মহিলা সংরক্ষণ বিল-কে সমর্থন ইন্ডিয়ার! কেন 'রাজীবের কৃতিত্ব' দাবি করছেন সনিয়া?

Women's Reservation Bill : 'নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম' নামের এই বিলটি লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের প্রস্তাব করে।

"প্রথম, স্থানীয় সংস্থা নির্বাচনে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণের জন্য সাংবিধানিক সংশোধনী এনেছিলেন আমার জীবনসঙ্গী রাজীব গান্ধী। এটি রাজ্যসভায় ৭ ভোটে হেরে গিয়েছিল।" মহিলাদের সংরক্ষণ বিল নিয়ে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে কংগ্রেসের প্রথমদিকের ভূমিকাকেই সামনে এনেছেন সনিয়া গান্ধী। বিজেপির সরকারের এই বিলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেস। পাশাপাশি সনিয়া গান্ধী আরও বলেছেন, মহিলা সংরক্ষণ বিল বাস্তবায়নে কোনও বিলম্ব করলে তা ভারতীয় মহিলাদের প্রতি চরম অবিচার হবে।

সনিয়া সংসদে বলছেন, পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাওয়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার রাজ্যসভায় সেই বিল পাস করে। যার ফলেই স্থানীয় সংস্থাগুলির মাধ্যমে সারা দেশে ১৫ লক্ষ নির্বাচিত মহিলা নেত্রী রয়েছেন। রাজীব গান্ধীর স্বপ্ন আংশিকভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে। পুরোপুরি সম্পূর্ণ হবে এই বিল পাশ হলেই। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সরোজিনী নাইডু, অরুণা আসাফ আলি সহ বিভিন্ন নেত্রীর ভূমিকাও তুলে ধরেন সনিয়া।

মঙ্গলবার সংসদের বিশেষ অধিবেশন চলাকালীন লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করা হয়। 'নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম' নামের এই বিলটি লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের প্রস্তাব করে। সনিয়া তপশিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মহিলাদের সংরক্ষণ ও প্রতিনিধিত্বের লক্ষ্যে তৈরি এই বিল অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন- অধীর-সেলিম না ধুপগুড়ি — কে ‘ভেঙে’ দিল ইন্ডিয়া জোট?

মহিলাদের সংরক্ষণ বিল সত্যিই ২০১০ সালে রাজ্যসভায় পাস হয়েছিল কিন্তু লোকসভায় পাস করা যায়নি কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সমাজবাদী পার্টি এবং তার নিজের দলের মধ্যেই অনেকের সমর্থন ছিল না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে হয় বিল থাকবে নয় সরকার। সনিয়া গান্ধী দ্বিতীয়টিকেই বেছে নিয়েছিলেন। আজ বিজেপি এই বিষয়টিকেই হাতিয়ার করেছে যে, সনিয়া গান্ধী কেন এই বিলের কৃতিত্ব কুড়োতে চাইছেন।

বিজেপির সাংসদ নিশিকান্ত দুবে পরে তপশিলি জাতি (এসসি) এবং তপশিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণের একটি বিল নিয়ে ২০১২ সালে লোকসভায় কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টির মধ্যেকার দ্বন্দ্বের কথা তুলে ধরেন। নিশিকান্ত বলছেন, “এই একই কক্ষে, যখন ভি নারায়ণস্বামী এসসি/এসটিদের জন্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত একটি বিল পেশ করছিলেন, তখন সমাজবাদী পার্টির যশবীর সিং তার হাত থেকে বিলটি ছিনিয়ে নিয়ে সেটি ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। এই একই সংসদে, ম্যাডাম সোনিয়া গান্ধীজি প্রথম এসে তাঁর কলার ধরেছিলেন।"

আরও পড়ুন- দু-দশকের লাগাতার চেষ্টা! তবু কেন কখনও পাশ হয়নি মহিলা সংরক্ষণ বিল

ইন্ডিয়া জোটের আরেক শক্তি ডিএমকের নেত্রী কানিমোঝিও এই বিলের সপক্ষে কথা বলেন। কানিমোঝি বলছেন, মহিলাদের সংরক্ষণ বিলটি ঠিক সংরক্ষণের বিষয়ে নয় বরং পক্ষপাত ও অবিচার দূর করার এক বড় ধাপ। তবে, এই বিলটিতে প্রস্তাবিত লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ আদমশুমারি এবং সীমা নির্ধারণের পরেই কার্যকরী হবে৷ কানিমোঝি বলছেন, বড্ড দেরি হয়ে যাবে। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এতদিন ফেলে রাখার কোনও যৌক্তিকতাই নেই।

মহিলাদের সেলাম ঠুকলেই, দেবী করে পুজো করলেই সম্মান করা হয় না। লড়াই বা কাজ হবে সমানে সমানে। মহিলাদের আসন সংরক্ষণ এই দেশের গণতন্ত্রে মহিলাদের এক বড় অস্ত্র হবে। ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে তাই কোনও দেরিই কাম্য নয়।

More Articles