ভাষা আর ধর্মের জাল থেকে কোনওদিন মুক্ত হতে পারবে বাংলাদেশ?
Bangladesh: ২০২৪ সালের অগাস্ট থেকে, মাহফুজ আলম নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে বাইনারি ভাঙার কথা মুখে বলা যত সোজা, কাজে করা ততোধিক কঠিন।
'বাইনারি' ভাঙা সহজ নয়। বিশেষ করে সেই 'বাইনারি' যদি পরিচয় গঠনের শিকড়ের সঙ্গে প্রোথিত থাকে। বাংলাভাষী মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশে, ভাষাগত এবং ধর্মীয় পরিচয়ের মধ্যে তাই সংঘাত দেখা দেয়, এই দুই পরিচয় তীব্র সামাজিক-রাজনৈতিক মেরুকরণ তৈরি করে।
২০২৪ সালের অগাস্ট মাস। সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ঢেউ নামে রাজপথে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন, দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। এই ঘটনার মোটামুটি ৪৮ ঘণ্টা আগে, ৩ অগাস্ট ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান নেতা মাহফুজ আলম (আব্দুল্লাহ) একটি ফেসবুক পোস্টে তাঁদের আদর্শ এবং রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আধিপত্য কায়েম করা সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় 'বাইনারি' ভাঙার আহ্বান জানান।
তাঁর ৩ অগাস্টের পোস্টে, মাহফুজ আলম - যিনি পরবর্তীতে ২৮ অগাস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী হয়ে ওঠেন - ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-আন্দোলনে বামপন্থী এবং ইসলামপন্থী শক্তির অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তবে সতর্কও করে দিয়েছিলেন যে, শাপলা-শাহবাগ বাইনারিকে পুনরুজ্জীবিত করার কোনও প্রচেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।
শাহবাগ-শাপলা কী? শাহবাগ-শাপলা হচ্ছে বাংলাদেশের সেক্যুলার-লিবারেল-নাস্তিক শিবির, যেটি বাঙালি সাংস্কৃতিক পরিচয়ে গর্ববোধ করে, সেই শিবিরের সঙ্গে ২০১৩ সালে ইসলামি শক্তির সংঘাত।
শাহবাগ শিবিরের মানুষ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর গণহত্যা চালানোর জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা জামায়াত-ই-ইসলামী (জেআই) নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ঢাকার শাহবাগ চত্বরে আন্দোলন করেছিলেন। ইসলামপন্থী রাজনীতি নিয়ে তাঁদের সমালোচনায় ইসলামিক নানা অনুশীলন, এমনকী ইসলাম নিয়েও কাটাছেঁড়া করা হয়।
আরও পড়ুন- ভারত-পাকিস্তান উভয়ের অধীনতাই অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ : মাহফুজ আলম
অন্যদিকে হেফাজত-ই-ইসলাম (এইচইএল) ঢাকার শাপলা স্কোয়ারে ইসলামিক জীবনধারার সপক্ষে বিশাল এক সমাবেশের আয়োজন করে। ইসলামপন্থীরা এই সমাবেশে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে। সেই সমাবেশে অংশগ্রহণকারী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে হিংসায় অনেকের মৃত্যুও হয়। এখানে উল্লেখ্য, হেফাজত-ই-ইসলামের সঙ্গে আবার জামায়াত-ই-ইসলামীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে।
মাহফুজ আলম এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তিতে সংগঠনে তাঁর বন্ধুরা, যাঁরা ২০২৪ সালের জুলাই-অগাআস্টে হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন — গত কয়েক বছর ধরেই, বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ-ধর্মীয় বাইনারি এবং সামরিক হস্তক্ষেপ থেকে বের করে আনার কথা বলছেন।
মাহফুজদের যুক্তি, এই দুই পক্ষই আসলে চরমপন্থী। অন্যের অপমান ও অমানবিক আচরণ প্রদর্শনকে এই দুই পক্ষই মান্যতা দেয় এবং অন্যকে হত্যা করাকেও ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করে। মাহফুজ আলম এবং তাঁর কমরেডরা নিজেদের মধ্যপন্থী এবং গণতান্ত্রিক বলে মনে করেন। তাঁরা মনে করেন এই বাইনারি আসলে মানুষের সংহতির সামনে মস্ত এক বাধা। বাইনারি ভাঙার পন্থা হিসেবে তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে অন্তর্ভুক্তি শব্দটিকে প্রচারে আনতে থাকেন।
