১০৩ বছর বয়সেও লাগাতার জিম! বয়সকে তুড়ি মেরে দূরে সরানোর যে মন্ত্র শেখাচ্ছেন এই 'ঠাকুমা'

103 Years Old Grandma Gym Fitness : বাকিদের সঙ্গে টেরেসাকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। কারণ, এই শক্তিশালী ‘তরুণী’র বয়স খুব বেশি নয়, মাত্র ১০৩ বছর!

আজকের ব্যস্ত জীবনে নিজেকে সময় দেওয়ার মতো ফুরসত অনেকেরই মেলে না। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ভারী খাবার, পার্টি, নৈশযাপন – খুব মামুলি ব্যাপার। তবে এর মাঝেও জিম সেন্টারগুলিতে ভিড় জমে। শরীরচর্চা জারি রাখেন অনেক যুবক-যুবতীই। কিন্তু সেই চর্চা করতে করতে অনেক্সময়ি হাঁফ ধরে যায়। গোদা বাংলায় বললে, অনেকেই শেষমেশ ‘ল্যাদ খেয়ে যান’। আর বয়স যত বাড়ে, বিভিন্ন রোগও যেন আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে। সেইসঙ্গে শরীরের কসরতও কমতে থাকে।

এই ছবিটার উল্টোদিকেই দাঁড়িয়ে আছেন ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যামারিলোর বাসিন্দা টেরেসা মুর। সকাল হলেই ট্র্যাকস্যুট পরে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন। দৌড়চ্ছেন, হাঁটছেন; তারপর সেখানেই ক্ষান্ত থাকছেন না। জিমে গিয়ে রীতিমতো ঘাম ঝরাচ্ছেন। এক-দু’দিন নয়, নিয়ম মেনে বারবার। জিমের ট্রেনারদের কাছেও আপনজন হয়ে উঠেছেন টেরেসা মুর। কিন্তু এই ছবিতে আশ্চর্যের কি আছে! এরকম কত মহিলা প্রতিদিন জিম করেন, শরীরচর্চা করেন। সেটা ঠিকই, কিন্তু বাকিদের সঙ্গে টেরেসাকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। কারণ, এই শক্তিশালী ‘তরুণী’র বয়স খুব বেশি নয়, মাত্র ১০৩ বছর!

কমিক্সের ভাষায় বলতে গেলে, সত্যিকারের ‘সুপার উওম্যান’ তিনি। ১০৩ বছর বয়সে চামড়া কুঁচকে আসে, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বাসা বাঁধে বিভিন্ন রোগ। আর সেখানে দাঁড়িয়েই টেরেসা এই বয়সেও একদম বহাল তবিয়তে জিম করে যাচ্ছেন। বয়সের তুলনায় তাঁকে বেশ ফিট এবং ‘তরুণ’ই লাগে। তাঁর মেয়ে শেইলা মুরের বক্তব্য, জিমই হল মায়ের মন ভালো করার জায়গা। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চারবার টেরেসা জিমে যাবেনই। গিয়েই শুরু করে দেন শরীরচর্চা।

তাঁর কথা বলতে গিয়ে মেয়ে শেইলা জানিয়েছেন, ১৯৪৬ সালে টেরেসার বিয়ে হয়। স্বামী ছিলেন সেনাবাহিনীতে। তাই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাযাবরের মতো ঘুরে ঘুরেই কেটে গিয়েছে অনেকটা সময়। আর এই বিস্তীর্ণ সময়ে তিনি মানুষকে, সমাজকে জানার চেষ্টা করেছেন। নিজের ভেতরের শিশুকে, কৌতূহলী মনকে বারবার বাঁচিয়ে রেখেছেন। আর সেটাই তাঁকে এতদিন ধরে বাঁচতে সাহায্য করেছে। সেইসঙ্গে আছে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, শরীরচর্চা, জিম আর মুখভরা হাসি। জিমের বন্ধুদের সঙ্গেই আনন্দ করে জীবন উপভোগ করছেন তিনি, ১০৩ বছর বয়সেও।

আর এই উদাহরণ দেখিয়েই সবাইকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলছেন ডাক্তাররা। কেবল যৌবন বা কৈশোরে নয়, বয়স হয়ে গেলেও শরীরচর্চা, নিয়ন্ত্রিত খাওয়া দাওয়া আর আনন্দে থাকা যে কতটা উপকার করে, তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ স্বয়ং টেরেসা মুর। ১০৩ বছর বয়সেও এতটা ফিট তিনি, তার রহস্য এই প্রতিনিয়ত নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখা। ডাক্তাররা বলছেন, ব্যায়াম, শরীরচর্চা করার কোনও বয়স হয় না। ৮০ বছরের বৃদ্ধ বৃদ্ধারাও এই কাজ করতে পারেন। বরং বলা ভালো, করাটা জরুরি।

আর কী কী বলছেন ডাক্তাররা? আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল জানিয়েছে, বয়স্ক মানুষদের সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট রাস্তায় হাঁটাচলা করা উচিত। অন্তত দুদিন নিজের পেশিকে সতেজ ও সচল, শক্তিশালী রাখতে হালকা জিম করতেই পারেন। এক পায়ে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার কাজও করতে পারেন। তবে একেবারেই নিজে থেকে করতেত যাওয়া ঠিক হবে না। ডাক্তারের সঠিক পরামর্শ মেনে, নিজের শরীর আর রোগ বুঝে প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। হয়তো আপনিও টেরেসা মুরের মতো এমন দীর্ঘজীবী, হাসিখুশি জীবনের অধিকারী হয়ে উঠবেন।

More Articles