রাজীব হত্যার অভিযোগে জেল কুঠুরিতে কাটল ৩১টা বছর! কেমন ছিল নারকীয় দিনগুলো?

শুনানি শুরুর সময় থেকে একদিনের জন্যও নিজেকে কখনওই দোষী বলে স্বীকার করেননি এজি পেরারিভালান।

জামিন মিলেছিল গত মার্চে। কেটেছিল প্রায় ৩১ বছরের বন্দিদশা। কিন্তু পাকাপাকিভাবে মুক্তির আস্বাদ কিন্তু তখনও মেলেনি। অবশেষে, দীর্ঘ লড়াইয়ের পর মুক্তির স্বাদ পেতে চলেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হত্যা মামলার অন্যতম চক্রী এজি পেরারিভালান। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তি পেতে চলেছেন ভারতের ইতিহাসের অন্যতম হাই প্রোফাইল হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত। বুধবার একটি ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এল. নাগেশ্বর রাও-এর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ঘোষণা করে দেয়, পারিপার্শ্বিক সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তামিলনাড়ুর মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এই কারণেই সংবিধানের ১৪২ নম্বর ধারা অনুযায়ী অভিযুক্তকে মুক্তি দেওয়াই যথাযথ হবে বলে মনে করছে আদালত। পেরারিভালান-সহ এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত নলিনী শ্রীহরণ এবং বাকি ৫ জনের মুক্তির দাবি জানিয়ে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিল তামিলনাড়ুর সরকার। তাই বিশেষ অধিকার প্রয়োগ করে সেই আর্জি মঞ্জুর করল সুপ্রিম কোর্ট। মনে করা হচ্ছে, এই হাই প্রোফাইল মামলার বাকি ৬ জন সাজাপ্রাপ্তের মুক্তির পথ অনেকটাই প্রশস্ত হলো এই রায়ের মাধ্যমে।

পেরারিভালান এবং রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড
রাজীব গান্ধীর হত্যা মামলায় বিগত ১১ জুন, ১৯৯১ সালে পুলিশের জালে ধরা পড়েন এজি পেরারিভালান ওরফে আরিভু। যে-সময় তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করে, সেই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, এলটিটিই-র যে মানব বোমা হামলায় রীতিমতো ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর দেহ, তাতে ব্যবহৃত দু'টি ৯ ভোল্টের গোল্ডেন পাওয়ার ব্যাটারি কিনে এনেছিলেন তিনি। এই মামলার মূল চক্রী ছিলেন 'লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলাম' ওরফে এলটিটিই-র প্রধান সিভারাসন। জানা যায়, তাঁর সঙ্গে রীতিমতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল আরিভুর। তারপর থেকে দীর্ঘ তিন দশক জেলের কুঠুরিতেই কেটেছে তাঁর জীবন। ৩০ বছর ধরে তামিলনাড়ুর ভেল্লোর এবং পুঝাল সেন্ট্রাল জেল থেকে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার জন্য লড়াই করেছিলেন তিনি।

বর্তমানে ৫০ বছর বয়সি এজি পেরারিভালান আদতে তামিলনাড়ুর বিখ্যাত কবি কুইলদাসানের পুত্র। অনেক ছোট বয়স থেকেই রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি। সেই সময় তামিলনাড়ু এবং শ্রীলঙ্কার অশান্ত রাজনৈতিক পরিবেশে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছিল লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলাম। সেই সময়েই এলটিটিই-র আদর্শে দীক্ষিত হয়ে তাদের সঙ্গে কাজে নেমে পড়েন পেরারিভালান। সেই সময় কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে নেমে পড়েছিল এলটিটিই। ১৯৯১ সালের ২১ মে এক নির্বাচনী প্রচারে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুম্বুদুর এলাকায় এসেছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। সেখানে এক মহিলা মানববোমার মাধ্যমে রাজীব গান্ধীকে হত্যার পরিকল্পনা সম্পন্ন করে এলটিটিই।

আরও পড়ুন: কী আছে তাজমহলের বিতর্কিত ২২টি ঘরে?

ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ১১ জুন গ্রেফতার হন এজি পেরারিভালান। শুধুমাত্র ব্যাটারি কেনা নয়, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি নাকি এলটিটিই প্রধান সিভারাসনের জন্য একটি স্কুটার কেনার বন্দোবস্ত করেছিলেন। স্থানীয় একটি মোটরসাইকেলের দোকানে গিয়ে ভুল পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তাঁর জন্য একটি স্কুটার কেনার বন্দোবস্ত করেন এজি পেরারিভালান।

গ্রেফতার হওয়ার পরেই টেররিজম অ্যান্ড ডিসরাপটিভ অ্যাকটিভিটি আইন বা টাডা আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা সাজায় সিবিআই। তাঁর বয়ানে এজি পেরারিভালান বলেন, "আমি সিভারাসনের জন্য দু'টি গোল্ডেন পাওয়ার ৯ ভোল্ট ব্যাটারি কিনেছিলাম, এবং সেই দু'টি ব্যাটারি তাকে দিয়েছিলাম। ওই বোমাটি ফাটানোর জন্যই ওই দু'টি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছিল।" যদিও এই বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ২০১৩ সালে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন-এর প্রাক্তন অফিসার ভি থিয়াগারাজন একটি মিডিয়া বিবৃতিতে স্বীকার করেন, তিনি নিজেই এজি পেরারিভালানের বয়ানের শেষ অংশটি পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। নিউজমিনিট-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই প্রাক্তন সিবিআই অফিসার বলেন, তাঁর বয়ানে পেরারিভালান সব সময় বলেছিলেন, তিনি জানতেন না, ওই ব্যাটারি কী কাজের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

২০১৩ সালে এই তথ্যচিত্রে 'দ্য হিন্দু'-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর বক্তব্য, "আরিভু আমাকে সবসময় জানিয়েছে, সে কখনওই জানত না, ওই ব্যাটারি কী কাজের জন্য ব্যবহার করা হবে। কিন্তু কখনও কখনও আমাদের বয়ান বদল করতে হয়। আদালত যে বয়ান চাইছে, সেই বয়ান অনেক সময় আমাদের তৈরি করে নিতে হয়। শুধুমাত্র লিখিত হিসেবে কোনও বয়ান জমা দেওয়া যায় না। কঠোরভাবে বলতে গেলে, আইন আশা করে, আপনি একটি বিবৃতি একেবারে মৌখিকভাবে রেকর্ড করবেন। কিন্তু আমরা বাস্তবে তা কিন্তু করি না।"

কোন কোন ধারায় মামলা দায়ের হয়েছিল এজি পেরারিভালানের বিরুদ্ধে?
"... আমি সিভারাসনের জন্য দু'টি গোল্ডেন পাওয়ার ৯ ভোল্ট ব্যাটারি কিনেছিলাম, এবং সেই দু'টি ব্যাটারি তাকে দিয়েছিলাম। ওই বোমাটি ফাটানোর জন্যই ওই দু'টি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছিল।" এই একটি বয়ান মুহূর্তের মধ্যেই সবকিছু পাল্টে দেয় এজি পেরারিভালানের জন্য। এই বয়ানকেই তাঁর স্বীকারোক্তি হিসেবে ধরে নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এই মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে টাডা আইনে মামলা দায়ের করে সিবিআই। তাঁর এই বয়ানের ওপর ভিত্তি করে তাঁকে ১৯৯৮ সালে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় টাডা আদালত। ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট এই আদেশ বহাল রাখে। কিন্তু, এজি পেরারিভালানের ভাগ্য পরিবর্তন হয় ২০১৩ সালে ওই আইপিএস অফিসার থিয়াগারাজনের বয়ানের পর। ১৯৯৯ থেকে একাধিক শুনানিতে এজি পেরারিভালান সবসময় দাবি করেছিলেন, তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ।

২০১৩ সালে ওই বক্তব্যের পরেই সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকেও এই মামলায় হস্তক্ষেপ শুরু করা হয়। ১৯৯৮ সালে টাডা আদালতে শুনানির সময় ৯ ভোল্টের এই ব্যাটারির বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল মাত্র চারজনকে। এর মধ্যে তিনজন ছিলেন ফরেনসিক এক্সপার্ট এবং একজন ছিলেন চেন্নাইয়ের একটি স্টেশনারি দোকানের মালিক, যিনি ওই ব্যাটারি বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু, কখনওই ওই ব্যাটারির বিষয়টি নিয়ে সঠিক কোনও সাক্ষী পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালের একটি সাক্ষাৎকারে রাজীব গান্ধী হত্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জাস্টিস কে.টি থমাস বলেছিলেন, ওই সময় ওই চারজনের বয়ান দেশজুড়ে একটা বিতর্ক সৃষ্টি করে। এমনকী, আমার বেঞ্চের অন্যান্য বিচারপতিরাও এই বিষয়টি নিয়ে ধন্দে ছিলেন।"