২০২৪ সালের অগাস্ট থেকে, মাহফুজ আলম নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে বাইনারি ভাঙার কথা মুখে বলা যত সোজা, কাজে করা ততোধিক কঠিন। ইউনূস সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে, ইসলামপন্থী বাহিনী এবং ধর্মপ্রাণ জনতা মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে এবং বিরুদ্ধ মতামতকে দমন করতে যথেচ্ছ অগণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করছে। এই শক্তির ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ করছে সুফি মাজারগুলিকে, মূর্তি ও ভাস্কর্য ভাংছে, মহিলাদের ফুটবলের, বাউল-ফকির উৎসবের বিরোধিতা করছে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপন, ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব, বসন্ত উৎসবের মতো ধর্ম নিরপেক্ষ অনুষ্ঠান পালনের বিরোধিতা করছে, স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রকাশ্যে প্রদর্শন, নাট্য উৎসবের বিরোধিতা করছে, তাঁদের চোখে 'আপত্তিকর' বই বিক্রি বন্ধ করতে বইমেলায় ভাংচুর করছে।
যতবার এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, প্রতিবারই বাঙালির ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের জন্য সওয়াল করা ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলি আওয়াজ তুলেছে, ইসলামপন্থীদের উত্থানের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক ভাংচুর ও সেই ইতিহাস মুছে ফেলার পাশাপাশি ১৯৭১ সালে তাদের ভূমিকাকে ন্যায্য বলে প্রমাণ করতে চেয়ে জামায়াতের অব্যাহত প্রচেষ্টা মেরুকরণের আগুনে ঘি ঢেলেছে।
আরও পড়ুন- ক্ষমতায় থাকতে আসিনি, দায়িত্বপালন করে চলে যাব : শফিকুল আলম
প্রাচীন দ্বন্দ্ব
বাঙালি জাতিভাষাগত বা সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের শিকড় লুকিয়ে আছে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে। অচিরেই বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং মুসলিম জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে। ১৯০৫ সালে প্রথম বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশী আন্দোলনের সময় বাঙালি জাতীয়তাবাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহার করা হলে তখন ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক ভিত্তিতে নানা ত্রুটিগুলি প্রকাশ্যে চলে আসে।
১৯৪৭ সালে, বাঙালি জনতার ধর্মীয় পরিচয় প্রকট হওয়ার ফলে প্রদেশটি দ্বিখণ্ডিত করা হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অংশ হয় এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশে ঢুকে যায়। যাইহোক, ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনের হাত ধরে পূর্ববঙ্গে (পূর্ব পাকিস্তান) ভাষাগত এবং ধর্মীয় পরিচয়ের মধ্যে বিরোধের বিষয়টি আবার প্রকাশ্যে আসে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিভক্তির দু'টি প্রধান কারণ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের পশ্চিম পাকিস্তানের উপর অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের অভিযোগ।
মুক্তিযুদ্ধের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ছিল মূলত ভাষাগত-সাংস্কৃতিক। যেহেতু সমস্ত ইসলামপন্থী দলই পাকিস্তানের ইসলামিক রাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ব বাংলার বিচ্ছিন্নতার বিরোধিতা করেছিল, তাই সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ আর ইসলামিক রাজনীতির মধ্যে বিরোধিতা শুরু হয়। বামপন্থীরা, এমনকী যারা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে, তারাও ১৯৭১-এর পক্ষে এবং মূলত বাঙালি সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদেরই অংশ।
