বন্ধুর স্ত্রীকে আরজি করে ক্যাফের টেন্ডার! সন্দীপ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর বাড়িতে যা খুঁজছে ইডি
RG Kar ED: গত সপ্তাহেই আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বেলেঘাটার বাড়ি-সহ সাতটি জায়গায় তল্লাশি চালান ইডির আধিকারিকেরা।
দুর্নীতি ছত্রে ছত্রে। আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার তদন্তে নেমে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে সিবিআই। সিবিআইয়ের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডিও আর্থিক দুর্নীতি মামলার তদন্তে সক্রিয় হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকেই সন্দীপ ঘোষের নানা আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে নেমে একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কলকাতার দুই জায়গায় তল্লাশি শুরু করেন ইডি আধিকারিকরা। ভোর সাড়ে ৬টা নাগাদ টালায় একটি বহুতল আবাসনে ইডির আধিকারিকেরা হানা দেন, শুরু করেন ব্যাপক তল্লাশি। এই আবাসনেই পাঁচতলায় থাকেন সন্দীপ ঘোষের ‘ঘনিষ্ঠ’ এক ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীর নাম চন্দন লৌহ। টালার পাশাপাশি তল্লাশি অভিযান চলে কালিন্দীর একটি ঠিকানাতেও।
ইডি সূত্রে খবর, কালিন্দীতে মেডিক্যাল সরঞ্জাম সরবরাহকারী সংস্থা অক্টেন মেডিক্যালের অফিসে হানা দিয়েছেন আধিকারিকরা। বৃহস্পতিবার ভোরে টালায় প্রথম চন্দন লৌহের ফ্ল্যাটে যান ইডির আধিকারিকেরা। অত ভোরবেলা ফ্ল্যাটেই ছিলেন চন্দন লৌহ, দরজাও খোলেন তিনিই। ইডির এই হানার আগে গত ২৫ অগস্ট চন্দন লৌহের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় সিবিআই।
আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অতিরিক্ত সুপার আখতার আলি যে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলেন, সেই তালিকেই নাম ছিল চন্দনের স্ত্রী ক্ষমা লৌহের। আখতার আলি অভিযোগ করেছিলেন, আরজি কর হাসপাতাল চত্বরে ক্যাফেটেরিয়া খোলার জন্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া দেওয়া হয়েছিল ক্ষমা লৌহকে। হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ চন্দন লৌহের স্ত্রীকে সত্যিই ক্যাফে খোলার টেন্ডার পাইয়ে দিয়ে বিশেষ আর্থিক লেনদেন সন্দীপ ঘটিয়েছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন- সেমিনার রুম নয়? কেন আরজি করের বন্ধ লিফটকেই রহস্যের চাবিকাঠি বলছে সিবিআই?
আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই এই প্রাচীন মেডিক্যাল কলেজের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। হাসপাতালের অন্দরের খবর, গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতি চলেছে এবং তা চলেছিল প্রাক্তন অধ্যক্ষের ছত্রছায়ায়। সিবিআই গত ১৭ অগাস্ট আরজি কর মামলার তদন্তভার হাতে নেয়। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতারও করা হয় সন্দীপ ঘোষকে। এবার এই মামলার তদন্তে লেগে পড়েছে ইডিও। গত সপ্তাহেই আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বেলেঘাটার বাড়ি-সহ সাতটি জায়গায় তল্লাশি চালান ইডির আধিকারিকেরা।
উল্লেখ্য, আরজি করের এই দুর্নীতি বিষয়ে তদন্তের জন্য রাজ্য সরকার একটি বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করেছিল। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য পুলিশের হাত থেকে মামলার তদন্তভার চলে যায় সিবিআইয়ের হাতে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে যে সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে তা শিউরে দেওয়ার মতো। শোনা গিয়েছে, মর্গ থেকে দেহ উধাও হয়ে যেত উপরমহলের নির্দেশে। লাশের সংখ্যা নিয়ে ব্যাপক গরমিল রয়েছে। কঙ্কাল, মানবদেহ, মানব অঙ্গ কিছুই বাদ নেই পাচারের তালিকা থেকে। এমনকী মর্গে মৃতদেহের সঙ্গে যৌনতা করে সেই ভিডিও বিক্রির অভিযোগও উঠেছে। অভিযোগ আছে, হাসপাতালের জৈব বর্জ্য নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন সন্দীপ ঘোষ! এ বিষয়ে প্রথম পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন হাসপাতালের প্রাক্তন অতিরিক্ত সুপার আখতার আলিই।