কেন '৪০০ পার' বলছে বিজেপি? ফাঁস করলেন প্রশান্ত কিশোর
Lok Sabha Election 2024: আসলে মোদির এই দাবির পিছনে রয়েছে অন্য কারণ। পিকের মতে, ভোট ময়দানে বিরোধীদের মনঃস্তত্ত্বের সঙ্গে খেলছেন মোদি আসলে। মোদির এই স্লোগান আসলে বিরোধীদের নার্ভাস সিস্টেমের উপর চাপ তৈরি করার কৌশলমাত্র।
ভোটের আর দেরি নেই। যুদ্ধে লড়ার জন্য প্রায় সকলেই প্রস্তুত। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। দিল্লির মসনদের লড়াই বলে কথা। প্রায় সমস্ত রাজ্যেই কোমর বেঁধেছে বিরোধীরা। কেন্দ্রে জয় নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত বিজেপি সরকার। এদিকে বিজেপিকে হঠাতে একজোট হয়েছে দেশের একগুচ্ছ বিরোধী দল। তবে ভোট ঘোষণা হতে না হতেই হাওয়া বদলেছে। সমীকরণ বদলেছে। কী হতে চলেছে এই লোকসভা ভোটের ফলাফল। এ ব্যাপারে এর আগেই নিজের মতামত প্রকাশ করেছিলেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর।
ভোটের ময়দানে প্রশান্ত কিশোর বরাবরই যেন কুরুক্ষেত্রের কৃষ্ণ। তাঁর পক্ষ যার পাশে, তার জয় একপ্রকার নিশ্চিত। ভোটবাজারের সেই চাণক্য অবশ্য ভোটকুশলীর কাজ ছেড়েছেন অনেকদিন। খাতায় কলমে ছেড়েছেন তাঁর সংস্থা আইপ্যাকের কাজকর্মও। তবে ভোটের জটিল অঙ্ক বুঝতে আজও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। সেই প্রশান্ত কিশোরের লোকসভা ভোট সম্পর্কে পূর্বাভাস বলছে, জিততে চলেছে বিজেপিই।
'আবকে বার মোদি সরকার' বলে বলে কংগ্রেসের হাত থেকে একদিন ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি। এবার সেই স্লোগান সামান্য পাল্টেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলছেন, 'আবকে বার চারশো পার'। সম্প্রতি এমন সম্ভবনার কথাই ফের জানিয়েছেন তিনি। তৃতীয় মেয়াদ থেকে খুব সামান্যই দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে মোদি সরকার, আর তেমন আশাই প্রকাশ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সংখ্যাগরিষ্ঠতা তো বটেই, চারশো আসনে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গড়বে মোদি সরকার, তেমনটাই জানিয়েছিলেন তিনি। বিজেপি একাই পাবে ৩৭০টি আসন, আর এনডিএ জোট পেতে চলেছে চারশোটি আসন।
আরও পড়ুন: কেজরিওয়ালই শেষ নয়, আপকে শেষ করতে বিজেপির যে ভয়াবহ পরিকল্পনা ফাঁস করলেন অতিশী
আর মোদির সেই দাবি নিয়ে কী বলছেন ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোর? এই লোকসভা ভোটে চারশো আসন পেরোনোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বিজেপি। বিজেপির জয় নিয়ে নিশ্চিত হলেও বিজেপির সেই লক্ষ্যমাত্রা কতটা পূরণ হতে চলেছে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান পিকে। প্রখ্যাত এই ভোটকুশলীর মতে, বিজেপির একক ভাবে ৩৭০ আসন জয়ের সম্ভাবনা কিন্তু আদতে খুব কম। মোট ৫৪৩টি আসনের মধ্যে চারশো আসন জয়ের এই স্বপ্ন বিজেপির, আসলে ইউটোপিয়া বলেই মনে করছেন পিকে।
আসলে মোদির এই দাবির পিছনে রয়েছে অন্য কারণ। পিকের মতে, ভোট ময়দানে বিরোধীদের মনঃস্তত্ত্বের সঙ্গে খেলছেন মোদি আসলে। মোদির এই স্লোগান আসলে বিরোধীদের নার্ভাস সিস্টেমের উপর চাপ তৈরি করার কৌশলমাত্র। তেমনটাই মনে করছেন ভোটকুশলী পিকে। তবে এই ভোটে গত নির্বাচনের তুলনায় হাসতে হাসতে আরও ১০-২০ শতাংশ আসনে জিতে আসবে বিজেপি। ২০১৯ সালের ভোটে ৩০৩টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। তবে আরও সত্তরটি আসন দখলে আনা এই মুহূর্তে বিজেপির পক্ষে কঠিন বলেই মনে করছেন এই ভোটগুরু।
