রাজপথ থেকে কি হারিয়ে যাবে আইকনিক হলুদ ট্যাক্সি? নতুন কোন বদলের পথে কলকাতা?

Kolkata's Iconic Yellow Taxi : খোল নোলচে বদলে যাবে আইকনিক হলুদ ট্যাক্সির, নতুন কোন রূপে কলকাতার রাস্তায় দেখা যাবে এদের?

রং বদলের রাজনীতির সঙ্গে দিনদিন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে বাংলা। তাই বলে ঐতিহ্যের রংও কি বদলে যেতে পারে রাতারাতি? কোন ইঙ্গিত দিচ্ছে মহানগর। কলকাতা মানেই একটা চিরন্তন ভালোবাসার শহর। এই শহরের প্রতি গলি ঘুপচি থেকে শুরু করে রাজপথ, সবেতেই রয়েছে ঐতিহ্যের পরশ। আধুনিকতা এখানে যতোই চকচক করুক না কেন, পরতে পরতে আজও রয়ে গিয়েছে পুরনো সবেকিয়ানার গন্ধ। কলকাতা মানে যেমন ভিক্টোরিয়া, নন্দন অথবা প্রিন্সেপের পড়ন্ত বিকেল ঠিক তেমনই কলকাতার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আইকনিক আরও নানা কিছু। সময় বদলালেও তাই কলকাতার মানচিত্র থেকে অস্পষ্ট হয়ে যায় না হাতে টানা রিক্সা কিংবা আইকনিক হলুদ ট্যাক্সি। 

প্রাণের শহর কলকাতার এই চেনা ছবিটাই কি বদলাতে তো চলেছে এবার? সম্প্রতি জানা গিয়েছে এই হলুদ ট্যাক্সিগুলিই নাকি গায়েব হয়ে যাবে রাজপথ থেকে। এমনিতেই একদিকে ডিজেলের দামের ছ্যাঁকা অন্যদিকে ওলা, উবেরের মতো অ্যাপ ক্যাবের দৌরাত্মে হাঁসফাঁস অবস্থা চিরন্তন হলুদ ট্যাক্সির। তার ওপরে নতুন এই সিদ্ধান্ত আদতে কলকাতার এত দিনের ঐতিহ্যে ঠিক কতটা ঘা আনতে চলেছে সেটাই এখন ভাববার। শিব যাচ্ছে, চিরাচরিত হলুদ রং বদলে ট্যাক্সির রং করা হবে সবুজ। 

জানা গিয়েছে, যে সমস্ত হলুদ ট্যাক্সির বয়স ১৫ বছরেরও বেশি, মনে করা হচ্ছে সেগুলিই শহরের এই বাড়তি দূষণের একটা বড় কারণ। তাই এবার তার খোল নোলচেটাই বদলে ফেলা হবে। সেগুলিকে বদলে দেওয়া হবে ইলেকট্রিক যানবাহনে। হলুদ ট্যাক্সি হয়ে উঠবে দূষণ হীন ‘গ্রিন ট্যাক্সি’। ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের বদলে বসবে ইলেকট্রনিক ইঞ্জিন।

আরও পড়ুন - কমছে ওলা-উবেরের দাপট, শহরের পথে এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নস্টালজিয়ায় ভরা হলুদ ট্যাক্সি

সম্প্রতি ব্রিটেন এবং ভারত সরকারের উদ্যোগে অ্যাক্সিলারেটিং স্মার্ট পাওয়ার অ্যান্ড রিনিউয়েবেল এনার্জি ইন ইন্ডিয়া (ASPIRE) প্রোগ্রামের অধীনে একটি ওয়ার্কশপ আয়োজিত হয়েছিল কলকাতায়। সেখানেই বক্তা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন রাজ্যের বিদ্যুৎ সচিব এস সুরেশ কুমার। তিনি বলেন, কলকাতার রাস্তায় চলা হলুদ ট্যাক্সিগুলিতে যদি আধুনিক ইভি ইঞ্জিন ব্যবহার করা যায় তাহলে এই ঐতিহ্যশালীর ট্যাক্সিগুলি আরও লম্বা রেসের ঘোড়া হতে পারবে। অর্থাৎ আয়ু বেড়ে যাবে। তিনি আরও যোগ করেন যে, বিদেশি ইভি সংস্থাগুলি বাংলা‌র মাটিতে কারবার শুরু করলে পরিবেশবান্ধব পরিস্থিতি গড়ে তুলতে তা সহায়তা করবে। প্রসঙ্গত,‌ ২০২৫ সালে প্রায় আড়াই হাজার ডি এবং ই–সিরিজের অ্যাম্বাসেডর বাতিলের তালিকায় ঢুকে পড়ে। তবে সেই কারণেই কি এই নতুন উদ্যোগ? এতে কি সত্যিই ঐতিহ্য আরও বেশি দিন বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে?

জানা গিয়েছে, এই সিদ্ধান্তকে সামনে রেখে শীঘ্রই ইভি বন্ধু অ্যাপ চালু করা হবে কলকাতায়। পাশাপাশি মোট ২০০টি ইভি চার্জিং স্টেশনও তৈরি করা হবে রাজ্যে। প্রসঙ্গত, কলকাতার ইতিহাস গবেষক গৌতম বসুমল্লিক জানান, শহর কলকাতায় প্রথম ট্যাক্সি চলে ১৯০৬ সালে। ধর্মতলার ফ্রেঞ্চ মোটরকার কোম্পানির অফিসের সামনে থেকে মিটারওয়ালা ওভারল্যান্ড কোম্পানির ট্যক্সিগাড়ি ছাড়ত। ভাড়া ছিল প্রতি মাইল ৮ টাকা। পরবর্তীতে কলকাতার এই আইকনিক অ্যাম্বাসেডর হলুদ ট্যাক্সি ব্রিটেনের ১৯৫৬ মরিস অক্সফোর্ড সিরিজ III এর আদলে তৈরি করা হয়েছিল। সময়টা ১৯৫৭ সাল, উত্তরপাড়ার হিন্দুস্তান মোটরসের ইউনিটে উৎপাদিত হয়েছিল প্রথম হলুদ ট্যাক্সি। তারপর থেকে ক্রিমে রাজপথে রাজত্ব চালায় এই হলুদ ট্যাক্সি। ক্রমেই কলকাতার চিরাচরিত অভ্যাসে পরিণত হয় এটি। যদিও ২০১৪ সালে এই ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু রাস্তায় থেকে যায় হলুদ ট্যাক্সিরা। 

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বেড়ে যাওয়া পরিবেশ দূষণ রোধ করতে ইলেকট্রিক ইঞ্জিন চালিত যানবাহন চলাচলের দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। এবার সেই তালিকায় নাম জুড়লো কলকাতার আইকনিক হলুদ ট্যাক্সিরও। হলুদ ট্যাক্সিও এবার হতে চলে সবুজ। আক্ষরিক অর্থেই রং বদলাবে কিনা যদিও জানা যায়নি, তবে কাম বদলাবে নিশ্চিত।

More Articles