কয়েকশো কোটি বছর পুরনো মহাবিশ্বের ছবি কীভাবে উঠে এল টেলিস্কোপে? বিস্ময় পৃথিবীজুড়ে

১২ জুলাই নাসা ওয়েবের প্রথম ছবিগুলির সম্পূর্ণ সিরিজ, ডেটা— যা এককথায় ‘স্পেকট্রা’ নামে পরিচিত, রিলিজ করতে চলেছে।

নাসার ফ্ল্যাগশিপ মিশন-খ্যাত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এক দূর মহাবিশ্বের ইনফ্রারেড ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছে। মানবজাতির ইতিহাসে এই ছবি ডিপেস্ট এবং শার্পেস্ট। একে ওয়েব টেলিস্কোপের প্রথম ফুল-কালার ডিপ ফিল্ড ছবি বলা হচ্ছে। ছবিটিতে ছায়াপথগুচ্ছের নানা খুঁটিনাটি ফুটে উঠেছে। এই অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্যর ছবি দেখে মুগ্ধ আন্তর্জাল।

একটি-দু'টি নয়, কয়েক হাজার ছায়াপথ দেখা যাচ্ছে ওয়েবের এই ছবিতে। সঙ্গে ইনফ্রারেডের খুচরো হাজার খুঁটিনাটি। তবে যে পরিমাণ মহাবিশ্ব এই ছবিতে ফুটে উঠেছে, তার পরিমাণ সমগ্র মহাবিশ্বের কাছে একমুঠো ধুলো মাত্র।

ডিপ ফিল্ড কাকে বলে? ওয়েবের নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরায় ডিপ ফিল্ড হলো বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ছবিকে একসঙ্গে নিরীক্ষণ করে সাজিয়ে যে ছবি পাওয়া সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে প্রায় সাড়ে বারো ঘণ্টা সময় লেগেছে এই গভীরতার ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্যে পৌঁছতে। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের গভীরতম ফিল্ডকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে ওয়েব। সে ছবি তুলতে সময় লেগেছিল প্রায় হপ্তাদুয়েক।

আরও পড়ুন: লাল রঙের বৃষ্টি ঘিরে আজও রহস্য, কুড়ি বছর আগে কী ঘটেছিল কেরলে?

এই ছায়াপথপুঞ্জের নাম এসএমএসিএস ০৭২৩। ৪.৬ বিলিয়ন বছর অর্থাৎ ৪৬০ কোটি বছর আগে এই রকম ছিল এই ছায়াপথপুঞ্জ। এই ছায়াপথপুঞ্জের সম্মিলিত ভর একটি মহাকর্ষক লেন্সের মতো কাজ করে। ফলে এর থেকে অনেক অনেক দূরে থাকা ছায়াপথকেও অনেক বড় করে দেখায়। ওয়েবের এনআইআর ক্যাম এই যাবতীয় ছায়াপথকেও শার্প ফোকাসে নিয়ে এসেছে। অনেক খুচরো স্ট্রাকচার সামনে উঠে এসেছে, যেগুলি এর আগে কেউ দেখেইনি কোনও দিন। সামনে এসেছে তারকাপুঞ্জও। গবেষকরা অচিরেই ছায়াপথগুলির ভর, বয়েস, ইতিহাস এবং গঠন সম্বন্ধে নানা নতুন তথ্য জানতে শুরু করবেন। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মিশনই হলো, মহাবিশ্বের প্রাচীনতম ছায়াপথগুলির ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্যগুলি খুঁজে বের করা। জেমস ওয়েবের ১০ বছরের পরিকল্পিত মিশনের এই সব সাড়ে ছ'মাস গিয়েছে।

এখন কথা হলো, কীভাবে অতীতের ছবি তোলা সম্ভব? আমরা সাধরণত বর্তমান দেখি না। সূর্য থেকে আলো আমাদের চোখে আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ১৮ সেকেন্ড। অর্থাৎ আমরা ৮ মিনিট ১৮ সেকেন্ড অতীতের সূর্যকে দেখি। তেমন এই ছায়াপথগুলি থেকে আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছতে ৪৬০ কোটি বছর সময় লেগেছে। আর তারও পিছনের যে বিন্দুগুলি, তাদের কোনও কোনওটির বয়েস ১৩৫০ কোটি বছর আগেকার, যা এই পর্যন্ত পৃথিবীতে যত আলো দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে সবথেকে পুরনো। মহাবিশ্বের জন্মলগ্ন যেখানে ১৩৮০ কোটি বছর আগে, সেখানে এই মহাবিশ্বের ছবি ইতিহাস অনুধাবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ছায়াপথের ছবি অনেক জায়গায় বেঁকে বেঁকে গিয়েছে। তার কারণ স্থান-কাল বক্রতা। আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুযায়ী ছবির কেন্দ্রে থাকা ছায়াপথগুচ্ছের মহাকর্ষের কারণে স্থান-কাল বক্রতা দেখা যাচ্ছে।

১১ জুলাই, ২০২২, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছবিটি উন্মোচন করেন। ১২ জুলাই নাসা ওয়েবের প্রথম ছবিগুলির সম্পূর্ণ সিরিজ, ডেটা— যা এককথায় ‘স্পেকট্রা’ নামে পরিচিত, রিলিজ করতে চলেছে। ওয়েবের ক্যামেরা আরও কতখানি ইতিহাসের দরজা খুলবে আমাদের সামনে? আরও কতখানি মহাবিশ্ব আবিষ্কৃত হবে? এই বিশাল মহাবিশ্বের সামনে একরত্তি গ্রহের ক্ষুদে ক্ষুদে মানুষেরা এই নিয়ে আজও কৌতূহল পোষণ করে।

 

More Articles