সাক্ষাৎকারে বিচারপতি বলেন, "ভারতীয় আইনবিধির প্রমাণ সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী, কোনও বয়ান শুধুমাত্র একটি সমর্থনমূলক প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগানো সম্ভব হতে পারে। কোনওভাবেই একটি স্বীকারোক্তিকে প্রত্যক্ষ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু আমার বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা এই মতের সঙ্গে সহমত ছিলেন না। আমি তাঁদেরকে বাড়িতে ডাকি। তাঁদের সঙ্গে দীর্ঘ বিতর্ক হয়। কিন্তু তবুও বিতর্ক শেষে দেখা যায়, সিংহভাগ বিচারপতি এই মামলায় এজি পেরারিভালানের বিপরীতে রয়েছেন। তাই অবশেষে সরাসরি টাডা আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনাতে হয়। যদিও পরবর্তীতে আমার সিনিয়র বিচারপতিরা আমাকে জানিয়েছিলেন, এই মামলায় ভুল আইন ব্যবহার করা হয়েছে।"

জেল জীবন
৩১ বছরের জীবনের মধ্যে এজি পেরারিভালান ২৪টা বছর কাটিয়েছিলেন নির্জন কারাবাসে। তামিলনাড়ুর ভেল্লোর এবং পুঝাল সেন্ট্রাল জেলে এই সময়টা কাটিয়েছিলেন তিনি। প্রাথমিকভাবে ১৯৯৮ সালে ২৫ জন অভিযুক্তের সঙ্গেই টাডা আইনে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেলেও, ২০১৪ সালে থিয়াগারাজনের ওই স্বীকারোক্তির পর তাঁর মৃত্যুদণ্ডের সাজা যাবজ্জীবন কারাবাসে পরিবর্তন করে সুপ্রিম কোর্ট।

তবে কারাবাসে থাকাকালীন অবস্থায় এজি পেরারিভালান কখনওই নিজেকে শিক্ষার থেকে বঞ্চিত রাখেননি। বরং তিনি ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে নিজের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন জেলে থাকাকালীন অবস্থায়। তার পাশাপাশি, আটটি ডিপ্লোমা এবং সার্টিফিকেট কোর্সও তিনি সম্পন্ন করেন এই ৩১ বছরে।

আইনি লড়াই
শুনানি শুরুর সময় থেকে একদিনের জন্যও নিজেকে কখনওই দোষী বলে স্বীকার করেননি এজি পেরারিভালান। তিনি সব সময় জানিয়ে এসেছেন, তিনি জানতেন না ওই দু'টি ব্যাটারি কী কাজের জন্য ব্যবহার হবে। ১৯৯৮ সালে সন্ত্রাসদমন আদালত তাঁর আর্জি না শুনলেও ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে এই মামলায় হস্তক্ষেপ করা শুরু হয়। তামিলনাড়ু সরকারকে দেওয়া নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে জানানো হয়, তামিলনাড়ু সরকারের ক্ষমাভিক্ষার নিয়মনিধি মেনেই এজি পেরারিভালান-সহ ৭ জনের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে সুপ্রিম কোর্ট।

এই রায় ঘোষণার পর জয়ললিতা সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, তাঁদের সরকার এই সাত জনকে মুক্তি দিতে চায়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই সময় বেঁকে বসে। ঠিক তার পরের বছর তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের কাছে একটি ক্ষমাভিক্ষার আর্জি পেশ করেন এজি পেরারিভালান। সেখানে তিনি দাবি করেন, তাঁর দোষের জন্য বিগত ২৪ বছর ধরে নির্জন কারাবাসে জীবন কাটিয়েছেন তিনি। এবার যেন তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ক্ষমাভিক্ষার আর্জি দায়ের করেও কোনও লাভ হয় না। তারপরে এই আর্জির মামলা গিয়ে পৌঁছয় সরাসরি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। এজি পেরারিভালানের মা আর্পুথাম সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁর ছেলের হয়ে ক্ষমার আর্জি নিয়ে।

