আবার কাজের চাপে যুবতীর মৃত্যু! কীভাবে এত বিষিয়ে গেল ভারতে চাকরির পরিবেশ?
Work Stress India: যারা প্রতি সপ্তাহে ৫৪ ঘণ্টার বেশি কাজ করে তাদের অতিরিক্ত কাজের কারণে মারা যাওয়ার প্রবণতা বেশি।
ভারতে কর্পোরেট কর্মক্ষেত্রে কি ক্রমেই বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে? কাজের চাপে প্রতিদিনই কি মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে মানুষ? কিছুদিন আগেই কাজের চাপে পুনেতে এক যুবতীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং ইন্ডিয়ার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন বছর ২৬-এর আনা সেবাস্তিয়ান পেরাইলের। বিখ্যাত সংস্থায় কাজের প্রবল চাপে যোগ দেওয়ার কয়েকমাসের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক জানিয়েছিল, এই মৃত্যুর তদন্ত হবে। এই মৃত্যুর কিছুকালের মধ্যেই লখনউয়ের এক মহিলার মৃত্যু! নিজেরই অফিসে নিজের চেয়ার থেকে পড়ে মারা গেলেন তিনি। এবারও নেপথ্যে কাজের চাপ।
ওই যুবতীর নাম সাদাফ ফাতিমা। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কে কর্মরত ছিলেন তিনি৷ লখনউয়ের গোমতীনগরে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের বিভূতি খণ্ড শাখায় অতিরিক্ত ডেপুটি ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে কাজ করতেন সাদাফ ফাতিমা। গত ২৪ সেপ্টেম্বর সাদাফ অফিসে কাজ করার সময় চেয়ার থেকে পড়ে যান। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু হঠাৎ একজন স্বাভাবিক মানুষ কর্তব্যরত অবস্থায় চেয়ার থেকে পড়ে গেলেনই কীভাবে? কীভাবেই বা চেয়ার থেকে পড়ে মৃত্যু ঘটল তাঁর?
আরও পড়ুন- বিখ্যাত সংস্থায় মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপে যুবতীর মৃত্যু! কেন তদন্তে নামল কেন্দ্র?
পুলিশ জানাচ্ছে, প্রাথমিক তদন্তে মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক বলেই ধারণা করা হচ্ছে। যদিও পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে সাদাফের সহকর্মীরা বলছেন, কাজের চাপে রক্তচাপের সমস্যায় দিন তিনেক আগেই শরীর খারাপ হয়ে গেছিল তাঁর। লখনউয়ের কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে চিকিৎসা চলে তাঁর। অসুস্থ হওয়াতে তিন দিনের ছুটিতে ছিলেন সাদাফ ফাতিমা। মঙ্গলবারই তিনি আবার কাজ শুরু করেন। আর সেদিনই মারা যান।
সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলছেন,"দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক চাপের প্রতীক" এই মৃত্যু। অখিলেশ লিখেছেন, “সমস্ত কোম্পানি এবং সরকারি দপ্তরকে এ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে। এটা দেশের মানবসম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি। এই ধরনের আকস্মিক মৃত্যু কাজের পরিবেশের দিকেই প্রশ্ন তোলে। কোনও দেশের অগ্রগতির আসল পরিমাপ পরিষেবা বা পণ্যের পরিসংখ্যান বৃদ্ধি নয় বরং একজন ব্যক্তি কতটা মানসিকভাবে মুক্ত, সুস্থ এবং সুখী।”
लखनऊ में काम के दबाव और तनाव के कारण एचडीएफ़सी की एक महिलाकर्मी की ऑफिस में ही, कुर्सी से गिरकर, मृत्यु का समाचार बेहद चिंतनीय है।
— Akhilesh Yadav (@yadavakhilesh) September 24, 2024
ऐसे समाचार देश में वर्तमान अर्थव्यवस्था के दबाव के प्रतीक हैं। इस संदर्भ में सभी कंपनियों और सरकारी विभागों तक को गंभीरता से सोचना होगा। ये देश के… pic.twitter.com/Xj49E01MSs