বাংলাদেশ সৃষ্টির পর প্রাথমিকভাবে ইসলামপন্থী শক্তিগুলো কয়েক ধাপ পিছিয়ে যায়। তবে, মুক্তিযুদ্ধকামী শক্তির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রায় দেড় দশকের সামরিক শাসনের সময় জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রচার করেছিলেন, যা ইসলামের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি সংবিধানে 'ধর্মনিরপেক্ষতা' শব্দ পালতে দিয়ে করে দেন 'সর্বশক্তিমানে পরম আস্থা ও বিশ্বাস'। জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ইসলামকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেন।
১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে দু'টি ঘটনা ভাষাগত বনাম ধর্মীয় পরিচয়ের বাইনারির চিরকালীন দ্বন্দ্বকে আবার সামনে নিয়ে আসে। প্রথমত, ১৯৯১ সালে, জামায়াত গোলাম আজমকে দলীয় প্রধান হিসাবে ঘোষণা করে। এই গোলাম আজমের নেতৃত্বেই জামায়াত ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করে এবং মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে নৃশংসতা শুরু করে। দলীয় প্রধান হওয়ার সময়ও, গোলাম আজম ছিলেন পাকিস্তানের নাগরিক।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মুখ হিসেবে, এবং পাক নাগরিক হিসেবে গোলাম আজমের সামনে আসা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকেও উস্কে দেয়। মুক্তিযুদ্ধপন্থীদের মধ্যে কেউ কেউ ১৯৯২ সালে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করে। ১৯৭১ সালে যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করেছিল তাদের বিচারের দাবিতে এই সুশীল সমাজের সংগঠনের আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। হাসিনা পরবর্তীতে শাহবাগ আন্দোলনকে ইসলামিক শক্তিকে দমন করতে ব্যবহার করেছিলেন। হাসিনা তাঁর সমস্ত বিরোধীদেরই ইসলামপন্থী বলে অভিহিত করেছেন।
আরও পড়ুন- একাত্তর আঁকড়েই এগোবে চব্বিশ: নাহিদ ইসলাম
নতুন ঢেউ
সম্প্রতি বাংলাদেশের সুশীল সমাজের বহু সদস্যই বলছেন, এই সংঘাতকেই আসলে বাঙালি পরিচয় এবং মুসলিম পরিচয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব হিসাবে ভুলভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। এই সত্যটি সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হচ্ছে যে অনেক গভীরভাবে ধর্মবিশ্বাসী মুসলমান মানুষও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই নাগরিকরা বলছেন, ইসলামপন্থী রাজনীতির সংমিশ্রণ এবং ইসলামপন্থী হিসাবে মুসললিমদের সন্দেহ করার ফলেই পরিচয়ের বিষয়ে অপ্রয়োজনীয় মেরুকরণ হয়ে গিয়েছে।
ঢাকার গবেষক এবং গণহত্যা বিষয়র লেখক সোহুল আহমেদের মতে, জামায়াত-এর ইসলামিক রাজনীতির বিরোধিতা করতে গিয়ে, সুশীল সমাজের সদস্যরা ইসলামের প্রতি অজ্ঞতা বা অবজ্ঞা প্রকাশ করে ফেলেন, যার ফলে হামেশাই এমন একটি ভাষা তৈরি হয়ে যায় যাকে ইসলামফোবিয়া থেকে আলাদা করাই কঠিন! “অনেক মানুষ আছেন যাঁরা ধার্মিক এবং ইসলামকে অনুসরণ করেন, কিন্তু তারা যেভাবে ইসলামপন্থী রাজনীতির বিরোধিতা করে কথা বলেন, তাতে বিষয়টা ইসলামফোবিক শোনাতে পারে,” বলছেন সোহুল আহমেদ।
২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের সময়, ঘোষিত মধ্যপন্থী-কেন্দ্রপন্থী বাহিনী অগ্রভাগে ছিল। তারা ইসলামপন্থীদের উপর হাসিনা সরকারের ব্যাপক দমন-পীড়নের নিন্দা করলেও মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করে এবং আওয়ামী লীগের 'দখল' থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পুনরুদ্ধারের কথাও ঘোষণা করে। তারা আন্দোলনে বামপন্থী এবং ইসলামপন্থী শক্তিকে স্বাগত জানিয়েও বলে, এই দুইয়ের কাউকেই নেতৃত্বমূলক স্থানে আসতে দেওয়া যাবে না।
হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও দেশত্যাগের পরে ইসলামিক শক্তিগুলি বেরিয়ে আসছে। অগাস্টের অভ্যুত্থানকে শাহবাগের উপর শাপলার বিজয় বলে দাবি করা হচ্ছে এবং এই দাবিও উঠে আসছে যে, শাহবাগ আন্দোলনের নেপথ্যে যারা ছিল তাদের বিচারের মুখোমুখি হওয়ার সময় এসেছে। তাদের নেতারা এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টরা ইসলামিক জীবনযাপন আরোপের চাপ দিয়েছেন। ধর্মীয়ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জনতার আস্ফালনের দৃশ্য জনগণের একটি বড় অংশের মধ্যে, বিশেষ করে সুশীল সমাজের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
এখন বিএনপি হচ্ছে অগাস্ট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারের প্রধান ধারক এবং ইসলামিক রাজনীতির সমালোচক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নায়ক জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৮০ সালে সামরিক শাসক থাকাকালীন বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৯১ সাল থেকে জামায়াতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক বিএনপি-র। এখন তারা সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী। পাশাপাশি, বামপন্থী এবং সুশীল সমাজের সদস্যরা ধর্মীয় পেশিশক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
আরও পড়ুন- রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির অভাবে ধুঁকছে ইউনূস সরকার : আলতাফ পারভেজ
ঢাকার সামাজিক-রাজনৈতিক গবেষক ও ভাষ্যকার আলতাফ পারভেজের মতে, বাংলাদেশ বাস্তবে এক তীব্রভাবে শ্রেণি-বিভক্ত সমাজ, যেখানে সম্পদের ব্যবধান অপরিসীম। সেই বাইনারিটি সযত্নে পর্দার আড়ালে রাখা হয়েছে এবং সেই বাইনারিকে আড়াল করতেই শাহবাগ ও শাপলার নামে কৃত্রিম বাইনারি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। এই বাইনারি হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং ইসলামপন্থীদের দুইয়ের ক্ষেত্রেই প্রযুক্ত। এই বাইনারিই হাসিনাকে কোনও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়াই দেড় দশক ধরে দেশ চালাতে সাহায্য করেছিল।
তিনি বলছেন, জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানের নেতারা বৈষম্য কমানোর কথা বলে ক্ষমতায় এলেও প্রথম ছয় মাসে সম্পদভিত্তিক বাইনারি কমানোর কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় কৃষক, শ্রমিক ও নির্যাতিতরা অনেকটা উপেক্ষিতই থেকেছে। শাপলা-শাহবাগ বাইনারি প্রত্যাখ্যান করে জনগণ এতে অংশগ্রহণ করেছিল বলেই জুলাই-অগাস্ট আন্দোলন সম্ভব হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন আলতাফ পারভেজ। অথচ যারা হাসিনা শাসনের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তারা প্রথমে বাইনারি ভাঙার কথা বললেও, যত সময় এগিয়েছে, সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়নি।
“অভ্যুত্থানের শক্তিরা এখন বিভক্ত। এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারা যাই বলুক না কেন, তাদের কাজকর্ম পুরনো বাইনারিকে বিভিন্ন মাত্রায় সাহায্য করছে এবং তারা এর পাশেই অবস্থান নিচ্ছে। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, শাপলা বর্তমানে শাহবাগের ওপর আধিপত্য বিস্তার করছে। সাংস্কৃতিকভাবে, বাংলাদেশ এখন শাপলার আধিপত্যের সময়কাল পেরোচ্ছে," বলছেন আলতাফ পারভেজ।
তিনি আরও বলছেন, এ লড়াইয়ের কোনও ফায়সালা হয়নি। বাইনারির প্রভাবের বর্তমান ব্যাপ্তির একটা প্রতিফলন দেখা যাবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রত্যাশিত নির্বাচনের ফলাফলে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে, মাহফুজ আলম এবং অগাস্ট অভ্যুত্থানের অন্যান্য স্বঘোষিত কেন্দ্রবাদী ছাত্র বাহিনীর সঙ্গে ইসলামিক শক্তির সঙ্গে এক তীব্র ক্ষমতার লড়াই চলছে। ছাত্র নেতৃত্ব যে নতুন দল চালু করতে চলেছে, সেই দলে দখল ধরে রাখার জন্যই এই লড়াই।
দ্য আউটলুক-এ, ২৭ ফেব্রুয়ারি Seeking A Bangladesh Beyond Binaries শিরোনামে প্রকাশিত এই লেখকেরই প্রবন্ধ থেকে অনূদিত