৩৯২টি স্তম্ভ, ৪৪টি ফটক থেকে এআই নিরাপত্তা! যে ভাবে সেজে উঠেছে অযোধ্যার রামমন্দির
Ram Temple In Ayodhya: অযোধ্যার এই মন্দিরকে দেশের প্রধানতম তীর্থক্ষেত্রে হিসেবে তুলে ধরতে কোনও ত্রুটি রাখছে না মোদি সরকার। চিরাচরিত নগর স্টাইলে গড়া এই রামমন্দিরে থাকছে এলাহি ব্যবস্থা।
রামমন্দির গড়ার কাজ শেষ। চলতি বছরেই উদ্বোধন অযোধ্যা রামমন্দিরের। চারদিকে সাজো সাজো রব। ক্রমশ এগিয়ে আসছে উদ্বোধনের দিন। আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন। ওইদিনই প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে রামলালার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতেই হবে রামলালার প্রতিষ্ঠা। আগামী ২৪ জানুয়ারি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে রামমন্দির। রামজন্মভূমি অযোধ্যায় রামমন্দির গড়া নিয়ে কম উত্থান পতন দেখেনি দেশ। শেষপর্যন্ত সেই রামমন্দির হল। ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে তার উদ্বোধনও সেরে ফেলা হবে। ইতিমধ্যেই অযোধ্যায় উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে আস্ত একটি বিমানবন্দরের। রেলস্টেশনের সংস্কারের কাজও সারা। ইতিমধ্যেই সেই রেলস্টেশনের নামও পাল্টে ফেলা হয়েছে।
রামমন্দির তো আর যে কোনও মন্দির নয়। অযোধ্যার এই মন্দিরকে দেশের প্রধানতম তীর্থক্ষেত্রে হিসেবে তুলে ধরতে কোনও ত্রুটি রাখছে না মোদি সরকার। চিরাচরিত নগর স্টাইলে গড়া এই রামমন্দিরে থাকছে এলাহি ব্যবস্থা। একসঙ্গে ২৫ হাজার ভক্তকে ঠাঁই দেওয়ার জায়গা। সেই মন্দিরের নিরাপত্তার ভার কি আর যেন তেন নিরাপত্তারক্ষী সামলাতে পারে। তাই রামমন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। জানা গিয়েছে, অযোধ্যার জন্যই এআই নজরদারির ওই পাইলট প্রজেক্টটি লঞ্চ করা হয়েছে। আর কী কী থাকছে অযোধ্যা রামমন্দিরে? কী কী বিশেষত্ব এই মন্দিরের। আসুন জেনে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন: অযোধ্যার রামমন্দিরে ৬ কোটি বছরের পুরনো শালগ্রাম! ইতিহাস নাকি মিথ?
- যতদূর জানা যাচ্ছে, মন্দিরটি ঐতিহ্যবাহী নগর স্থাপত্য শৈলীতে তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষত মালওয়া, রাজপুতানা ও কলিঙ্গের আশপাশের অঞ্চলে দেখা যায় এই ধরনের শৈলীর মন্দির। অযোধ্যা রামমন্দিরের ক্ষেত্রেও সেই বিশেষ শৈলীটিই গ্রহণ করা হয়েছে।
- পূর্ব থেকে পশ্চিমে মন্দিরের দৈঘ্য প্রায় ৩৮০ ফুট। মন্দিরটির প্রস্থ প্রায় ২৫০ ফুট। এবং উচ্চতায় সেটি প্রায় ১৬১ ফুট লম্বা
- মন্দিরটি প্রায় তিন তলা সমান উঁচু। আর প্রতিটি তলার উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট মতো। মোট ৩৯২টি স্তম্ভ রয়েছে মন্দিরটিতে। রয়েছে ৪৪টি দরজাও।
- মন্দিরের গর্ভগৃহে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রামের শৈশবের চিত্র। প্রথম তলায় রয়েছে শ্রীরাম দরবার।
- রামমন্দিরের হলে রয়েছে মোট পাঁচটি মণ্ডপ। সেগুলি হল নৃত্যমণ্ডপ, রং মণ্ডপ, সভা মণ্ডপ, প্রার্থনা ও কীর্তনা মণ্ডপ।
- মন্দিরের চারদিকের স্তম্ভ ও দেওয়াল জুড়ে থাকছে দেব-দেবীর চিত্র।
- মন্দিরের প্রবেশদ্বারটির অবস্থান পূর্বদিকে। সিংহদ্বার হয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে হলে পেরোতে হবে মোট ৩২টি সিঁড়ি।