অখিলেশ এমন বিষাক্ত কাজের পরিবেশের জন্য অবশ্য বিজেপিরই নিন্দা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, দেশের অর্থনৈতিক নীতিগুলি ব্যর্থ। “বিজেপি সরকারের ব্যর্থ অর্থনৈতিক নীতির কারণে, সংস্থাগুলির ব্যবসা এতটাই কমে গেছে যে তাদের ব্যবসা বাঁচাতে তারা কম লোককে বহুগুণ বেশি কাজ করতে বাধ্য করে। এই ধরনের আকস্মিক মৃত্যুর জন্য বিজেপি সরকার ততটাই দায়ী যতটা বিজেপি নেতাদের সেইসব বক্তব্য যা জনসাধারণকে মানসিকভাবে হতাশ করে,” টুইট করেছেন অখিলেশ।
কেরলের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আনা সেবাস্তিয়ান পেরাইল এই বছরেরই মার্চ মাসে আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং-এ যোগ দিয়েছিলেন। প্রবল কাজের চাপ দেওয়া হয়েছিল সেখানে তাঁকে। খাওয়া নেই, ঘুম নেই, সারা রাত জেগে কাজ, অস্বাভাবিক পরিস্থিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন আনা। আনার মা জানিয়েছিলেন, কোম্পানির কেউ তাঁর মেয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও যোগ দেয়নি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কাজের চাপে আনার মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হওয়ার পরে, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সম্প্রতি পরামর্শ দিয়েছিলেন, কাজের চাপে থাকা যুবক-যুবতীদের 'স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট' বিষয়ে পড়াশোনার প্রয়োজন। অখিলেশ বলছেন, কাজের অবস্থার উন্নতির পরিবর্তে, দেশের যুবক-যুবতীদের মানসিক চাপ সহ্য করার শক্তি বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন একটি দেশের খোদ অর্থমন্ত্রী, এর চেয়ে হাস্যকর অথচ পীড়াদায়ক আর কীই বা হতে পারে। অখিলেশ বলছেন, "দেশের চাকুরিজীবীদের বিজেপি থেকে কোনও আশা নেই কারণ বিজেপি কেবল পুঁজিপতিদের টাকাতেই বেড়ে উঠেছে, যারা কর্মচারীদের শোষণ করে তাদের মুনাফা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে এবং সেই লাভের গুড় বিজেপিও খায়।"
আরও পড়ুন- হু হু করে বাড়ছে মানসিক রোগ, নতুন মহামারীর সামনে ভারত?
কিন্তু ভারতে কীভাবে এমন বিষাক্ত কর্মসংস্কৃতি তৈরি হলো? এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত ২০২১ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, যারা প্রতি সপ্তাহে ৫৪ ঘণ্টার বেশি কাজ করে তাদের অতিরিক্ত কাজের কারণে মারা যাওয়ার প্রবণতা বেশি। এতে বলা হয়েছে, ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ এবং স্ট্রোকে প্রতি বছর তিন-চতুর্থাংশ মানুষ কাজের সময় বাড়ানোর কারণে মারা যায়। দীর্ঘস্থায়ী চাপ এবং অস্বাস্থ্যকর আচরণের ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেলিওরের ঝুঁকি বাড়তে পারে কমবয়সিদের মধ্যে। আর ভারতের কাজের পরিবেশ অন্য সব দেশের থেকে বেশ আলাদা। এখানে অতিরিক্ত কাজ করাকে খুব গৌরবের বলে ভাবা হয়।
ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের ২০২৪ সালের তথ্য অনুসারে, ভারতে গড় কাজের সময় সপ্তাহে ৪৬ ঘণ্টা। সবচেয়ে দীর্ঘ গড় কাজের ঘণ্টার তালিকায় বিশ্বের প্রথম দিকের দেশগুলির তালিকাতেই আছে ভারত। কেবল ভুটান, লেবানন, লেসোথো, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং পাকিস্তান আছে ভারতেরও উপরে।