হাতিবাগান বা নিউমার্কেট কি এখনও বঙ্গ জীবনের কেনাকাটার অঙ্গ?
Durga Puja 2023 Shopping Haatibagan and New Market: মহালয়া থেকেই রাস্তায় ঠাকুর দেখার ঢল নামলেও কলকাতার অন্যতম দু'টি বড় মার্কেটে যে পরিমাণ ভিড় থাকার কথা, এ বছর দেখা গেল না তার সিকিভাগও।
মহালয়া মানেই দেবীপক্ষের সূচনা। দেখতে দেখতে এসে গিয়েছে তৃতীয়াও। দুর্গাপুজো ঘিরে বাঙালির যে উত্তেজনা, তাতে কেকের উপর চেরিটি যেন শপিং। পুজোর বাজার ছাড়া পুজো যেন নুন ছাড়া মাংসটি। তাই পুজোর শেষদিন পর্যন্ত বাঙালির বাজার চলতেই থাকে। পুজোর সাজ হতে হবে সবার সেরা। তাই সেরা জুতা, জামা থেকে সেরা প্রসাধনী, ব্যাগ থেকে গয়নাগাটি, হরেক রকম জিনিসের খোঁজে মানুষ সারা কলকাতা চষে ফেলতেও প্রস্তুত। আর আজকে বলে নয়, এ যেন এক চিরকালীন পরম্পরা। প্রতিবছর এ সময়ে উত্তর ও মধ্য কলকাতার হাতিবাগান এবং নিউ মার্কেট চত্বরে মানুষের ঢল নামে। রাস্তার ধারে দোকানগুলোতে উপচে পড়ে ভিড়। প্রত্যেকেই নিজের নিজের পছন্দসই জিনিস বেছে নিতে ব্যস্ত। হাতিবাগানের সস্তার কানের দুল হোক বা নিউ মার্কেটের ব্যাগের বাজার। বাঙালিরা যেন এই কয়েকটা দিনের অপেক্ষাতেই থাকে সারা বছর ধরে। ব্যবসায়ীদের কাছেও এ সময়টা ভীষণ জরুরি। নাওয়া-খাওয়া ভুলে এই কটা দিন লাভের গুড় কুড়িয়ে নিতে চান তাঁরাও।
এ বছর পুজোর বাজারের অনেকটা অংশ জুড়ে বাধ সেধেছে বৃষ্টি। তবে শেষ কয়েকদিনে বৃষ্টির ফাঁড়া কাটিয়ে উঠে কয়েকদিন ধরে কলকাতা শরতের সাজ সেজেছে। তবে হাওয়া অফিস কিন্তু বৃষ্টির সম্ভাবননা একেবারে উড়িয়েও দিতে পারছে না। এখনও পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাস যা বলছে, তাতে ষষ্ঠী সপ্তমী বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকলেও অষ্টমী থেকে আবার ভার হতে পারে আকাশের মুখ। বর্ষা শেষ হওয়ার পরেও এ বছর বৃষ্টির বিরাম ছিল না। আর সেই মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টির ফলেই এ বছর মার খেয়েছে বৃষ্টির বাজার। দফায় দফায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় অনেকেরই পুজোর বাজার শুরু করতে দেরি হয়েছে। তাছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে রমরমিয়ে বেড়েছে অনলাইন কেনাকাটা। ফলে অনেকেই দোকানে গিয়ে কেনাকাটার চেয়ে অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে কিনে নিতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। ফলে সেই অনলাইনের আলোয় অনেকটাই ফিকে পড়েছে রাস্তার ধারের ছোটখাটো দোকানগুলি। কিন্তু যতই অনলাইন আসুক, পুজোর আগে ভিড় ঠেলে জিনিস কেনার যে নস্টালজিয়া, তাঁকেও ছাড়তে রাজি নয় মানুষ। ফলে পুজোর আগের সপ্তাহান্তগুলিতে ভিড়ে ফেটে পড়েই হাতিবাগান, নিউমার্কেট বা গড়িয়াহাটের মতো বাজার এলাকা। তবে এ বছর যেন সেই হাওয়ায় খানিকটা ছেদ পড়েছে। পুজোর আগের পুজোর আগের শেষ শনি-রবিবারে নিউমার্কেট এবং হাতিবাগানকে দেখা গেল অনেকটাই অন্যরকম, অন্তত প্রতিবারের তুলনায় তো বটেই।
আরও পড়ুন: অনলাইন শপিং না গড়িয়াহাট? কলকাতা বাঁচে কীসে?