২০১৬ সালে তামিলনাড়ু সরকারের তরফ থেকে কেন্দ্রের কাছে এই ৭ জনের মুক্তি নিয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। ২ বছর পর ২০১৮ সালে কেন্দ্রের তরফ থেকে এই প্রস্তাব সম্পূর্ণরূপে খারিজ করে সুপ্রিম কোর্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়, এই সাত জন যদি মুক্ত হয়, তাহলে দেশের জন্য এই বিষয়টি ক্ষতিকারক হবে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ভারতের মুখ পুড়বে। যদিও এবারে সরাসরি কেন্দ্রের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্ট। উচ্চ আদালতের তরফে ঘোষণা করা হয়, যদি এই মামলায় তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল মনে করেন, তাহলে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

অন্যদিকে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল সেই সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। তামিলনাড়ু সরকারের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই এজি পেরারিভালান-সহ ৭ অভিযুক্তকে মুক্তির নির্দেশ দেওয়ার কথা ছিল রাজ্যপালের। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের চাপে পড়ে সেই সিদ্ধান্ত কোনওভাবেই গ্রহণ করতে পারছিলেন না তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল। ৩ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে সরাসরি চাপ দেওয়া হয় তামিলনাড়ুর রাজ্যপালকে। রীতিমতো আদেশ জানানো হয়, কেউ কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে নয়, তাই যদি রাজ্যপাল সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, তাহলে বাধ্য হয়ে সংবিধানের ১৪২ নম্বর ধারা প্রয়োগ করতে বাধ্য হবে উচ্চ আদালত।

উচ্চ আদালতের চাপে পড়ে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল সেই আজই পাঠিয়ে দেন ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে এই আর্জি এসে পৌঁছয়। কিন্তু, তিনিও কোনও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি বিগত এক বছরে। তাই বাধ্য হয়ে নিজেদের অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে বাধ্য হয় উচ্চ আদালত। যেহেতু সন্ত্রাসদমন আইনে অভিযুক্ত হয়ে ৩০ বছরের বেশি সময় জেল হেফাজতে কাটিয়ে ফেলেছেন এজি পেরারিভালান, তাই গত ৯ মার্চ তার জামিন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট।

এপ্রিল মাসে এই মামলায় সিদ্ধান্ত না গ্রহণ করার জন্য তামিলনাড়ুর রাজ্যপালকে তীব্র ভৎসর্না করে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানায়, রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে সংবিধানের ১৬১ নম্বর ধারা অনুযায়ী ওই ৭ বন্দির ক্ষমাভিক্ষার আবেদন মঞ্জুর করতে বাধ্য তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল। এর জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতির অপেক্ষায় প্রয়োজন হয় না। কিন্তু কেন তিনি এতটা সময় গ্রহণ করেছিলেন? কেন তিনি তামিলনাড়ুর ক্যাবিনেটের কথা না শুনে সরাসরি রাস্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এই ক্ষমাভিক্ষার আবেদন? সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এল. নাগেশ্বরা রাও-এর ডিভিশন বেঞ্চে অপমানিত হন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এর বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সত্তয়াল করে আসছিল কেন্দ্র। গত সপ্তাহের শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার ক্ষেত্রে ক্ষমাভিক্ষার আবেদন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন একমাত্র রাষ্ট্রপতি। যদিও আদালত পাল্টা সরকারকে ভর্ৎসনা করে বলে, যদি এমনটা হয়, তাহলে অতীতে রাজ্যপালরা যে-সমস্ত ক্ষমাভিক্ষার আবেদন মঞ্জুর করেছেন, সেগুলির কোনও বৈধতাই থাকবে না। ১১ মে শুনানিতে উচ্চ আদালতের বক্তব্য ছিল, ১৮ মে শুনানিতে রায় ঘোষণা করবে সুপ্রিম কোর্ট।

 আর তারপরে বাকিটা তো ইতিহাস!

More Articles