লম্বায় ১৪ ফুট সমান মানুষের পায়ের ছাপ, জানেন এদেশের কোথায় রয়েছে এই বিরল নজির?
Interesting history of India : ঝাড়গ্রামের ঝনকপুর পঞ্চায়েতের বহমসিয়া এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে ঘাঘাজোর নদী। এই নদীর আশপাশের এলাকায় এই আদি মানবের বিশাল লম্বা পদচিহ্নের সন্ধান পেয়েছেন পুরাতত্ত্ববিদ অনুপ কুমার বাজপেয়ী।
চোখের সামনে পরিচিত আলোর মধ্যে যা কিছু আছে সেগুলিই সব, এমনটা ধারণা করা ঠিক যে নয় তার প্রমাণ অবশ্য বারবারই মিলেছে। তথাকথিত লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা এমন অনেক অজানা ইতিহাস প্রায়শই আমাদের চমকে দেয়। কিছু আগেই নেট মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এমনই একটি বিষয়। জানা গিয়েছে হিমালয়ের থেকেও প্রায় ৫০০ কোটি বছরের প্রাচীন পাহাড়ের সারির অস্তিত্ব রয়েছে আমাদের দেশেই। কলকাতা থেকে হিমালয়ের দূরত্ব যা, তার থেকেও অনেক কম দূরত্বেই রয়েছে এই পাহাড়। এবার সেই পাহাড়েই হদিশ মিলেছে মানুষের পায়ের ছাপের। তাও আবার লম্বায় নাকি প্রায় ১৪ ফুট সমান!
প্রত্নতাত্বিকদের ব্যাখা থেকে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রামের রাজমহল পাহাড়ের গায়ে পাওয়া যায় আদিম মানুষের পায়ের ছাপ। দীর্ঘদিন ধরে ওই ছাপ পরিণত হয়েছে জীবাশ্মে। অনুমান করা হয়েছে আজ থেকে প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে ওই প্রাচীন পাহাড়ে বসবাস করত মানব জাতির কেউ। যাদের বেশিরভাগের পায়ের পাতার দৈর্ঘ্য ছিল দশ ফুটের বেশি। পুরাতত্ত্ববিদ অনুপ কুমার বাজপেয়ী সম্প্রতি দাবি করেছেন, ঝাড়খণ্ডের রাজমহলের পাহাড় সারিতে বাস করত আদিম মানুষ। একে তো এই পাহাড়ের প্রাচীনত্ব হিমালয়ের থেকেও ৫০০ কোটি বছর বেশি, তার ওপর আবার এই বিশাল দৈর্ঘ্যের পায়ের ছাপের সন্ধান, সব মিলিয়ে ক্রমশ শিহরণ জাগাচ্ছে ঝাড়খণ্ডের রাজমহল।
আরও পড়ুন - সাইকেলের থেকেও আস্তে চলে একটা ট্রেন! অবাক করবে ভারতের সবচেয়ে ধীর গতির এই ট্রেন
সময়ের সঙ্গে আধুনিক মানুষের জীবনচর্চায় যেমন বদল এসেছে তেমনই বদল এসেছে চেহারার। একটা সময় ছিল যখন চার হাত পা দিয়ে পশুর মতো হাঁটা চলা করত আদিম মানুষ। তার ক্রমেই শুরু হয় বিবর্তনের ধারা। সেই ধারায় মানুষের হাত প্রথমে ছিল প্রায় হাঁটু পর্যন্ত প্রসারিত। দৈর্ঘ্যেও লম্বা ছিল পায়ের পাতা। পাহাড়ের গায়ে যে পায়ের ছাপের অস্বিত্ব পাওয়া গিয়েছে সেটিও সেই সময়কালের।
ঝাড়গ্রামের ঝনকপুর পঞ্চায়েতের বহমসিয়া এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে ঘাঘাজোর নদী। এই নদীর আশপাশের এলাকায় এই আদি মানবের পদচিহ্নের সন্ধান পেয়েছেন পুরাতত্ত্ববিদ অনুপ কুমার বাজপেয়ী। তার এই গবেষণাকে কেন্দ্র করে একটি বইও লিখেছেন তিনি। এই গবেষণার পরতে পরতে উঠে এসেছে প্রাচীন যুগের বিবরণ। আদিম গুহাবাসী মানুষ কীভাবে জঙ্গলে বসবাস করত তার বিবরণ রয়েছে তাতে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে এই অঞ্চলের ধ্বংস হয়, পরিবর্তন হয়। কিন্তু তার মধ্যে থেকে এত বছর পর নতুন করে ইতিহাস খুঁজে বের করা গিয়েছে বলেই দাবি অনুপ কুমার বাজপেয়ীর। পায়ের ছাপগুলি আজও এই পাহাড়ের গায়ে জীবাশ্ম হয়ে থেকে গিয়েছে বলেই জানিয়েছেন তিনি। প্রাচীন এমন নিদর্শনের খবর প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয় গিয়েছে নেটমাধ্যমে। মানুষের পায়ের ছাপ তাও কিনা এতো লম্বা, পর্যটকদের আকর্ষণ করছে এই জায়গাটি। তাছাড়া বর্তমান সময়ের অফবিট ভ্রমণের তালিকাতেও নয়া সংযোজন হতে পারে এই জায়গাটি। এখানে আদি মানবের পায়ের ছাপ ছাড়াও মাছ বা হরিণের খুরের জীবাশ্ম পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন পুরাতত্ত্ববিদ অনুপ কুমার বাজপেয়ী।
প্রসঙ্গত, আরও একটি বিষয় উল্লেখ করতে হয় এখানে। ২৬০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ঝাড়খণ্ডের রাজমহল পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাচীন জীবাশ্মের হদিশ এই প্রথম নয়, এর আগেও এখানে পাওয়া গিয়েছিল আরও অনেক কিছুই।১৯৩৫ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে বীরবল সাহানি নামে এক অধ্যাপক তার খোঁজ পান প্রাচীন জীবাশ্মের। আবারও একই জায়গায় এমন একটা ইতিহাসের খোঁজ স্বাভাবিকভাবেই নতুন করে আকর্ষণ বাড়িয়ে তুলেছে। তাই জুরাসিক যুগের সাক্ষাৎ হতে পারে এখানেই।
ছবি সৌজন্যে - আই.এ.এন.এস

Whatsapp
