ্রযাত্রায় অন্যতম দুই ধনী ব্যক্তি ছিলেন এই দম্পতি। ইসিডর স্ট্রসের জন্ম ১৮৪৫ সালে। তিনি ছিলেন মেসির ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সহ-মালিক।

আরও পড়ুন- যাত্রীদের দেহের ছিটেফোঁটাও মেলেনি! অত্যাধুনিক ডুবোজাহাজ হারিয়ে গেল কীভাবে?

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওয়েন্ডি হলিংস ওয়েইল ১৯৮৬ সালে স্টকটন রাশকে বিয়ে করেন। ওয়েন্ডি রাশের লিঙ্কডইন পেজ বলছে, গত দুই বছরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের অনুসন্ধানে আয়োজিত তিনটি ওশানগেট অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। ওশানগেট সংস্থারই যোগাযোগ পরিচালক হিসাবে কাজ করেন ওয়েন্ডি। তিনি কোম্পানির চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনেরও দীর্ঘদিনের বোর্ড সদস্য।

টাইটানিকে ওয়েন্ডি রাশের যে পূর্বজরা ছিলেন, তাঁদের মর্মান্তিক প্রেমের গল্প সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পায়। সৌজন্যে বিখ্যাত টাইটানিক সিনেমাটি। বলা হয়, ইসিডোর এবং ইডার ঘটনা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছে এই সিনেমার এক বিখ্যাত দৃশ্য। জাহাজডুবির সময় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা ইসিডোর স্ট্রসকে লাইফবোটে উঠতে বললেও তিনি ওঠেননি। মহিলা এবং শিশুদের তখন কোনওক্রমে ডুবন্ত জাহাজ থেকে লাইফবোটে করে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। ইডা আর ইসিডোরের বিয়ের চল্লিশটি বছর পেরিয়ে গিয়েছে তখন। ইডা স্ট্রস জানিয়েছিলেন, তিনি তাঁর স্বামীকে ছেড়ে কিছুতেই আগে যাবেন না। জাহাজ ডোবার সঙ্গে সঙ্গে দু'জনকেই টাইটানিকের ডেকে হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এই দম্পতির কাহিনিরই একটি কাল্পনিক সংস্করণ পরিচালক জেমস ক্যামেরনের সিনেমায় অমর হয়ে গিয়েছে। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছিল এক বয়স্ক দম্পতি বিছানায় আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থায় শুয়ে রয়েছেন। তারা জানেন, একসঙ্গেই প্রাণ হারাবেন। কেবিনের চারপাশে জলের স্তর ক্রমেই বাড়ছে, মৃত্যুর মধ্যে ডুবে যাচ্ছেন দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।

ওয়েন্ডি রাশ স্ট্রসর দম্পতিদের কন্যাদের অন্যতম, মিনির বংশধর। মিনি ১৯০৫ সালে ডাঃ রিচার্ড ওয়েইলকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁদের পুত্র, রিচার্ড ওয়েইল জুনিয়র, পরে মেসির নিউইয়র্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং তাঁর পুত্র হলেন ডাঃ রিচার্ড ওয়েইল থ্রি। স্ট্রস হিস্টোরিক্যাল সোসাইটির কার্যনির্বাহী পরিচালক জোয়ান অ্যাডলারের মতে, এই রিচার্ড ওয়েইল থ্রি হচ্ছেন ওয়েন্ডি রাশের বাবা।

আরও পড়ুন- ফাদার্স ডে-র উপহার! ভয় সত্ত্বেও টাইটানিক খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে গেলেন বাবা ছেলে দু’জনেই…

নিউইয়র্ক টাইমসের আর্কাইভ অনুযায়ী, টাইটানিক ডুবে যাওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পরে ইসিডোর স্ট্রসের মৃতদেহ সমুদ্রে পাওয়া গিয়েছিল। ইডা স্ট্রসের দেহাবশেষ আর উদ্ধার করা যায়নি।

ওয়েন্ডি রাশের স্বামী স্টকটন রাশ হচ্ছেন টাইটান নামের ডুবোজাহাজটির মার্কিন অপারেটিং সংস্থা ওশানগেটের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও! ডুবোজাহাজটি চালাচ্ছিলেন স্টকটন নিজে। স্টকটন রাশ এই বছরের শুরুর দিকেই ব্রিটেনের স্কাই নিউজ অব টাইটানিককে বলেছিলেন, "এটি আশ্চর্য সুন্দর ধ্বংসাবশেষ! আমরা নিচে নেমে বিশাল সিঁড়ি দেখেছি এবং দেখেছি কিছু ঝাড়বাতি এখনও ঝুলছে।" স্টকটন রাশ ১৯৮১ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ জেট ট্রান্সপোর্ট-রেটেড পাইলট হয়েছিলেন।

নভেম্বর মাসে সিবিএস-এ সম্প্রচারিত একটি সাক্ষাত্কারে, স্টকটন রাশ জানিয়েছিলেন, আজীবন তিনি একজন মহাকাশচারী হতে চেয়েছিলেন এবং ১৯৮৪ সালে প্রিন্সটন থেকে মহাকাশ প্রকৌশলের ডিগ্রি অর্জনের পর ফাইটার পাইলট হতে চেয়েছিলেন। এই অভিযানে যাওয়ার আগে স্টকটন বলেছিলেন, মহাকাশে যাওয়ার বিষয় তো এটা ছিল না। "এটা ছিল অন্বেষণ, নতুন জীবনরূপ অনুসন্ধান। আমি ক্যাপ্টেন কার্কের মতো হতে চেয়েছিলাম। আমি যাত্রী হতে চাইনি এবং আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে মহাসাগরই মহাবিশ্ব," বলেছিলেন তিনি। সেই মহাসাগরের মহাবিশ্ব থেকে আর কোনওদিনই ফিরবেন না স্টকটন।

More Articles