- প্রতিটি ভক্তের জন্য মন্দিরে রয়েছে বিশেষ সুবিধা। বিশেষভাবে সক্ষম ও প্রবীণ দর্শনার্থীদের মন্দিরে প্রবেশ ও ঘোরাঘুরির জন্য রয়েছে লিফট। থাকছে ব়্যাম্পের বন্দোবস্তও।
- মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে চার দেওয়ালের প্রাচীর। এর নাম পারকোটা। যার দৈর্ঘ্য ৭৩২ মিটার, চওড়ায় সেটি প্রায় ১৪ ফুট।
- শুধু রামমন্দিরই নয়। রামমন্দিরের ভিতরেও মন্দিরের চারটি কোণায় রয়েছে আরও চারটি মন্দির। সেই চারটি মন্দিরে পূজিত হবেন সূর্য, ভগবতী, গণেশ ও শিব। উত্তর দিকে থাকছে দেবী অন্নপূর্ণার মন্দির ও দক্ষিণে ভগবান হনুমান মন্দির।
- মন্দিরের কাছেই আছে ঐতিহাসিক সীতা কূপ। এটি কিন্তু নবনির্মীত নয়। মনে করা হয়, এটা প্রাচীন যুগের সৃষ্টি।
- শ্রীরাম জন্মভূমি মন্দির চত্বরে আরও বেশ কয়েকটি মন্দির তৈরির কথা রয়েছে। মহর্ষি বাল্মিকী, মহর্ষি বশিষ্ঠ, মহর্ষি বিশ্বামিত্র, মহর্ষি অগস্ত্য, নিশাদ রাজ, মাতা শবরী ও দেবী অহল্যার মন্দির গড়ার কথা রয়েছে।
- মন্দির চত্বরের দক্ষিণ-পশ্চিমে কুবের টিলায় শিবের মন্দিরটিও সংস্কারের কাজ সারা। সেখানে অতিরিক্ত হিসেবে গড়া গয়েছে একটি জটায়ুর মূর্তিও।
- আশ্চর্যের ব্যাপার, গোটা রামমন্দির তৈরিতে কোথাও লোহা ব্যবহার করা হয়নি।
- রামমন্দিরের ভিতের অংশটি দেখতে ঠিক পাহাড়ের মতোই। ১৪ মিটার রোলার-কমপ্যাক্টেড কংক্রিট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সেটি। দেখে মনে হবে একটি পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এই রামমন্দিরটি।
- রামমন্দিরের কোনও অংশ যাতে আর্দ্রতাজনীত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে গ্রানাইট দিয়ে ২১ ফুট উঁচু একটি স্ল্যাব তৈরি করা হয়েছে।
- বিরাট টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছে এই রামমন্দির। স্বাভাবিক ভাবেই এই মন্দির দর্শনে দেশ-বিদেশ থেকে আসবেন বহু ভক্তই। তাদের কথা ভেবে ২৫ হাজার ভক্তের থাকার জন্য পিলগ্রিমস ফেসিলিটি সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। পুণ্যার্থীরা প্রয়োজনে এখানে ওষুধ, চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন। থাকছে নিজস্ব লকারের ব্যবস্থাও।
- স্নান, হাত-মুখ ধোয়া, বেসিনের জন্য আলাদা ব্লক থাকছে মন্দির চত্বরে।
- রামমন্দিরের সর্বোত্রই ভারতের নিজস্ব সংস্কৃতি ও চিরাচরিত রীতির ছোঁয়া থাকছে মন্দিরের আনাচে কানাচে। পাশাপাশি, জোর দেওয়া হয়েছে পরিবেশ সচেতনতার উপরেও। ৭০ একর জমি আবার সবুজায়নের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই জমি থেকে জল সংরক্ষণও করা হবে বলে পরিকল্পনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: রাম মন্দির উদ্বোধন নিয়ে মোদির পাশে নেই বহু হিন্দুত্ববাদীই! কেন?
আগামী ২২ তারিখ উদ্বোধন উপলক্ষে ১ লক্ষেরও বেশি ভক্তসমাগম হওয়ার কথা। তেমনটাই জানাচ্ছে রামমন্দির কমিটি। সব মিলিয়ে তোড়জোর প্রায় শেষপর্যায়ে। সেদিন উপস্থিত থাকছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিরাই। অযোধ্যার রামমন্দির প্রতিষ্ঠার ফলাফল কি দেখা যাবে ২০২৪ লোকসভা ভোটে? সেই উত্তরটা অবশ্য মিলটে ইভিএম মেশিনেই।