অন্যবারের তুলনায় এ বছর মহালয়া থেকেই যেন পুজোর আমেজ শুরু হয়ে গিয়েছে বাঙালির। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তো মহালয়ার পর থেকেই পুজোর ঘোষণা করে দিয়েছেন। ঠাকুর দেখার ঢল নেমেছে রাস্তায় ইতিমধ্যেই। তবে হাতিবাগান, নিউমার্কেটের কিছু কিছু দোকানে ভিড় থাকলেও, অনেক দোকানেই প্রত্যাশার তুলনায় ভিড় কম। পুজোর আর চারদিনও নেই। তখনও ভর সন্ধ্যেবেলায় মাছি তাড়াতে হল ব্যবসায়ীদের। কলকাতার দুটি বড় মার্কেটে যে পরিমাণ ভিড় থাকার কথা, এ বছর দেখা গেল না তার সিকিভাগও। করোনাকালে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। নমো নমো করেই পুজো সারেন পুজোমণ্ডপগুলোও। মানুষও তেমন বাড়ি থেকে বেরোননি। গত বছর করোনা-ফাঁড়া কাটিয়ে প্রথম বার স্বাভাবিক পুজোর আনন্দে মেতেছিল আম-বাঙালি। তবে ব্যবসা সে বছরেও তেমন ভালো চলেনি। সেই ক্ষত ভুলেই এ বছর কোমর বেঁধে তৈরি হয়েছিলেন ব্য়বসায়ীরা। নতুন নতুন স্টকে সাজিয়েছিলেন দোকান। কিন্তু বৃষ্টি এসে ভেস্তে দিয়েছে সমস্তটাই। পুরনো স্টকই শেষ হয়নি অনেকের ঠিক মতো, নতুন স্টক তো দূরের কথা। শনিবার দুপুরে হাতিবাগান চত্বরে দেখা গেল সাধারণ মানুষের ভিড়। এমনকী ভিড় সামলাতে মোতায়েন রয়েছে পুলিশকর্মীই। কিন্তু যতটা ভিড় হওয়ার কথা, ততটা হচ্ছে কি! তাছাড়া মানুষের মধ্যে বেড়েছে উইনডো শপিংয়ের মানসিকতা। তাঁরা জিনিসপত্র হাতে তুলে নেড়েচেড়ে দেখছেন বটে, তবে তেমন কিনছেন কই। বরং দেখেশুনে ফিরে চলে যাচ্ছেন অনেকেই।
হাতিবাগানে অনেক বছর ধরে ব্যবসা করছেন মিহির সাহা। মিহিরবাবু জানালেন, "গত বছরের থেকেও এই বছরের ব্যবসা আরও খারাপ। বৃষ্টি এসে যেন বাজার একেবারে শেষ করে দিয়েছে। সাধারণ দিনগুলোতে একেবারেই ভিড় হচ্ছে না। মানুষজন কেনাকাটা করতে আসতেই পারেননি এই বছর। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কেনাকাটা করা যায় নাকি! উপরন্তু এ বছর পুজোর আমেজ আসতেও অনেকটা বেশি সময় লেগে গিয়েছে। লোকজন কেনাকাটা শুরু করেছেন অনেকটাই দেরি করে। শনিবার রবিবার ছাড়া ভিড় হচ্ছে না তেমন। এদিকে শনিবার এবং রবিবারের দিনগুলোতে এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে যে, মানুষজন একেবারেই আসেননি কেনাকাটা করতে।"কস্টিউম জুয়েলারির এক ব্যবসায়ী জানালেন, "আমাদের প্রধান ক্রেতা কিন্তু কলেজ ছাত্রীরাই। কিন্তু এবছর বৃষ্টিতে আমাদের ডিমান্ড অনেকটাই কমেছে। স্টক তুলেছিলাম ভালোই। কিন্তু, আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। যদিও বিগত কয়েকটা দিন আবহাওয়াটা ভালো থাকায়, অনেকেই এসেছেন কিনতে। ২০২২ সালে আমরা মোটামুটি একই রকম স্টক তুলেছিলাম। কিন্তু আবহাওয়া ভালো থাকায় সে বছর ব্যবসা মন্দ হয়নি। আসল কেনাকাটার সময় তো প্রায় শেষ। পুজোর আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। প্রথমদিকে ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। শেষ কয়েকদিনে হয়তো ক্রেতা বাড়বে সংখ্যায়। কিন্তু আগের কয়েক সপ্তাহ বৃষ্টিতে যেভাবে ক্ষতি হয়েছে, সেটা পূরণ করা সম্ভব হবেনা।"
