ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদই কাল? কেন ৪ বছরের জন্য বহিষ্কৃত কুস্তিগীর বজরং পুনিয়া?
Bajrang Punia Suspended: প্রভাবশালী ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেই কি একে একে নিজেদের কেরিয়ারে কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছেন সাক্ষ্মী, ভিনেশ, পুনিয়ারা?
ভারতীয় কুস্তিগীরদের নিয়ে একের পর এক বিতর্ক সামনে আসছে। প্যারিস অলিম্পিকে ভিনেশ ফোগাটের চূড়ান্ত পর্ব থেকে বাতিল হওয়া, তার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগের রেশ কাটতে না কাটতেই আবার শিরোনামে এসেছেন অন্য এক বিখ্যাত কুস্তিগীর বজরং পুনিয়া। ন্যাশনাল অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি (NADA) কুস্তিগীর বজরং পুনিয়াকে চার বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে। গত ১০ মার্চ জাতীয় দল নির্বাচনের ট্রায়ালের সময় ডোপ টেস্টের জন্য নমুনা দিতে অস্বীকার করেছিলেন বজরং। এরই শাস্তি হিসেবে চার বছরের জন্য 'সাসপেন্ড' করা হলো তাঁকে। টোকিও অলিম্পিকের ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ীকে গত ২৩ এপ্রিল NADA প্রাথমিকভাবে সাসপেন্ড করেছিল। এরপরে কুস্তির বিশ্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড রেসলিং (UWW) নিজস্ব নীতিতে বজরং পুনিয়াকে বহিষ্কার করে। সত্যিই কি ডোপিং নীতিতেই এত বড় সিদ্ধান্ত?
বজরং পুনিয়া আগে তাঁর বিরুদ্ধে অস্থায়ী স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন। এর ফলে NADA-এর অ্যান্টি-ডিসিপ্লিনারি ডোপিং প্যানেল (ADDP) ৩১ মে এটি প্রত্যাহার করে কিন্তু NADA-এর নোটিশ জারি করা পর্যন্ত তা মুলতুবি ছিল। পরবর্তীকালে, NADA ২৩ জুন কুস্তিগীর পুনিয়াকে নোটিশ পাঠায়। বজরং পুনিয়া সম্প্রতিই তাঁর সহখেলোয়াড় কুস্তিগীর ভিনেশ ফোগাটের সঙ্গে কংগ্রেসে যোগদান করেছেন। এই মুহূর্তে অল ইন্ডিয়া কিষাণ কংগ্রেসের দায়িত্বে নিযুক্ত হয়েছেন বজরং। গত ১১ জুলাই লিখিতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগটিকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন তিনি। এই বিষয়ে শুনানি হয় গত ২০ সেপ্টেম্বর ও ৪ অক্টোবর।
আরও পড়ুন- শিরদাঁড়া ছিল, তাই ষড়যন্ত্র করেই বাদ দেওয়া হলো ভিনেশে ফোগাটকে?
অ্যান্টি-ডিসিপ্লিনারি ডোপিং প্যানেল মনে করে, ক্রীড়াবিদ পুনিয়াকে ১০.৩.১ ধারার অধীনে নিষিদ্ধ করা এবং ৪ বছরের জন্য বহিষ্কার করা উচিত। বহিষ্কৃত থাকার ফলে বজরং পুনিয়া কোনও প্রতিযোগিতামূলক কুস্তিতে অংশ নিতে পারবেন না। এমনকী বিদেশে কোথাও কুস্তি শেখানোর জন্য কোচ হিসেবে আবেদনও করতে পারবেন না। যেহেতু পুনিয়াকে আগে অস্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাই সেই অনুযায়ী ৪ বছরের জন্য বহিষ্কৃত থাকার মেয়াদ শুরু হবে বিজ্ঞপ্তিটি পাঠানোর তারিখ থেকে অর্থাৎ ২৩.০৪.২০২৪ থেকে। সাময়িক স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হলেও ৩১.০৫.২০২৪ থেকে ২১.০৬.২০২৪ পর্যন্ত সময়টি চার বছরের পর্বের মধ্যে ধরা হবে না।
বজরং পুনিয়া ধারাবাহিকভাবে দাবি করেছেন, ডোপিং নিয়ন্ত্রণে এর আগেও তাঁকে নিশানা করা হয়েছে কারণ তিনি প্রাক্তন ডব্লিউএফআই সভাপতি ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিলেন। শাসকদলের ঘনিষ্ঠ তথা মহিলা কুস্তিগীরদের যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে যাওয়াতেই একাধিক অন্যায় আচরণের সম্মুখীন হয়েছেন বলে দাবি বজরংয়ের। ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ সত্ত্বেও তাঁর ছেলে করণ ভূষণ সিংকে চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনে কায়সারগঞ্জ থেকে টিকিট দিয়েছিল বিজেপি। কায়সারগঞ্জের বিশাল প্রভাবশালী বিধায়ক ছিলেন ব্রিজ ভূষণ।
পুনিয়া আরও বলেছেন, তিনি কখনই ডোপিং টেস্টের জন্য নমুনা দিতে অস্বীকার করেননি। তবে তিনি একটি স্পষ্ট উত্তর চেয়েছিলেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নমুনা সংগ্রহের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ কিট কেন পাঠানো হয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে NADA-কে মেল করে জবাব চেয়েছিলেন তিনি। উত্তরে পেলেন 'সাসপেনশন'। ভিনেশ ফোগাটের অলিম্পিকের চূড়ান্ত মূহূর্তে বাদ পড়ার সময়েও ব্রিজ ভূষণ সিং-এর বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদের প্রসঙ্গটি উঠে আসে। প্রভাবশালী ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেই কি একে একে নিজেদের কেরিয়ারে কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছেন সাক্ষ্মী, ভিনেশ, পুনিয়ারা?