চরম পরিণতি ডেকে আনতে পারে সয়াসস! সুস্বাদু সস যেভাবে প্রাণ নিতে পারে আপনারও...

Soy Sauce Hazards: যেখানে এই সয়া সসের উদ্ভাবন সেই পূর্ব এশিয়ায় বহু মানুষই সয়া সস খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

চকোলেট খেয়ে মৃত্যুর কথা অনেকেরই জানা, কিন্তু অত্যধিক সয়া সস থেকেও আপনার মৃত্যু ঘটতে পারে- এই বিষয়টি বোধহয় আগে জানা ছিল না। শুনতে খুবই উদ্ভট মনে হলেও বিষয়টি জলবৎ তরলং! সয়াবিন বাড়ির রান্নাঘরে নিরাপদ এক সামগ্রী। বহুমুখী তার গুণমাহাত্ম্য। সয়াবিন পুষ্টির আকর তো বটেই, পাশাপাশি এই সয়াবিন থেকেই মেলে সয়া দুধ। নিরামিষভোজীদের নির্ভরযোগ্য খাবার সয়াবিন। চটজলদি সুস্বাদু তরকারি মানেই সয়াবিন ভরসা। ওদিকে সয়াবিন থেকে তৈরি সয়া সস বাজারে না থাকলে, সাধের চাউমিন-পাস্তায় এমন স্বাদই বা জোগাত কে? সুস্বাদু নোনতা এই সস প্রথম তৈরি হয় দুই হাজারেরও বেশি বছর আগে এবং তখন থেকেই প্রায় সমগ্র বিশ্ব জয় করেছে সয়া সস। এটি এক এমন উপাদান যা সরাসরি খাবারে যোগ করা যেতে পারে; ভাতে হোক বা নুডলসে, সুশি হোক বা পাস্তা; কিছু জায়গায় আইসক্রিমের উপরেও যোগ করা হয় সয়া সস।

কিন্তু ধরুন, এসব না করে আপনার ইচ্ছা হলো, ঢকঢক করে সটান বোতল থেকে সয়া সস খাবেন। খেতেই পারেন, সরাসরি কোমায় চলে যাওয়ার এর চেয়ে সহজ উপায় আর হতে পারে না। অর্থাৎ আপনার রান্নাঘরেই মজুত আছে বিপজ্জনক এই প্রাণঘাতী উপাদান যা খেয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন মানুষ। স্যাচুরেটেড লবণের দ্রবণ অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে মৃত্যুর বিবিধ ঘটনা অনেকেরই জানা। এমনকী যেখানে এই সয়া সসের উদ্ভাবন, সেই পূর্ব এশিয়ায় বহু মানুষই সয়া সস খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

আরও পড়ুন- সায়ানাইডের চেয়ে ১২০০ গুণ বিষাক্ত! এই মাছ খাওয়া মাত্রই কোমাতে স্বামী, স্ত্রীর মৃত্যু!

সয়া সস যে কারণে এত সুস্বাদু, ঠিক একই কারণে সেটি এত বিষাক্ত! এতে লবণের পরিমাণ যা, তা মাত্রাছাড়া। মাত্র এক টেবিল চামচ সয়া সসে আপনার দৈনিক সোডিয়াম গ্রহণের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি সোডিয়াম থাকে। ফলে অতিরিক্ত সোডিয়াম মানেই, বুঝতেই পারছেন। বছর দশেক আগে, ২০১৩ সালে ১৯ বছরের এক যুবক প্রায় এক লিটার সয়া সস ঢকঢক করে খেয়ে ফেলেন! কালবিলম্ব না করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। শার্লটসভিলের ভার্জিনিয়া মেডিকেল সেন্টারের ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া মেডিক্যাল সেন্টারে এই সয়া সস দুর্ঘটনার চিকিৎসক ডেভিড জে কার্লবার্গ সেই সময়ে জানান, অসুস্থ ওই যুবককে যে যে ওষুধ দেওয়া হয়েছিল সেগুলির কোনওটিতেই তিনি সাড়া দেননি। মূল স্নায়ুতন্ত্র একেবারেই কাজ করছিল না ওই যুবকের।

রক্তে অত্যধিক লবণের কারণে হাইপারনেট্রেমিয়া নামক একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় রক্তের মধ্যে লবণের মাত্রা সমান করার প্রয়াসে শরীরের টিস্যু থেকে জল বেরিয়ে যায়। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটি ফুসফুসের মতো জায়গায় মারাত্মক তরল জমার অন্যতম কারণ তো বটেই, পাশাপাশি জল মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অঙ্গটি সঙ্কুচিত হয়ে গিয়ে রক্তপাতও হতে পারে, যার ফলে খিঁচুনি এবং অচেতনতার মতো স্নায়বিক লক্ষণ দেখা দেয়।

আরও পড়ুন- হাত পাতলেই মেলে ‘চাউমিন’ প্রসাদ, যেভাবে কলকাতার কালী মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন চিনারা

১৯ বছরের ওই রোগীর খুব দ্রুতই চিকিত্সা করা হয়েছিল। সয়া সস খাওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যে, তাঁর দেহে সোডিয়ামের মাত্রা কমানোর জন্য IV-এর মাধ্যমে ৬ লিটার (১.৫ গ্যালন) চিনিযুক্ত তরল খাওয়ানো হয়েছিল। এটি দ্রুত কাজ করে। এক ঘণ্টায় ৪ লিটারের (১ গ্যালন) বেশি প্রস্রাব করার পরে, রোগীর সোডিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। যদিও তাঁর চেতন এবং মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক হতে আরও অনেকদিনই সময় লেগেছিল।

ওই মেডিকেল সেন্টারে যখন রোগীর রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছিল, দেখা যায় তাঁর রক্তের সোডিয়ামের স্তর ছিল মারাত্মক, কোনও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যত হতে পারে, তার চেয়েও ঢের বেশি। এই অবস্থায় হয় আক্রান্তের মৃত্যু ঘটে বা স্থায়ী স্নায়বিক ক্ষতি হয়। কলেজে চ্যালেঞ্জ করে এই মারাত্মক খেলা তাঁর জীবন নেয়নি, এটাই আশ্চর্যের! সুতরাং, সাবধান। নুডলসে বা রাইসে একটু বেশি সয়া সস দিতে মন চাইলে এই ঘটনাটির কথা মনে পড়লে ভালো। খাবারের স্বাদ বাড়াতে গিয়ে আজীবনের মতো জীবনের স্বাদ যেন হারিয়ে না যায়।

More Articles