কেন কমছে হাতিবাগান, গড়িয়াহাট বা নিউমার্কেটের মতো জনপ্রিয়তম বাজারগুলির ক্রেতা। তবে কি অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোই খাচ্ছে দেখে শুনে কেনার বাজার। এই প্রশ্নের একটু মিশ্র প্রতিক্রিয়াই পাওয়া গেল বৈকি। যারা পোশাক বিক্রি করেন, তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই অনলাইন মার্কেট অনেকটা প্রভাব ফেলেছে। পোশাকের বাজারে রীতিমতো খরা নামিয়েছে অনলাইন বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস। নতুন প্রজন্মের GEN-Z-রা পুজোর পোশাকটা বাড়িতে বসে অনলাইনে অর্ডার করতেই বেশি স্বছন্দ। বাকি যারা একটু দেখে শুনে কেনাকাটা করতে চান, তাদের প্রধান গন্তব্য শপিং মল। কিন্তু যারা শাড়ি বিক্রি করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তেমন পাল্টায়নি। শাড়ির দোকানে কিন্তু এখনো ভালোই ভি। হাতিবাগানের কয়েকটা শাড়ির দোকান ঘুরে দেখা গেল, সেখানে ক্রেতাদের ভিড়। ব্যবসা কেমন চলছে জিজ্ঞেস করায়, অনেকেই বললেন, শাড়ির ক্রেতা আগের তুলনায় তো অনেকটাই কমেছে। তবে এর কারণ বৃষ্টি কিংবা অনলাইন মার্কেটের প্রভাব নয়। মূলত মানুষের রুচি পরিবর্তনেই শাড়ির মার্কেট ক্রেতা হারিয়েছে। অপেক্ষাকৃত হালকা কুর্তিতেই আজকাল মন মজেছে বাঙালীর। তবে, যারা শাড়ি পরতে পছন্দ করেন, তারা কিন্তু দোকানে গিয়েই নিজের পছন্দের শাড়িটা কিনে আনতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন আজও।
তবে, ধাক্কা খেয়েছে কসমেটিকসের দোকানগুলি। সুগার, মেবলিনের যুগে সাধারণ মানের কসমেটিকস অনেকেই ব্যবহার করতে পছন্দ করেন না আর। উপরন্তু অনলাইনে আজকাল বিকল্পের কমতি নেই। যার ফলে কসমেটিকসের দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করতে অনেকেই আজকাল আর তেমন পছন্দ করেন না। কসমেটিকসের দোকানে ঘুরে দেখা গেল হাতেগুনে দু-একটা দোকানে হয়তো ভিড় রয়েছে। ক্রেতার অপেক্ষায় হাপিত্যেশ করে বসে আছেন বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। কেমন চলছে ব্যবসা? উত্তরে এক ব্যবসায়ী জানালেন, "ব্যবসা যদি চলতই তাহলে আপনি এই সময় আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন না। করোনা অতিমারির পরের বছরটা তেমন ভালো যায়নি। আমরা ভেবেছিলাম এই বছর ব্যবসা ভালো হবে। প্রচুর মাল তুলেছি। কিন্তু বৃষ্টি এসে সব দফারফা করে দিল, এখন আর বিক্রির তেমন সম্ভাবনা নেই। আগে সকাল থেকে খাওয়ার সময় পেতাম না ক্রেতার চাপে। কিন্তু এখন অফুরন্ত সময়।"
