বয়স কম কিন্তু ভয় বেশি, কেন তরুণীদের মধ্যে বাড়ছে স্তন ক্যান্সার?
Breast Cancer: ACS (American Cancer Society) জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে, ভারতে মোট স্তন ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা হতে পারে প্রায় ৩,১৯,৭৫০ জন। যা, ২০২২ সালে ছিল ২,১৬,১০৮ জন।
কম বয়সি মহিলাদের মধ্যেও বাড়ছে স্তন ক্যান্সার। আগে এই রোগ মূলত ষাটোর্ধ্ব নারীদের মধ্যেই দেখা দিত। কিন্তু এখন আর তা তাঁদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমানে এই ক্যান্সার ৪০ বছর বয়সের নিচের তরুণীদের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে। এটি মূলত জিনগত। এঁদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রন্থিতে হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে।
টক টুডে-র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, NCDIR (National Centre for Disease Informatics and Research)- National Cancer Registry Programme (NCRP) অনুযায়ী, ভারতে ২০১৯ সালে ২,০০,২১৮ জন নারীর স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২০২০ সালে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২,০৫,৪২৪-এ। ২০২১-এ ২,১০,৭১৪ জন এবং ২০২২-এ সংখ্যাটা ২,১৬,১০৮ জন। ২০২৩-এ সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ২,২১,৫৭৯ জনে। এই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯-২০২৩ সালের মধ্যে উত্তরপ্রদেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ১,৪৬,৫৪৪ জন নারী। দেশে সর্বাধিক। পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে তৃতীয় স্থানে। রাজ্যে ওই কয়েক বছরে আক্রান্তদের সংখ্যা ৮২,৮৩৯ জন। মহারাষ্ট্র দ্বিতীয় স্থানে (৯৩,১৩০)। তামিলনাড়ু চতুর্থ (৭৫,৪১৩) এবং বিহার পঞ্চম(৭৩,৮৮২)। সম্প্রতি ACS (American Cancer Society) জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে, ভারতে মোট স্তন ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা হতে পারে প্রায় ৩,১৯,৭৫০ জন। যা, ২০২২ সালে ছিল ২,১৬,১০৮ জন।
আরও পড়ুন- ট্যাটু করালে সত্যিই ক্যান্সার হতে পারে? যা বলছে নতুন গবেষণা
প্রথম দিকে, অনেকে বুঝতেই পারেন না, তাঁরা ক্যান্সারে আক্রান্ত। বেশিরভাগ সময়ই, এই ক্যান্সারের ক্ষেত্রে আমাদের শরীর যেসব ইঙ্গিত আমাদের দেয়, আমরা তা বুঝতে পারি না। এর লক্ষণগুলি অনেকসময় এমনই হয়, যেগুলি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিছু বলে মনে হয় না। যেমন-গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলাই স্তনে মাংসপিণ্ড বা ফোলা ভাব অনুভব করে থাকেন, যা ক্যান্সারের মতো মনে হলেও আসলে সেই মাংসপিণ্ড বা 'লাম্প' ক্ষতিকারক নয়। ফলে, অনেকেই এর প্রতি গুরুত্ব দেন না এবং তাই চিকিৎসাও দেরিতে শুরু হয়। কিন্তু, এই রোগ যত তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে, ততই ভালো। তাতে, ফল ভালো ভাবে পাওয়া যায়।
সুতরাং, বয়স নির্বিশেষে সকল মেয়েদেরই উচিত নিজেই নিজেদের পরীক্ষা করা। লক্ষ্য রাখা উচিত, স্তনে বা বগলের নীচে কোনও লাম্প বা মাংসপিণ্ড অনুভব করা যায় কি না। ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই মাংসপিণ্ডগুলি সাধারণত শক্ত হয়। লাম্পগুলির ধার বা কিনারা অমসৃণ হয়। প্রতিমাসে ঋতুস্রাবের পর, স্নানের সময় বা শোওয়ার আগে নিয়ম করে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করা উচিত। অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করলে আবিলম্বে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের (Oncologist) বা জেনারেল সার্জেনের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
যদিও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই মাংসপিণ্ডগুলি ক্ষতিকর হয় না। ফলে, ম্যামোগ্রামের মতো কোনও পরীক্ষারও প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু, নিরাপত্তার জন্য ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন- কেন ভারতীয় পুরুষরা আক্রান্ত হচ্ছেন স্তনের ক্যান্সারে? কীভাবে বাঁচাবেন নিজেকে?
যেসব নারীদের পরিবারে অতীতে বা বর্তমানে কোনো মহিলা সদস্য স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের শরীরে এই রোগ দানা বাঁধার ঝুঁকিও তুলনামূলক ভাবে বেশি থাকে। এঁদের অনেকেরই শরীরে BRCA1 এবং BRCA2 জিনে পরিবর্তন (মিউটেশন) দেখা যায়। এই জিনগুলি ক্ষতিগ্রস্ত DNA-কে রিপেয়ার করতে এং ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ফলে, যেসকল নারীর পরিবারে এই রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং করানো উচিত। এবং যাঁদের BRCA মিউটেশন রয়েছে, তাঁদের পরামর্শ দেওয়া হয় প্রতিবছর ব্রেস্ট MRI করানোর জন্য। এর ফলে শরীরে দ্রুত ক্যান্সার শনাক্তকরণ সম্ভব। আগে থেকে সতর্ক থাকতে অনেকেই prophylactic surgery করাচ্ছেন। এই পদ্ধতিতে দুটি স্তনই কেটে বাদ দেওয়া হয়। ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে আজকের নারীরা সচেতন। বিশেষত অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি নিজে সার্জারি করার পর থেকে অনেকেই এই সার্জারি করাচ্ছেন।
যত দিন যাচ্ছে ততই ক্যান্সারে আক্রান্তদের সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু, আধুনিক মহিলারা সচেতন তাঁদের শরীর নিয়ে। তাই, তাঁরা সময়ে পরীক্ষা করান এবং স্ক্রিনিংও করান। কিন্তু, রোগ প্রতিরোধের জন্য জীবনযাপনের দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। মদ্যপান, ধূমপান, অনিয়মিত এবং অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্যাভ্যাসে আসা অতিকায়ত্ব এই রোগের কারণ। এমনকি, দীর্ঘদিন ধরে এবং অতিরিক্ত মাত্রায় হরমোন গ্রহণ বা বার বার বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসাও এই ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। অতএব, এর থেকে বাঁচার উপায় হলো, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং প্রয়োজন নিয়মিত স্ক্রিনিং করানো।

Whatsapp