একটু ভেবে দেখলেই বোঝা যাবে, মোদি আসলে জনমানসের ধারণাকেই বদলে ফেলতে সফল হয়েছে এই একটি মাত্র স্লোগানের মাধ্যমে। মানুষের কাছে এই মুহূর্তে বিজেপি জিতবে কিনা সেটা বড় প্রশ্ন নয়। বরং তাঁরা ৩৭০টি আসনে জিতবে কিনা সেটাই বেশি জরুরি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মুহূর্তে। আর সেই কাজটাই দক্ষতার সঙ্গে করেছে বিজেপি। ফলে এটাকে তাদের একটা মনঃস্তাত্ত্বিক চাল বললে ভুল হয় না।
কিন্তু আদতে ৩৭০ নম্বর পেরোনোর যে দাবি করছে বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদি, তা মোটেই বাস্তব নয় বলেই মনে করছেন প্রশান্ত কিশোর। অনেকেই মনে করেছিল, নীতীশের এনডিএ-তে প্রত্যাবর্তনে বড়সড় ফায়দা হতে চলেছে বিজেপির। তবে পিকে-র মতে বিহারে আদতে তেমন লাভের মুখ দেখবে মোদি-শাহেরা।
আগামী ১৯ এপ্রিল দেশ জুড়ে শুরু হচ্ছে লোকসভা ভোট। রামমন্দির তৈরি থেকে শুরু করে তার এলাহি উদ্বোধন, ভোটের বাজারে সেই সমস্ত কিছু দিয়ে একটা হিন্দুত্ববাদী হাওয়া তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন মোদি। যার জোরে প্রায় শূন্য বাজেট নিয়েই আত্মবিশ্বাস দেখাতে পেরেছিল বিজেপি সরকার। সবই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু মধ্যিখানে বাধ সাধল ইলেক্টোরাল বন্ড দুর্নীতির সামনে আসা। যা থেকে জনগণের মাথা ঘোরাতে তড়িঘড়ি সিএএ চালু করে দিল শাহের দফতর। সেই নিয়েও আবার বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় বিজেপিকে। ইতিমধ্যেই একাধিক অবিজেপি রাজ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে ধড়পাকড় চালানোর অভিযোগ উঠছে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কিছুদিন আগে জেলে গিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। যদিও ঝাড়খণ্ডে তেমন করে দাঁত বিঁধোতে পারেনি বিজেপি। দিল্লিতেও মুখ্যমন্ত্রীত্ব ছাড়েননি অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তবে ভোটের ফল কী হতে চলেছে সেই সব রাজ্যে, তা ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে লড়ার টাকা নেই খোদ অর্থমন্ত্রী নির্মলার! সম্পত্তির খতিয়ান বলছে যে কথা
একই সঙ্গে এ রাজ্যে বিজেপির ফল ভালো হবে বলেই একরকম ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন পিকে। এ রাজ্যে তাদের ফল তৃণমূলের চেয়ে ভালো হবে বলেই মনে করছেন প্রশান্ত কিশোর। তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে এক অভাবনীয় ফল আসতে চলেছে, যেটা বিজেপির পক্ষে যাবে। এছাড়া দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আখছার সফর বিজেপির জন্য ভাল ইঙ্গিত বলেই মনে করেন পিকে। একদিক থেকে জয়ের পাল্লা যে বিজেপির দিকেই ঝুঁকে, তা একপ্রকার নিশ্চিত ভাবেই বলে দিয়েছেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। বাংলা ছাড়াও বিহার, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও কেরলেও বিজেপির আসনসংখ্যা বাড়বে হলে মনে করছেন পিকে। তবে চারশো কেন, ৩৭০ আসন জয়ের চ্যালেঞ্জ কতটা পূরণ করতে পারবে বিজেপি, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে বলেই মনে করছেন ভোটময়দানের কৃষ্ণ প্রশান্ত কিশোর।