পুজো আর চৈত্র সেলের সময় হাতিবাগান দিয়ে যাতায়াত করা রীতিমতো মুশকিল হয়ে পড়তো একটা সময়। এবার সেই ভিড়ের লেশমাত্র নেই। হাতিবাগানের এক দোকানদার বলছেন, "২০২২ এর পুজোতে বাজার তা-ও কিছুটা ভালো ছিল। কিন্তু এবছরের বৃষ্টি পুরো বাজারটাকেই শেষ করে দিয়েছে। রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা। আগের সেই ভিড়ের নামমাত্র নেই এ বছর।" উত্তরা মার্কেটের এক পোশাকের দোকানের মালিক সোমনাথ সরকার বললেন, "পুজোর জন্য স্বাধীনতা দিবসের পরে পরেই নতুন স্টক নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু অর্ধেকের বেশি এখনো পড়ে রয়েছে। দু'দিনে আর কতটাই বা বিক্রি হবে। করোনার সময়েও বাজার ভাল ছিল এর চেয়ে। সেই সময় অন্তত বৃষ্টিটা হয়নি। অনলাইনেও এতটা মানুষ কেনাকাটা করতে পছন্দ করতেন না। কিন্তু এখন সব দিক দিয়েই যেন আমরা মার খাচ্ছি। হাতে আর মাত্র দু'দিন রয়েছে। বাজার এবার আরও ছোট হয়ে যাবে। ফলে যতটুকু ভিড় আপনি দেখতে পাচ্ছেন, তার অর্ধেক মানুষও জিনিস কিনবেন না।"
এই একই অবস্থা চলছে নিউমার্কেটেরও। করোনার আগের বছরগুলিতে গ্র্যান্ড হোটেলের পাশের গলি থেকে লিন্ডসে স্ট্রিট ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তায় যেন হাঁটা যেত না। বিকেল তিনটে বাজলেই পথ জুড়ে শুধু মানুষের কালো কালো মাথা। বিক্রেতারা জিনিস দিয়ে কুলাতে পারতেন না। ইমিটেশন থেকে শুরু করে কাজল, লিপস্টিকের মত শয়ে শয়ে জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসতেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু, এবছর সেই রাস্তায় সেই ভিড় অনেকটাই কম। মহালয়ার দিনেও তেমন একটা ভিড় দেখা গেল না নিউমার্কেটের রাস্তায়। নিউমার্কেটের এক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, "মানুষের হাতে এখন টাকা অনেকটাই কমে গেছে। যারা নিউমার্কেট থেকে এতদিন ঘুরে ঘুরে পাঁচটা-ছ'টা জিনিস কিনতেন, তাঁরাও আজকাল একটা কি দু'টো জিনিসের বেশি কিনতে পারছেন না। মানুষের সামর্থ্য নেই বেশি শপিং করার। যারা শপিংমলে শপিং করতে পারছেন না, তাঁরা ঘুরে ঘুরে জিনিস কিনছেন। তাছাড়া শপিংমলেও আজকাল সস্তা দামের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। কিছু শপিং মল এমন রয়েছে যেখানে আমাদের থেকেও সস্তা দামে টি-শার্ট কিংবা জিনস পাওয়া যায়। ফলে, সেই সব শপিংমলে ভালোই ভিড় হচ্ছে। ফলে সব দিক থেকেই মার খাচ্ছে মার্কেটের হকাররা।"
নিউমার্কেটের বাজারে অনলাইনের প্রভাব কি রকম? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, "আজকাল মানুষের মধ্যে দশটা দোকান ঘুরে দরদাম করে জিনিস কেনার প্রবণতাটা কমেছে। এই বিষয়টা আমরাও অনেকটাই বুঝি। সেই কারণে আমরাও ন্যায্য মূল্যে জিনিস দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু অনলাইনে যেরকম ভাবে অফার তাঁরা পান, সেরকম অফার আমরা কোনওভাবেই দিতে পারবো না। অনলাইন মার্কেটপ্লেস মানে সরাসরি হোলসেলারের থেকে ক্রেতাদের কাছে জিনিস পৌঁছে যাওয়া। কিন্তু, বাজারে কোনও জিনিস নিয়ে বসতে গেলে, এগুলো ছাড়াও অনেক খরচ-খরচা রয়েছে। তাই সব বিষয়টাই আমাদের মাথায় রাখতে হয়। অনলাইনে ডিসকাউন্টের যুগে এসবের জন্যেই হয়তো আমরা অনেকটা পিছিয়ে পড়ছি। তবে, আগেকার দিনে পুজোর শপিংয়ে দরদাম করার যে মজাটা ছিল, সেটা হয়তো এখন আর পাওয়া যাবে না চেষ্টা করলেও।"
নিউ মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী সৌভিক সরকার বলছেন, "আগে এই একটা মাসে আমাদের প্রায় ছয় মাসের লাভ হয়ে যেত। করোনাভাইরাসের লকডাউনে মানুষের অনলাইনে কেনার ঝোঁক বেড়েছে। যারা সেই সময় অনলাইনে কেনাকাটা করে আরাম পেয়েছিলেন, তাঁরা আর বাজারে ফিরতে চাইছেন না। ফলে বলতে গেলে সেই সমস্ত ক্রেতারা আমাদের হাতের বাইরে চলে গিয়েছেন। আর বাড়িতে বসেই যদি সব জিনিস হাতের মুঠোয় পাওয়া যায়, তাহলে আর তাঁরা বাইরে কেন বেরোবেন বলুন তো? বৃষ্টি তো অবশ্যই এ বছরের একটা সমস্যা ছিল। কিন্তু, আমাদের জন্য আরও বড় সমস্যা হয়ে গিয়েছে এই অনলাইনের বিষয়টা। ব্যাগের মার্কেট, জুয়েলারি মার্কেট চলছে। আগের তুলনায় ক্রেতা কমলেও তাদের জিনিসের ক্রেতা একেবারেই কমে যায়নি। কিন্তু পোশাক-আশাকের দোকানের ক্রেতা অনেকটাই হারিয়ে গেছে।"
আরও পড়ুন: পুজোর বাজার মাটি, ছোট ব্যবসায়ীদের চরম দুর্ভোগ, কবে থামবে বৃষ্টি?
মানুষের হাতে টাকার অভাব, মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি, অথবা অনলাইন মার্কেটপ্লেসের রমরমা, কারণ যেটাই হোক না কেন, কলকাতার পুরনো বাজারগুলির ব্যবসায়ীরা যে পুজোর আগে মার খাচ্ছেন সেটা বলাই বাহুল্য। শাড়ির দোকানগুলো হয়তো এখনো চলছে। কিন্তু অন্য সমস্ত ধরনের দোকান আজকাল অনেকটাই ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষত সমস্যায় পড়েছে পুরুষদের পোশাকের দোকানগুলি। একটা সময় যেখানে মহিলাদের পোশাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুরুষদের পোশাক পাওয়া যেত এই সমস্ত মার্কেটে, সেখানে এইসব দোকানে আজকাল টি-শার্ট আর ট্র্যাকপ্যান্ট ছাড়া অন্য কিছু দেখতেই পাওয়া যায় না। এ বছরটায় হয়তো বৃষ্টি হয়েছে বলে বাজার এতটা খারাপ। পরের বছরে যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে কি বাঙালিরা আবার এই সমস্ত দোকানে জিনিস কিনতে আসবেন? ব্যবসায়ীরা যদিও তেমনটা আশা একেবারেই করছেন না। বরং অনেকেই বলছেন, আধুনিকতার ঝড়ে আর কয়েকদিন পরে হয়তো এই ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলোও পুরোটাই শপিং মল হয়ে যাবে। আর সেটাই বোধহয় ভবিতব্য। তবে কি পুজোয় ঘুরে ঘুরে বাজার করার যে পরম্পরা, তা একেবারে ধুয়েমুছে যাবে বাঙালি সংস্কৃতি থেকে। তার উত্তর বোধহয় রাখা একমাত্র সময়ের কাছেই।